আপনজন ডেস্ক: ব্যাপারটা ম্যাজিকের মতোই সরল। জাদুকর যেমন মাথার টুপির নিচ থেকে খরগোশ বের করে আনেন—তেমনি বার্সেলোনাও প্রয়োজনের সময়ে এমন সব ‘লা মাসিয়া গ্র্যাজুয়েট’দের পেয়ে যায়, যাঁরা মাঠে নেমেই তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলেন। পাউ কুবারসিকেও গতকাল রাতে দেখা গেল তেমন রূপে। বার্সার ফুটবল খামার লা মাসিয়ায় একই ব্যাচ থেকে উঠে এসেছেন লামিন ইয়ামাল ও কুবারসি। দুজনের বন্ধুত্ব জমেছে মূল দলে সতীর্থ হওয়ার আগেই। অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে নাপোলির বিপক্ষে ইয়ামালের সঙ্গে মাঠে নেমেই রেকর্ড গড়েন কুবারসি। চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বের ম্যাচে একাদশে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়! ওহ, কুবারসির বয়সটাই বলা হয়নি—১৭ বছর ৫০ দিন। এই পথে কুবারসি ভেঙেছেন ডেভিড আলাবার গড়া ২০১০ সালে ১৭ বছর ২৫৮ দিন বয়সে মাঠে নামার রেকর্ড। শুধু কি তা–ই, বন্ধু ও সতীর্থ ইয়ামালকে নিয়েও রেকর্ড বইয়ের একটি পাতায় নাম লিখিয়েছেন কুবারসি। আর সেটি হয়েছে কোচ জাভি হার্নান্দেজের মাধ্যমে। মূল একাদশে কুবারসিকে অভিষেকের সুযোগ করে দিয়েছেন জাভি। আর এর মধ্য দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে নকআউট ম্যাচে মূল একাদশে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে দুজন খেলোয়াড়কে মাঠে নামানোর রেকর্ড গড়েছে বার্সা। লামিন ইয়ামালের বয়স ১৬ বছর ২৪৩ দিন। বার্সার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, এ বছরের ১২ মার্চ (গতকাল রাত)—তারিখটা কুবারসি ভুলতে পারবেন না আরও একটি কারণে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার সর্বকনিষ্ঠ ডিফেন্ডার হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ড যে এখন কুবারসির। তবে এসব রেকর্ড শুধুই সংখ্যার। প্রায় দুই মাস হয়ে গেল বার্সার মূল দলের হয়ে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন কুবারসি। প্রায় ৬ ফুট উচ্চতার শক্তপোক্ত শরীরের ঝানু সেন্টারব্যাক হিসেবে এরই মধ্যে নজর কেড়েছেন। গতকালও এর ব্যত্যয় হয়নি। চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিষেকেই একদম ম্যাচসেরা!
শেষ ষোলো ফিরতি লেগে বার্সার ৩-১ গোলের জয়ে নাপোলি স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমেনকে প্রায় ‘পকেটবন্দী’ করে রেখেছিলেন। পকেটবন্দী—কথাটা বলাবলি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর ফুটবলের পরিসংখ্যানবিষয়ক ‘এক্স’ অ্যাকাউন্ট ‘অপটা হোসে’ জানাচ্ছে ফিরতি লেগে তাঁর পারফরম্যান্স—অন্তত ২০০৩-০৪ মৌসুম থেকে হিসাব করলে কুবারসিই বার্সার প্রথম খেলোয়াড় যিনি, চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিষেকে ৫০+ সফল পাস দিয়েছেন, ট্যাকল জিতেছেন শতভাগ (৩টিই) ও ৫টির বেশি বল ‘ক্লিয়ার’ করেছেন। কুবারসি কতটা ভালো খেলেছেন, ম্যাচ শেষে সেটি বুঝিয়েছেন বার্সা অধিনায়ক সের্হিও রবার্তো, ‘কুবারসি অবিশ্বাস্য। সে সত্যিই মাঠের সেরা খেলোয়াড় ছিল। এমন বয়সে সে সব সময়ই আমাদের বিস্মিত করে যাচ্ছে...আশা করি সে যেন সারা জীবন বার্সাতেই খেলে। বিনয়ী, প্রতিভাবান এবং কঠোর পরিশ্রমী—এটাই তো লা মাসিয়ার (খেলোয়াড়দের) পরিচয়।’ প্রায় এক বছরের কম সময়ের মধ্যে কুবারসি আন্তর্জাতিক ও মহাদেশীয় মিলিয়ে তিনটি টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন। উয়েফা ইয়ুথ লিগে খেলেছেন ৩ ম্যাচ, এর মধ্যে এ মৌসুমে খেলেছেন ২ ম্যাচ। এ ছাড়া স্পেনের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরো এবং বিশ্বকাপেও খেলেছেন। গত বছর এপ্রিলে বার্সার মূল দলের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ পান কুবারসি। তিন মাস পর ক্লাবের সঙ্গে প্রথম পেশাদার চুক্তিও সেরে ফেলেন। এরপর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি কোপা দেল রেতে বার্সার মূল দলে অভিষেক। তার আগে বার্সা রিজার্ভ দলের খেলোয়াড় হিসেবে জাভির নজর কেড়েই মূল দলে উঠে এসেছিলেন। ২০১৮ সালে ১১ বছর বয়সে বার্সার বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেন কুবারসি। তাঁর জন্ম বার্সেলোনা শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের শহর এস্তানিওলে। মাত্র ২০০ অধিবাসীর সেই শহরে কাঠমিস্ত্রি পরিবারে বড় হয়েছেন কুবারসি। ‘ফুস্তেরিয়া কুবারসি’ নামে সেখানে তাদের কাঠের সরঞ্জামে বানানো পারিবারিক দোকানও আছে। কুবারসির বাবা-মা চতুর্থ প্রজন্ম হিসেবে এই পেশায় আছেন। স্থানীয় ক্লাব বেসকানো বাটে কুবারসির ফুটবল-দীক্ষার শুরু। চার বছর বয়সে জিরোনা তাকে দলে টেনে নেয়। তিন বছর পরই নজরে পড়েন বার্সার স্কাউট দলের। এখন কুবারসির সামনে অবারিত সুযোগ। কতটা এগোতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct