এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: রবিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের জনগর্জন সভায় তৃণমূল সভানেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস এখানে একা লড়বে। দেশ কোন পথে চলবে তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক করবে। প্রসঙ্গত, বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম শরিক দল হল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেস ও অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় রাজ্যে তৃণমূল একাই লড়বে বলে ঘোষণা করেছেন দলীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিগেডে অনেক সমাবেশ দেখেছে কলকাতা। রাজনৈতিক ব্রিগেড তো বটেই গীতাপাঠের ব্রিগেডও দেখেছে। দেশের প্রায় সব প্রধানমন্ত্রীই সভা করেছেন এই ময়দানে। কিন্তু এমন চেহারার মঞ্চ অতীতে দেখা যায়নি। আবার প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পরেই সেই মঞ্চে তৈরি ব়্যাম্পে টিকিট প্রাপকদের ‘ব়্যাম্প ওয়াক’ও দেখেনি বাংলা তথা গোটা দেশ। রবিবার এক অন্য ব্রিগেড দেখাল তৃণমূল। অতীতে তৃণমূলও এ ভাবে নির্বাচন ঘোষণার আগে একসঙ্গে সব আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। তাই অনেক কিছুই নতুন দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও স্পষ্ট করে বললে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কারণ, এই সভা আয়োজনের প্রধান দায়িত্বেই ছিলেন তিনি। তাই তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, আমার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর ৪২টি আসনে ৪২ জন প্রার্থীর সঙ্গে ব়্যাম্প ধরে হাঁটব। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নাম পাঠ করতে বলেন দলের সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার ৪২ জন তৃণমূল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। তৃণমূল ২৬ জন নতুন প্রার্থী দিয়েছেন এবং তালিকার ১২ জন রাজ্যের মন্ত্রী-সহ বিধানসভার সদস্য।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলায় সর্বত্র তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করুন। ২০১৪ সালে আপনারা ৩৪ জনকে জিতিয়ে এমপি করে দিল্লিতে পাঠিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদী হয়ত প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু গায়ের জোরে গাজোয়ারি করে বাংলার দশ পয়সাও আটকে রাখতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আপনারা ১৮ জন এমপি বিজেপিকে উপহার দিয়েছিলেন, এর পরদিন থেকে বাংলার মানুষের জল, কল, রাস্তা, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পসহ সব টাকা বন্ধ! সুতরাং, এটা প্রতিষ্ঠিত যে বিজেপি জিতলে আপনি আপনার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। তৃণমূল জিতলে আপনার অধিকার আপনি পাবেন। তাই অধিকারের পক্ষে আগামীদিনের ভোট। এটা নির্বাচিত করার ভোট নয়। এটা প্রতিবাদের ভোট, প্রতিশোধের ভোট, প্রতিরোধের ভোট। বিজেপিকে উৎখাত করে বাংলা ছাড়া করার ভোট। বাংলা বিরোধীদের ঝেটিয়ে বিদায় করার ভোট। আজকের ব্রিগেড সমাবেশে বাংলার মানুষ তা প্রমাণ করে দিয়েছে।’ নুসরত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী বাদ পড়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা থেকে। প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে বহরমপুর আসনে প্রার্থী করে চমক দিয়েছেন। অন্য তিন অভিনেতা সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া ও রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে প্রার্থীদের তালিকায়। মিমি লোকসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না। আর বসিরহাটের তৃণমূল নেতৃত্ব নুসরতের উপর অসন্তুষ্ট ছিল, বিশেষত তার জীবন পছন্দ নিয়ে। তাই তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সাংসদদের মধ্যে বাদ পড়েছেন আরামবাগের অপরূপা পোদ্দার ওরফে আফরিন আলি, মথুরাপুরের চৌধুরী মোহন জাটুয়াও। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে আরামবাগ আসনটি এক হাজারের কিছু কম ভোটে ধরে রাখতে পেরেছিল তৃণমূল। সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়ের মতো তৃণমূল সাংসদদের ধরে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, অর্জুন সিং, যিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির টিকিটে ব্যারাকপুর আসন থেকে জিতেছিলেন এবং পরে আবার তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন, তাকে বাদ দিয়ে অভিষেকের দলের সদস্য রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে প্রার্থী করা হয়েছিল। অভিনেতা দেব ঘাটাল থেকে তৃতীয়বারের জন্য প্রার্থী হবেন। মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর থেকে পুনরায় মনোনীত করা হয়েছে। বনগাঁ, রায়গঞ্জ এবং রানাঘাট থেকে বিজেপির তিন দলবদলকারী বিশ্বজিৎ দাস, কৃষ্ণা কল্যাণী এবং মুকুটমণি অধিকারীকে (যারা মাত্র দু’দিন আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন) প্রার্থী করা হয়েছে। বিষ্ণুপুরে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে প্রার্থী করেছেন মমতা। এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, আমাদের কিছু লোককে বাদ দিতে হয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের সময় বা যে কোনও সাংগঠনিক ভূমিকায় আমরা তাদের জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct