আপনজন ডেস্ক: পবিত্র রমজান মাসেও চলমান হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতেও হামলা করা হচ্ছে। এতে করে গাজার স্বাস্থব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। মানবিক সংকটও তীব্রতর হচ্ছে এই ভূখণ্ডে।ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিযোগ করেছে এই অবস্থায় গাজায় অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বোরেল। তিনি অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে সহায়তার অপ্রতুল প্রবেশকে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন।যুদ্ধে জর্জরিত গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের প্রান্তে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য ২০০ টন খাদ্যদ্রব্যবাহী একটি জাহাজ ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দেশ সাইপ্রাস থেকে রওনা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরের দিকে সাইপ্রাসের লারনাকা বন্দর থেকে রওনা দেয় ‘ওপেন আর্মস’ নামের সেই ত্রাণবাহী জাহাজটি।তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ওই জাহাজটি স্থলপথে সাহায্য বিতরণের বিকল্প হতে পারবে না। এই অঞ্চলে সাহায্য সরবরাহের দ্রুততম ও সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো রাস্তা দিয়ে সহায়তা পাঠানো। তবে সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার মানে হচ্ছে- যে পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন, তার কেবল একটি ভগ্নাংশই সেখানে প্রবেশ করছে।
সেজন্য সড়ক পথে সহায়তা পাঠানোর পরিবর্তে সমুদ্র এবং আকাশ থেকে সহায়তা সরঞ্জাম নিচে ফেলার মতো বিকল্প বিভিন্ন পন্থার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, গাজার খাদ্য সংকটের জন্য তারা দায়ী নয় কারণ তারা দক্ষিণে দুটি ক্রসিং দিয়ে সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। তবে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, কার্যকর স্থলপথের অভাবের কারণে এই অঞ্চলে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।তিনি আরো বলেন, আমরা এখন এমন জনসংখ্যার মুখোমুখি হচ্ছি যারা নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। গাজায় মানবিক সহায়তার প্রয়োজন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সহায়তা সেখানে পাঠাতে যতটা সম্ভব কাজ করছে। আমাদের সমুদ্র কিংবাঁ আকাশপথে সাহায্য পাঠানোর পথ খুঁজতে হচ্ছে কারণ স্থলপথ দিয়ে আমরা পৌঁছাতে পারছি না।এদিকে রোববার (১০ মার্চ) চাঁদ রাতেও গাজার মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে স্থল ও আকাশপথে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে গাজা সিটিতে ১৩ জন ও খান ইউনিসে ১৭ জন নিহত হন। এরপরই বিবৃতি দেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি।যেখানে তিনি বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির যেসব শর্ত দিয়েছিল, হামাস সেসবের বিপক্ষে। তাই বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর যে সর্বাত্মক অভিযান চলছে, তা রমজানেও অব্যাহত থাকবে। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলেই আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু এবং নারী। ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই ইসরায়েলি আগ্রাসনে আহত হয়েছেন ৭২ হাজার ৬৫৪ জন বাসিন্দা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct