আপনজন ডেস্ক: তৃণমূল প্রার্থী তথা বর্তমান সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ্যে আনার পর বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টে যান। তিনি বলেন, ‘আমি বহুবার বলেছি, আমার ব্যক্তিগত কোনো পরিবার নেই, মা-মতি-মানুষ আমার পরিবার। ৩২ জন আছে যাদের সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। তার মতো আর কেউ নেই। সবাই তার ওপর বিরক্ত। শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মমতা বলেন, দয়া করে পরিবারকে বাইরে রাখুন। স্বপন ওরফে বাবুন প্রকাশ্যে তাঁর অভিযোগ এবং হাওড়া থেকে নির্দল প্রার্থী হওয়ার ‘সিদ্ধান্ত’ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তিনি। ‘ওকে ভাই বলে ডেকো না। আমি তার কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। প্রতিটি নির্বাচনের আগে তিনি আমাকে বিরক্ত করেছেন। তার অনেক কর্মকাণ্ড আমি অনুমোদন করি না। যদি আমার পরিবারের সবাই টিকিট চাইতে শুরু করে, তাহলে আমি পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি করব, কিন্তু আমি তা করব না। বাবুনকে ‘লোভী’ আখ্যা দিয়ে মমতা বলেন, নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়া থেকে আমাদের প্রার্থী এবং তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এখন বাজি আরও উঁচুতে। মমতার প্রকাশ্যে তিরস্কারের কিছুক্ষণের মধ্যেই বাবুন আবার নিউজ চ্যানেলে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বাবুন বরেন, আমি একটা ভুল করেছি। দিদি যা খুশি বলতে পারেন। এটা ব্যক্তিগত, আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। দলীয় মনোনয়নের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। দিদির আশীর্বাদ আমার কাছে সবকিছু। একদা মোহনবাগান তাঁবুতে হ্যাঙ্গারদের মধ্যে বাবুন মমতার ছোট ভাই হওয়ার সুবাদে বাংলার ক্রীড়াঙ্গনে ক্রমাগত উত্থান উপভোগ করেছিলেন।
বছরের পর বছর ধরে, বাবুন বাংলার ক্রীড়া অঙ্গনে একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি হন এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী চন্দন রায়চৌধুরীকে অল্প ব্যবধানে পরাজিত করেন, যিনি বিওএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী ছিলেন, তিনিও পরিবারের সদস্য। চার বছর পর বাবুন তার বড় ভাই অজিতকে পরাজিত করে বিওএর সভাপতি হন। তিনি মোহনবাগান ক্লাবের ফুটবল সম্পাদক, হকি ও বক্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, কলকাতার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান হওয়া ছাড়াও। তৃণমূলকে ঘিরে বিভিন্ন খেলোয়াড়দের সমাবেশ করাতে এবং প্রসূন নিজে, লক্ষ্মীরতন শুক্লা এবং মনোজ তিওয়ারির মতো কয়েকজনকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বুধবার বাবুন প্রসূনের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ প্রকাশ্যে আনার সময় ভোটের রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার বিষয়টি গোপন করেননি। তিনি বলেন, ‘আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল ২০১৯, ২০২১ সালে টিকিট পাব। এবারও একটা সম্ভাবনা ছিল (টিকিট পাওয়ার)। আমি অখুশি। তিনি বলেন, ‘দিদি যতদিন বেঁচে আছেন, আমি অন্য কোনও দলে যোগ দিতে পারব না। আমার প্রসূনের প্রতি অ্যালার্জি আছে। হাওড়া থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বাবুন বলেন, হাওড়ার জন্য তিনি সঠিক পছন্দ নন। ২০১৩ সালে মমতা যখন হাওড়া লোকসভা উপনির্বাচনে প্রসূনকে প্রার্থী করেছিলেন, তখন বাবুন সক্রিয়ভাবে প্রচার করেছিলেন। ২০১৮ সালে মোহনবাগান ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রসূন ও বাবুনের মধ্যে হাতাহাতি হয়।২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে মমতা রাজ্যসভার বিদায়ী সাংসদ আবির রঞ্জন বিশ্বাসকে ফের মনোনয়ন না দেওয়ায় হাওড়া নিয়ে বাবুনের প্রত্যাশা আরও বেড়ে যায়। বুধবারও প্রসূনের প্রতি নিজের ক্ষোভ গোপন করেননি বাবুন।তিনি বলেন, ওর (প্রসূন) প্রতি আমার অ্যালার্জি আছে। মোহনবাগান এজিএমে ও আমার সঙ্গে কী দুর্ব্যবহার করেছিল, তা আমি ভুলিনি। তিনি এমপি হওয়ার যোগ্য কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। যাঁরা পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষা পাশ করতে পারবেন না, তাঁদের হাতে গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct