আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা
সামজিদা খাতুন
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”---
সমাজ আঙ্গিনায় বহুল সমাদৃত কবির এই বাণী।
আর ইসলাম ধর্মের মর্মকথা--’ এক নফস্ এই এসেছে দুইজন ‘। দায়িত্ব কর্তব্যের ভুবনে ছিল না কোনো বিভাজন; তা সমাজ নামক পরিকাঠামোরই সৃজন। তাই এই সামাজিক রূপায়ণ; মেলবন্ধন ও অর্থনৈতিক নিগূঢ় তত্ত্বে নারী কিভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন যুগে যুগে ও ভবিষ্যতের উন্নত অর্থনীতির রূপরেখা নির্মাণে -- তার ভূমিকার গ্রাফ নির্মাণ প্রসঙ্গেই, আজকের এই অবতারণা। নারী ও পুরুষ হলেন সভ্যতার দুটি চাকা; স্বভাবতই দুই চাকায় সমান ভাবে চলা উচিত; নতুবা সভ্যতার প্রগতি সমান্তরালে হবে না; যোজ্যতার সমীকরণ অন্তত তাই ই বলে। পরিসংখ্যানের বিচারে নারী - পুরুষ প্রায় সমান - সমান। তাই স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষা - দীক্ষা - ব্যবসা - বাণিজ্য - কৃষি - শিল্প - সর্ব ক্ষেত্রে ই নারী - পুরুষের কাজের ব্যালান্স জরুরী। শুধু মাত্র সন্তান প্রতিপালনেই নারীর দায়িত্বের পরিবৃত্ত টানা উচিত নয়। তবে একথা ঠিক যুগ যুগ ধরে নারী উপেক্ষিত। তবে প্রাচীন ইতিহাসের রূপরেখা তে ফিরলেও দেখা যায় কাজের পরিবৃত্তে নারী পিছিয়ে ছিল না। ঐতিহাসিক অনুমান প্রায় 9500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে নব্য প্রস্তর যুগে নারী প্রথম শস্য বপন করে খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদক হিসাবে সৃষ্টির জগতে বিপ্লব আনে। শিক্ষাক্ষেত্রে দেখেছি মৈত্রী, আত্রেয়ী দেবীকে। শুদ্ধ মন্ত্র পাঠে ঘোষা, অপলা, বিশ্ববারা। যুদ্ধক্ষেত্রে পাওয়া যায় সুভদ্রা প্রমিলা প্রমুখের নাম। মধ্যযুগের ব্যবসায়ী নারী রানি রেগমেন্ট।, সমাজ ও অর্থনীতিতে অ্যবেস বা রানি রেগমেন্টের ঐতিহ্যগত ভূমিকা যথেষ্ট অবদান রাখে ইউরোপে কৃষক ও কারিগর শ্রেণীর উন্নয়নে। ইতালিতে চিকিৎসক ট্রোটা, সালের্নো। দশ জন ধনী নারী-- আমেরিকান বিজনেস ম্যাগাজিন ফোবর্স অনুযায়ী ---
১) ফ্রাঁসোয়াস বেতন কুঁ মেয়ার -
২)সুসান ক্লাটেন
৩)জিনা রাইনহার্ট
৪)আইরিশ ফন্টবোনা প্রমুখ।
ভারতের ব্যবসায়ী মহিলা --
নমিতা থাপার, গজল আলঘ, সোমা মন্ডল প্রমুখ। তাই অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নারী এগিয়ে চলেছে উপেক্ষা কে বারবার হার মানিয়ে। নারী নিজের যোগ্যতার প্রমাণের নিরিখে জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক জেন্ডার গ্যাপ সূচকের শীর্ষ ১১০ এর মধ্যে স্থান পেয়েছে আমাদের ভারতবর্ষ। তবে প্রসঙ্গত বলতেই হয় এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সর্বাগ্রে রয়েছে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য মুর্শিদাবাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, হোটেল - রেস্টুরেন্ট বিজনেসেও নারীরা সমাজ ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বীরভূমের নারীদের সূচের কাজ, বাঁকুড়ার টেরাকোটা, মুর্শিদাবাদ এর বিভিন্ন উদ্যোগ - পুতি, শোলা, কাঁচ, পাথর, বাঁশের কাজে নারীদের ভূমিকা উদাহরণ যোগ্য ; যা সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক। আর বিশ্ববাজারে সমাদৃত দার্জিলিং টি ( মকাই বাড়ি টি স্টেট) শিল্পে নারী দের ভূমিকা অভাবনীয়। তাই নারী কে উপেক্ষা নয়, সাথে নিয়ে চলার অঙ্গীকার আজ বড়ই জরুরী। নইলে পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। যদিও এক্ষেত্রে সরকারী বিভিন্ন নীতি প্রশংসার দাবি রাখে। নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে আন্তর্জাতিক সনদ বা Convention on the Elimination of all forms of Discrimination Against Women ( CEDAW)। সংবিধানের আলোকে ও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২০-২০২৫) গৃহীত হয়েছে। আর এই সমস্ত পরিকল্পনার বাস্তবায়ণে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে তখনই যখন প্রত্যেকটি পরিবার ও সমাজের অগ্রগন্য ব্যক্তিত্বরা তা অনুধাবন করবেন এবং দায়িত্ব প্রাপ্ত টিম গঠন করে বেশি বেশি সেমিনার, আলোচনা সভার আয়োজন করবেন সমাজের প্রতি স্তরের মানুষের মধ্যে এই সচেতনতার বার্তা পৌঁছানোর জন্য। । নারী কে বাদ দিয়ে সমাজের, দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নয়ণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন -১) এন জি ও সংস্থা, ২) পরিবারের প্রধান৩) সমাজের প্রধান ৪) শিক্ষা বন্ধু, শিক্ষক, শিক্ষিকা ৫) সমাজসেবক ৬) পঞ্চায়েত/ পুর প্রধান ৭) মাওলানা, কারী, আলেম, হাফেজ -- প্রত্যেক কমিউনিটির মানুষ কে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে হবে ও আলোচনা সভা, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে নারীদের শিক্ষার উন্নয়ন ও কাজের ক্ষেত্রের পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। আর সরকারী তরফে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন জরুরী। তবেই দেশ ও সমাজ দেখবে এক নতুন আকাশ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct