নিজস্ব প্রতিবেদক, ভাঙড়, আপনজন: সন্দেশখালির পর এবার ভাঙড়। আদিবাসীদের বিঘার পর বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে গড়ে উঠছে অবৈধ নির্মাণ। তাও আবার জলাজমি (ওয়েট ল্যান্ড) ভরাট করে বিশাল আকারের অবৈধ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা এবং স্থানীয় জমি হারারা। বিরোধীদের দাবি তাড়দহ কাপাসাইট মৌজা রামসার সাইটের তালিকাভুক্ত। তাই সেখানে যে কোনও ধরনের নির্মাণ বেআইনি বলেই দাবি তাদের।
অভিযোগ, ভাঙড় ১ নাম্বার ব্লকের তাড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মাখালতলা গ্রাম। যে গ্রামে কয়েকশো আদিবাসী পরিবারের বসবাস। কলকাতা লেদার কম্পলেক্স তথা চর্মনগরীর ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই আদিবাসী গ্রামের বিঘার পর বিঘা জলা জমি যা আদিবাসীরা বাম আমলে পাট্টা পেয়ে চাষাবাদ করছিলেন সেই জমি এলাকার কিছু জমি মাফিয়া দখল করে নেওয়ার পাশাপাশি সুবিশাল পাঁচিল গড়ে তুলছেন।একটি বা দুটি পাঁচিল নয় প্রায় তিরিশ চল্লিশ বিঘা জমির উপরে আলাদা আলাদা ভাবে প্লটিং করে তাতে একাধিক সুবিশাল পাঁচিল গড়ে তোলা হচ্ছে। আর এই অবৈধ নির্মাণ থেকে জলা জমি (ওয়েট ল্যান্ড) দখলের যে অভিযোগ উঠছে শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, এলাকার জমি মাফিয়ারা আদিবাসীদের থেকে যে জমি জোরপূর্বক কেড়ে নিচ্ছেন বা দখল করছেন সে বিষয়ে এলাকার তৃণমূল নেতা রাকেশ রায় চৌধুরী সহ জমির দালালদের বিরুদ্ধে সরব হয়ে কলকাতা লেদার কম্পলেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন আদিবাসীরা। এ বিষয়ে রাম সর্দার বলে এক আদিবাসী জানান, আড়াই বিঘা জমি ছিলো সেখানে চাষাবাদ করে দিন চলত ওরা সব জমি জোরকরে দখল করে নিয়েছে।থানায় অভিযোগ দায়ের করেও কিছু হয়নি। মাত্র চার লক্ষ্য টাকা দিয়েছে আর সব জমি নিয়ে নিয়েছে। এ কথা বলতে বলতে চোখে জল চলে আসে রাম সর্দারের। তিনি আরো জানান, কোথাও কিছু বলে কিছু হচ্ছে না। দেবলা সর্দার নামের মাখালতলার এক আদিবাসী জানান, আমার এক বিঘা জমি ছিলো ওরা ডেকে নিয়ে গিয়ে দশ আঙ্গুলের টিপ সই দিয়ে নিয়েছে জোর করে আর শেষে ২ লক্ষ্য ৮০ হাজার টাকা দিয়েছে। সব জোর করে নিয়ে নিচ্ছে ওরা।তিনি আর জানান, আদিবাসীদের থেকে জোর করে টিপ সই দিয়ে নিচ্ছে আর রাকেশ টাকা মারছে। মূলত স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা আইএনটিটিইউসির ভাঙড় ১ ব্লকের সভাপতি রাকেশ রায় চৌধুরির বিরুদ্ধে অভিযোগ আদিবাসীদের। স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত মন্ডল জানান, আদিবাসীরা কলকাতা লেদার কম্পলেক্স থানায় তাদের জমি জোরকরে দখল করে নেওয়া হচ্ছে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেছিল তার পর তাদের উপরে চরম অত্যাচার হয়। তারা কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন,ভয়ে আছেন আর এই সুযোগে এলাকায় জমি দখল করে পাঁচিল গড়ে উঠছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই তৃণমূল নেতা রাকেশ রায় চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ফোন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
এ বিষয়ে সিপিএম নেতা তুষার ঘোষ বলেন, আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর করা যায় না। তার উপর পূর্ব কলকাতার জলাভূমি তথা ওয়েট ল্যান্ড এর উপর কোন নির্মাণ কার্জ করা যায় না। সেখানে জোরপূর্বক জমি দখল করে প্রোমোটাররা এই কাজ করছেন।পুলিশ ঠুটো জগন্নাথ হয়ে আছে। তাড়দহ এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমি এই ভাবে জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে অবৈধ নির্মাণ গড়ে উঠছে। সন্দেশখালির মতন মা বোনদের এখানেও গর্জে উঠতে হবে।তিনি আরো জানান এর পিছনে এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা রাকেশ রায় চৌধুরী সহ প্রশাসনের একটা অংশ জড়িত আছে। এর পাশাপাশি বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। আদিবাসীদের উপরে এই অত্যাচার আমরা মানব না আমরা আন্দোলন করব।
পূ্র্ব কলকাতা জলাভূমিতে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ নির্মাণ নিয়ে অতীতে একাধিক বার সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমী থেকে বিরোধিরা। তার পরেও কি ভাবে বিঘার পর বিঘা জলা ভূমিতে অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে? এক পরিবেশবিদ্ বলেন, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি আসলে শহরের বর্জ্য জল নিকাশির ফুসফুস। সারা কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার জল ওই পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে এসে পড়ে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবে পরিশোধিত হয়।
সূত্রের খবর, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি দখলের অভিযোগ সংক্রান্ত প্রায় ৩৫০টি অভিযোগ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন থানায় দায়ের হয়েছে। তারা জানায়, একাধিক বেআইনি নির্মাণ কার্য তারা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছেন তার পরেও অবৈধ কাজ হয়েই চলেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct