আপনজন ডেস্ক: গল্পটি সাদামাটা ঘর থেকে উঠে আসা এক কিশোরের। মিশরের প্রাচীন শহর নাগরিক থেকে ১৫ ঘণ্টা ভ্রমণ করে ৫ বা ৬টি মাইক্রোবাস বদলে ৯০ মাইল পাড়ি দিয়ে রোদ–বৃষ্টি–ঝড় উপেক্ষা করে যে কিনা ফুটবল অনুশীলন করতে যেত কায়রোতে। ২০১৭–১৮ সালের পর থেকে এটি আর নিছক কোনো ঘটনা হয়ে থাকেনি। মিসরের অলি–গলিতে এই ঘটনাটি ধীরে ধীরে মিথ বা পুরাকাহিনির আকার নিতে শুরু করে। ভিন্ন ভিন্ন কথকের বর্ণনার সঙ্গে বদলে যেতে শুরু করে মাইক্রোবাসের সংখ্যা, ভ্রমণের সময় কিংবা দূরত্বের হিসাবনিকাশও। ঘটনার মাহাত্ম্য বাড়াতে সবাই গল্পের ডালপালা ছড়িয়ে দিতেন। সবার চেষ্টা ছিল এই ঘটনাকে যতটা সম্ভব অতিমানবীয় করে তোলা যায়! অবশ্য এটি তো আর সাধারণ কোনো মানুষের গল্প নয়। তাই গল্পটি কতটা সত্যি বা মিথ্যা, তা জানার আগ্রহও নেই কারও। বরং যে নামকে ঘিরে এই ঘটনা বা গল্পের বিস্তার, সেই নামটিই তাঁদের জন্য সব। পৃথিবীর সুন্দর সব বিশেষণ কিংবা রূপকথাকে তাঁরা পারলে জড়িয়ে দিতে চান সে নামের সঙ্গে। এ নাম যে তাঁদের জন্য সাহস এবং অনুপ্রেরণারও। সেই মানুষটিকে এখন আদর করে কেউ কেউ ডাকেন ‘ইজিপশিয়ান কিং’—যেন রূপকথার কোনো এক গল্পের রাজা। শুরুতে অবশ্য তাঁকে ‘ইজিপশিয়ান মেসি’ বলেও ডাকতেন অনেকে। তবে ‘মেসি’ নামের ছায়া থেকে বেরিয়ে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন, ‘দ্য ম্যান, দ্য মিথ, দ্য লিজেন্ড’। ফলে তাঁর জীবনের ঘটনা যে রূপকথার গল্প হয়ে উঠবে, তা তো বলাই বাহুল্য। ওহ, এত সব গল্পকথার ভিড়ে তাঁর আসল নামটিই তো বলা হয়নি! সেটি অবশ্য এতক্ষণে আন্দাজ করেই ফেলেছেন। সেই কিংবদন্তিটি যে মোহাম্মদ সালাহ—তা বোধহয় না বললেও চলত। প্রশ্ন হচ্ছে, সালাহকে নিয়ে এমন রূপকথার কী প্রয়োজন? মিথের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মিথবিষয়ক বিখ্যাত লেখক জোসেফ ক্যাম্পবেল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, জীবন কাটাতে চান কাটিয়ে দিন। জীবন সত্যি সুন্দর। আপনার পুরাকাহিনির কোনো প্রয়োজন নেই। একটা বিষয়কে প্রয়োজনীয় বলে প্রচার করা হয়েছে বলেই আপনাকে সে বিষয়ে উৎসাহী হতে হবে, তার কোনো মানে নেই। আমি মনে করি, একটা বিষয়ে আপনি কোনো না কোনোভাবে যদি জড়িয়ে পড়েন তবে উৎসাহ দেখাবেন।’ ঠিক একইভাবে ২০১৭–১৮ মৌসুম থেকে ফুটবল রোমান্টিকদের ভাবনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে শুরু করে সালাহ নামের ‘মিথ’। তাঁকে ঘিরে তৈরি হয় ব্যাপক উৎসাহ। সেই উৎসাহ কেমন, একটি তথ্যে বোঝা যেতে পারে। ২০১৯ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সালাহর কারণে লিভারপুল অঞ্চলে ‘ইসলামোফোবিয়া’ (ইসলাম ধর্মবালম্বীদের প্রতি বিদ্বেষ) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ‘হেট ক্রাইম’ (ঘৃণাজনিত অপরাধ) ১৮.৯ শতাংশ কমার কথা বলা হয়। লিভারপুলে নক্ষত্রের মর্যাদা পাওয়া সালাহ নিজ দেশ ও অঞ্চলের মানুষের জন্য হয়ে ওঠেন বিশাল এক অনুপ্রেরণার আধার। নাগরিক অঞ্চলের মানুষদের জন্য আধুনিক মিসরের রূপকথার গল্পের নায়কও তিনি। পাশাপাশি একই সময়ে ফুটবল দুনিয়া মজেছে সালাহর বাঁ পায়ের জাদুতেও। যাঁর পায়ে বল মানে অবিশ্বাস্য কিছুর সম্ভাবনা কিংবা জাদুকরের থলে থেকে বের করা কোনো চমক।যদিও সালাহর শুরুটা মোটেই এমন মসৃণ ছিল না। ২০১৭–১৮ মৌসুমে ইয়ুর্গেন ক্লপ যখন সালাহকে লিভারপুলে নিয়ে আসেন, অনেকের চোখ তখন কপালে উঠেছিল। কেউ কেউ বাজে সাইনিং বলে তাচ্ছিল্যও করেছিলেন। এসব সমালোচনা মোটেই অযৌক্তিক ছিল না। এর আগে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চেলসিতে ছিলেন সালাহ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct