পাত্রপক্ষ
শংকর সাহা
সেদিন স্কুল থেকে তাড়াতাড়িই ফিরেছে তিতলি। সদ্য স্কুলে চাকরি পেয়েছে সে।পড়াশোনা, হাতের কাজ সবেতেই সে দক্ষ কিন্তু দোষ বলতে শুধু তার গায়েররংটি কালো!মাথাটি বড্ড ধরেছে বলে সে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। মা ঘরে ঢুকে ডাকাডাকি শুরু করলেন, মা তিতলি, ঘুমাচ্ছিস?মায়ের ডাকে চোখ খুলে গেল।-উউ? কী হয়েছে?ঘুমাচ্ছিস?ছবিটা একবার দেখ তো মা?-কিসের?পাত্র! খুবই ভালো ছেলে। পেশায় সরকারী চাকুরীজীবি মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই চিৎকার দিয়ে বিছানায় উঠে বসলো তিতলি। বললো, “মা! তুমি এই জন্য আমার ঘুম ভাঙ্গালে? বলছিতো বিয়ে করবো না আমি এখন”মা অভিমানী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “এভাবে বললে হবে মা ? বড় হয়েছিস! বিয়ে তো করতেই হবে রে মা।”-”করবো না করবো না করবো না!”কথা না বাড়িয়ে মা ছবিটা মেয়ের বালিশের নিচে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।নির্লিপ্ত চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে সে । চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে তার। মেয়েটার বিয়ের প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই। বিদ্বেষটা অন্য একজায়গায়.... তারপর বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে বারবার দেখতে থাকে সে। খুব ভালো করে দেখতে থাকে নিজেকে। কালো চেহারায় এবারো হয়তো পাত্রপক্ষ ঘুরে যাবে! বাবা-মাকে আবার কষ্ট পেতে হবে এমনই ভাবতে থাকে সে। তিতলির জন্য প্রস্তাব আসে। কিন্তু সৌভাগ্য আসে না।ছেলের ছবি হাতে নিয়ে মা বলেন, “এমন শিক্ষিত বড়লোক বাড়ির ঘরের বউ হতে পারলে তোর জীবনটি সার্থক হয়ে যাবে মা ..”তিতলি দরজার আড়াল থেকে সব শুনলো। বাবা চুপচুপ করে মাকে বলছেন, “ মেয়েটাকে একটু ভালো মেকআপ করে সাজিয়ে দিও। যাতে কালো রংটি দেখা না যায়”.তিতলি তাকালো মার দিকে।তিতলির ডাকে পেছনে ঘুরে তাকান মা।“মা, আমাকে কোন শাড়িতে মানাবে ? কমলা না হলুদ!দুটোতেই সুন্দর লাগে রে মা..মা আমায় একটু ভালো করে সাজিয়ে দেবে!...মেয়েকে বুকে টেনে নেন মা। । এখন মা -মেয়ে দুজনই কাঁদছে।। সৃষ্টিকর্তার কাছে এভাবেই তারা প্রতিবাদ জানায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct