এম মেহেদী সানি, খলতপুর, আপনজন: হাওড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম খলতপুরের আশির দশকের প্রথম দিকে গুটি গুটি পায়ে শুরু হয়েছিল সংখ্যালঘু শিক্ষার বিকাশে এক অনন্য প্রতিষ্ঠান আল আমীন মিশনের। এম নুরুল ইসলামের হাত ধরে আল আমীন মিশন আজ মহীরুহে পরিণত। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেধাবী ও দরিদ্র মুসলিম পড়ুয়াদের একত্রিত করে তাদের মেধার বিকাশ ঘটানোর যে যাত্রা শুরু করেছিলেন এম নুরুল ইসলাম সেই প্রয়াস এখনও অব্যাহত। প্রতি বছর প্রায় পাঁচ শয়ের বেশি ডাক্তার ছাড়াও অন্যান্য বিভাগে আল আমীনের ছাত্রছাত্রীরা উজ্জ্বল নজির সৃষ্টি করে চলেছেন। এবার সেই যাত্রায় এম নুরুল ইসলামের নতুন দৃষ্টি এতিম সংখ্যালঘু শিশুদের প্রতি। যে সব এতিম মুসলিম শিশু যথার্থ সহায়তার অভাবে প্রতিবন্ধকতার কারণে মেধার বিকাশ অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে আল আমীনের ছত্রছায়ায় এনে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিয়ে তাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার ব্রত নিয়েছেন তিনি। সেই লক্ষ্যে ২০২৩ সালে আল-আমীন উৎসবের শেষ দিনে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে ‘শান্তিনীড়’-এর শুভ সূচনা হয়েছিল। সেই ‘শান্তি নীড়’কে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এ বছরে দুদিন ব্যাপী আল আমীন উৎসবের শেষদিন রবিবারে প্রাক্তনীদের সাক্ষী রেখে আল আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম বললেন, ‘৩৭ বছর আগে মাত্র ৭ জন ছাত্র নিয়ে শুরু হয় আল-আমীন মিশন এখন বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী মিলে ৬৩ হাজার সদস্যের বিশাল পরিবার। পাশাপাশি আল-আমীনের একটি নতুন মানবিক ভাবনা ‘শান্তি নীড়’, যেখানে পিতৃহীন, মাতৃহীন ও পিতৃমাতৃহীন তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির শিশুরা মিশন পরিবারের একান্ত যত্নে ও ভালোবাসায় শিক্ষালাভ করছে । প্রথমে ২২ জন কচিকাঁচাকে নিয়ে ‘শান্তিনীড়’-এর শুভ সূচনা হলেও বর্তমান সংখ্যাটা প্রায় ৫০ জনে পৌঁছেছে বলে জানান আল আমীন সম্পাদক। এ প্রসঙ্গে নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘শান্তি নীড়’ বহু এতিম ছেলেমেয়ের আশ্রয় স্থল হয়ে উঠেছে। আরও ব্রাঞ্চ হবে। তাদের বিনা অজুহাতে নেব। ৭৮টি ব্রাঞ্চ। ১৩টা বড় ক্যাম্পাস। আল্লাহ করাচ্ছেন, এই কাজে শামিল হলে আল্লাহ কবুল করে নেবেন। স্কুল রেকগনিশন ৩টে হয়েছে, ১টা পথে। ২০ টা হবে। স্কুলগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। রেসিডেন্সিয়াল নন রেসিডেন্সিয়াল মিলে ৯০টি শাখা। মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬৩ হাজার। এর পাশাপাশি আল আমীন মিশন স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে বদ্ধ পরিকর। এ নিয়ে নুরুল ইসলাম জানান, হেলথ কেয়ার ইউনিট ২০ টি। রাজারহাটের কাছে জমি নেওয়া আছে। জটিলতা কাটলে সেখানে মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে।
শুধু প্রথাগত শিক্ষা নয়, উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে গিয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার পথ দেখাতে কেরিয়ার কাউন্সেলিংয়ে নজর দিতে চায় আল আমীন। তাই নুরুল ইসলাম প্রাক্তনীদের প্রতি আহ্বান জানান, কেরিয়ার কাউন্সিলিংয়ে একটু সময় দাও। ক্যাম্পাসগুলোতে গিয়ে মোটিভেট করো। তিনি আরও জানান, শাখাগুলোর আশেপাশে অনেক পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়ে যারা মিশনে ভর্তি হতে পারে না তাদের কোচিং দিয়ে সহায়তা করার কাজ শুরু হয়েছে তালদিতে। অন্য ব্রাঞ্চেও সেটা করতে চাই। তবে, শিক্ষার আদর্শ পীঠস্থান হিসেবে আল আমীন মিশনের গড়ে তোলার পিছনে যারা আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি। তাই তিনি বলেন, মোস্তাক হোসেন, সাজাহান বিশ্বাসরা একসময় অনেক করেছেন আল আমীন মিশনের জন্য। তাদের দান কবুল করেছে মিশন। তারা সমাজের অন্যত্র করছেন। তবে, তাদের দ্বিতীয় পরিবারের মতো আল আমীন মিশন। আল আমীন উৎসবের শেষ দিনে বিশিষ্টজনদের মধ্যে হাজির ছিলেন হাওড়া জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) আইএএস আজার জিয়া। তিনি জানান, আল আমীন মিশন শুরু হওয়া খলতপুর মাদ্রাসা যখন সরকারি স্বীকৃতি পায়, তখন আমার আব্বা জিয়াউদ্দিন হায়দার ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সেক্রেটারি। অবশ্য আজার জিয়া বলেন, আল আমীন মিশনের গাছের ছায়া না পেলেও প্রাক্তনী অনেক ভালো ছেলেমেয়েদের পরিচয় পাই। ৪০ বছরের সেই আত্মত্যাগের বিনিময়ে আল আমীন পরিবার এই জায়গায় এসেছে। আল আমীন পিছিয়ে পড়া সমাজকে তুলে আনার জন্য কাজ করছে। পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ছেলেমেয়েদেরর মনে যে ভাবনা থাকে আমরা কি উচ্চ শ্রেণির সঙ্গে পারব, সেই ভীতি দূর করে তাদেরকে সাহস দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আল আমীন।আজার জিয়া আরও বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। চাকরি করেছি। কিন্তু এখন জেলা শাসকের ভূমিকায় এসে বুঝতে পেরেছি জাতি ধর্ম খুব ছোট বিষয়, আমাদের ভাবনা থাকতে হবে মানুষের সেবা করব।আজার জিয়ার পাশাপাশি এদিন উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট চিকিৎসক তাহেরা খাতুন, উদয়নারায়ণপুর থানার ওসি সৌমিক গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।তবে, দুদিন ব্যাপী আল আমীন উৎসবের আয়োজন থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানের বাস্তবায়নে সম্পাদক এম নুরুল ইসলামের দুই স্তম্ভ তথা প্রাক্তনী দিলদার হোসেন ও হাফিজুর রহমান এবং সুপারভাইজার মারুফ আজমের সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct