মোঃ সাহিদুল ইসলাম, আপনজন: বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের সর্ববৃহৎ সংবিধানের রূপদানকারী ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর বলেছেন “ নারীরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা দিয়ে আমি একটি সম্প্রদায়ের অগ্রগতি পরিমাপ করি “ অর্থাৎ একটা সমাজের স্বাস্থ্য পরিমাপ করা যায় সেই সমাজের নারীর স্বাস্থ্য কতটা প্রগতি হয়েছে। একজন মহিলা যাঁর মাধ্যমে এই দুনিয়ার বংশবিস্তারের যে অহম ভূমিকা পালন করে সে নিয়ে সংশয়ের কোনো স্থান নেই। স্পষ্ট করে বললে, মহিলারাই জাতির জননী, এই দুনিয়ার জননী। জাতির জনক গান্ধীজি বলেছেন, মহিলারা হচ্ছে আত্ম-ত্যাগের প্রতীক। প্রাকৃতিক নিয়মে জৈবিক-গঠন ক্রিয়ায়, একজন মেয়ে যখন বয়স বারো পেরিয়ে যায়, তখন তাঁর মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয়। এই ঋতুস্রাব ভারতীয় প্রেক্ষাপটে মোটামুটি ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে চলতে থাকে। যদি বলি মাসিক ‘রক্ত-ক্ষরণ’ একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া সেটা হয়তো ভুল নয় , কিন্তু এর যে প্রতিক্রিয়া দুই ভাবে দেখা যেতে পারে : শারীরিকভাবে, তীব্র-যন্ত্রনা, দুর্বলতা, অনিয়মিতা, রক্তাল্পতা, মেজাজি-রুগ্নতা ইত্যাদি, এবং সামাজিকভাবে, বিদ্রুপতা, আত্ম-সম্মান আঘাত, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভোগ-বিলাসী নজর। এছাড়াও মাসিক ঋতুস্রাব-ঘটিত মহিলাকে ধর্মের ও সমাজের দোহাই দিয়ে বিভিন্নভাবে দূরে সরে রাখা সেটাও কিন্তু তাঁদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিচ্ছবি ভেসে আসে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ঋতুস্রাব অবস্থায়, একজন মহিলা ধর্মীয় কর্ম-কান্ডে থেকে বিরত রাখে, রান্নার ঘর থেকে দূরে রাখে, এমনকি তাদের আরাম-বিশ্রামের স্থান পর্যন্ত আলাদা করতে দেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর জন্যে দায়ী কে ? করাই বা মহিলাদের প্রতি এরকম সামাজিক নিয়ম কানুন বানিয়ে ঘরের মধ্যে দম ঘুটিয়ে দিচ্ছে ?
মাসিক ঋতুস্রাবের যন্ত্রনা ও মাসিক স্থায়ী ছুটির বন্দোবস্ত
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের সর্ববৃহৎ সংবিধানের রূপদানকারী ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর বলেছেন “ নারীরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা দিয়ে আমি একটি সম্প্রদায়ের অগ্রগতি পরিমাপ করি “ অর্থাৎ একটা সমাজের স্বাস্থ্য পরিমাপ করা যায় সেই সমাজের নারীর স্বাস্থ্য কতটা প্রগতি হয়েছে। একজন মহিলা যাঁর মাধ্যমে এই দুনিয়ার বংশবিস্তারের যে অহম ভূমিকা পালন করে সে নিয়ে সংশয়ের কোনো স্থান নেই। স্পষ্ট করে বললে, মহিলারাই জাতির জননী, এই দুনিয়ার জননী। জাতির জনক গান্ধীজি বলেছেন, মহিলারা হচ্ছে আত্ম-ত্যাগের প্রতীক। প্রাকৃতিক নিয়মে জৈবিক-গঠন ক্রিয়ায়, একজন মেয়ে যখন বয়স বারো পেরিয়ে যায়, তখন তাঁর মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয়। এই ঋতুস্রাব ভারতীয় প্রেক্ষাপটে মোটামুটি ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে চলতে থাকে। যদি বলি মাসিক ‘রক্ত-ক্ষরণ’ একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া সেটা হয়তো ভুল নয় , কিন্তু এর যে প্রতিক্রিয়া দুই ভাবে দেখা যেতে পারে : শারীরিকভাবে, তীব্র-যন্ত্রনা, দুর্বলতা, অনিয়মিতা, রক্তাল্পতা, মেজাজি-রুগ্নতা ইত্যাদি, এবং সামাজিকভাবে, বিদ্রুপতা, আত্ম-সম্মান আঘাত, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভোগ-বিলাসী নজর। এছাড়াও মাসিক ঋতুস্রাব-ঘটিত মহিলাকে ধর্মের ও সমাজের দোহাই দিয়ে বিভিন্নভাবে দূরে সরে রাখা সেটাও কিন্তু তাঁদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিচ্ছবি ভেসে আসে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ঋতুস্রাব অবস্থায়, একজন মহিলা ধর্মীয় কর্ম-কান্ডে থেকে বিরত রাখে, রান্নার ঘর থেকে দূরে রাখে, এমনকি তাদের আরাম-বিশ্রামের স্থান পর্যন্ত আলাদা করতে দেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর জন্যে দায়ী কে ? করাই বা মহিলাদের প্রতি এরকম সামাজিক নিয়ম কানুন বানিয়ে ঘরের মধ্যে দম ঘুটিয়ে দিচ্ছে ?সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, মহিলাদের ঋতুস্রাব জনিত রোগ ও যন্ত্রনা বেড়ে চলেছে, যেমন সাদা-স্রাব, জরায়ুতে টিউমার, পলি-সিস্ট, অনিয়মিত-স্রাব সহ আরো অনেক। তীব্র যন্ত্রনা এড়াতে বিভিন্ন পেনকিল্লার ঔষধ যেমন প্যারাসিটামল, মেফতাল, ইত্যাদি মুঠো -মুঠো খেতে বাধ্য হচ্ছে। ওইসব ওষধের যে পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে সেটা কিন্তু অজানা নয়। কিন্তু পরিস্থিতির তাগিদে নিতে বাধ্য। তথাকথিত উন্নত সমাজ ব্যবস্থ্যা যে দায়ী নয় , সেটা বলা একেবারেই যায়না। খাদ্য-অভ্যাস থেকে শুরু করে ঘুমানোর সময় পর্যন্ত বিভিন্নভাবে দৈনন্দিন জীবন পরিবর্তন হয়েছে। যাইহোক। অর্থনৈতিক উন্নতির পরিমাপে মহিলারা আজ বেশ ফলপ্রসূ স্থান পেয়েছে। কর্ম-বাজার ও শ্রম বাজারে মহিলাদের উপস্থিতি খুব প্রশংসনীয় যদিও বেশ কিছু বছর থেকে শ্রম বাজারে তাঁদের স্থান ক্রমশ কমছে। কিন্তু মানব-উন্নয়ন ও মানব কল্যাণ পরিমাপ কাঠিতে তাদের স্থান কোথায় ? সম্প্রতি, বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ মৈত্রীস ঘোটক একটা প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন, ভারতে কর্মসংস্থান বাড়লেও গুণগতমান অনেক কমে গেছে এবং মহিলাদের বেশি।যখন আর্থিক উন্নতিতে মহিলার অবদান নিয়ে আলোচনা করা হয়,তখন মহিলারা আজ শুধু রান্না ঘরেই শুধু কাজ করে না, তাঁরা বিভিন্ন কর্ম-শালায়, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়েও সমাজের ও দেশের আর্থিক উন্নতির একটা খুঁটি হিসেবে চিহ্নিত। মহিলারা হোক সেটা ফর্মাল সেক্টর বা ইনফরমাল সেক্টর, হোক সেটা অর্গানাইজ বা অনর্গানাইজ সেক্টর, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ইঁটভাটা, রাজমিস্ত্রি ও কৃষিকাজের মুজদুরিতে, বিশ্বকবির ভাষায় “ওরা কাজ করে চলেছে অক্লান্তভাবে, আত্ম-ত্যাগের মাধ্যমে , শারীরিক ও মানষিক যন্ত্রনা হার মানিয়ে। সংক্ষিপ্ত আলোচনার ভিত্তিতে, এটা খুব স্পষ্ট যে তারা কায়িক ও মানষিক যন্ত্রনাকে হার মানিয়ে অক্লান্তভাবে দিবারাত্রি পরিশ্রম করে চলেছে। এই পরিশ্রমের প্রতিদান কি তাঁরা পাচ্ছে হোক সেটা ঘরের মধ্যে বা বাইরে ? এমতবস্থায়, এটা বলা যেতে পারে, সরকার অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ সরকার নারী-উন্নয়নের তালিকায় তাঁদের সম্মানার্থে ঋতুকালীন অবস্থায়, রাজ্যে আইন প্রণয়ন করে, মাসিক একদিন ছুটি ঘোষনার ব্যবস্থা করতে করতে পারে। সরকার এই পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের বাংলা বিশ্বের সামনে আরেকবার বন্দিত হতে পারে।
(লেখক গবেষক, ইনস্টিটিউট অফ রুরাল ম্যানেজমেন্ট আনন্দ, গুজরাট)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct