নিরুত্তর
মোহাম্মদ আব্দুর রহমান
পৃথিবীতে প্রিতিটি মুহূর্তে ঘটে চলেছে অজস্র ঘটনা। এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। আর বিবেক নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে। কিসের জন্য ঘটল এই ঘটনা ? বিবেক খুঁজে বেড়ায় তার উত্তর। কিন্তু কোন উত্তর মেলে না। শুধু প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে যায়। যদিও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষেত্র গুলো এই সব প্রশ্নের উত্তর অল্প সময়ে বের করতে পারবেন। কিন্তু সেই সব প্রশ্ন গুলো তাঁদের বিবেক পর্যন্ত পৌঁছায় না। বকুল তলা বাজার সংলগ্ন স্কুলের আসে পাশে কয়েক দিন ধরে একটি মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার কেউ কেউ তার পরিচয় জানার জন্য মহিলাটিকে প্রশ্ন করে। সে ইশারায় অনেক কিছু বলে চাইলেও কেউ বুঝতে পারে না তার মনের ভাষা। আসলে সে ছিল একটি বোবা মহিলা। এই এলাকার কেউ জানে না মহিলাটি কোথা থেকে এসেছে ? এখান থেকে জন্ম হয় অনেক অনেক উত্তরবিহীন প্রশ্নের?মহিলাটির বয়স খুব জোর চল্লিশ বছর হবে। তার চুলগুলি এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও তার মুখটা যেন চাঁদের মত সুন্দর। যেন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে চাঁদের আলো। তার পরনের বস্ত্র জীর্ন হলেও তাকে দেখে মনে হয় কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হবে। যেন তার চোখ দুটি সমাজের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে আমি মানুষ হলেও কিছু সভ্য মানুষের জন্য অসহায় হয়ে পথে পথে ঘুরছি। তবে কিছু সমাজ প্রেমী মানুষের প্রশ্ন জাগে তাদের বিবেকের ভেতর। তবে কি পরিবারে কেউ পরিকল্পিত ভাবে ছেড়ে গেছে ? তাদের দায়িত্ব থেকে বাঁচার জন্য। না সে রাস্তা ভুল করে চলে এসেছে ? নানান প্রশ্ন কিছু সমাজ প্রেমী মানুষের মনে মাঝে জমা হতে থাকলেও আসতে আসতে এলাকার সাধারণ মানুষ তাকে অপনজন মনে করতে শুরু করে। সে যেন তাদের সমাজের একজন। ফলে যে যার মত তাকে সাহায্য করে।
রাতে মহিলাটি স্কুলের বারান্দায় থাকে। সকাল হলে গ্রামের দিকে চলে যায়। সে যেহেতু কোন মানুষের ক্ষতি করে না তাই সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। গ্রাম থেকে কিছু খাবার সংগ্রহ করে আবার ফিরে আসে স্কুলের আসে পাশে। আর সে সব সময় স্কুল পরিষ্কার করে রাখার জন্য চেষ্টা করে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাগজ গুলি তুলে ডাসবিনে ফেলে দেয়। যেনো স্কুলটি ছিল তার বাড়ি। আর সে সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কেমন করে আপন মনে করতে হয়। বিলিয়ে দিতে হয় জীবনের কিছু সময়। কয়েক বছর এভাবে কাটার পার কেউ কেউ লক্ষ করে মহিলাটি গর্ববতী। না হলে পেট বাড়ছে কেন ? প্রথমে অনেকেই এসব বিশ্বাস করতে চাইনি। কিভাবে সে গর্ববতী হতে পারে?সে তো বিবাহিত নয়। তবে কিছু দিনের ব্যবধানে এক সময় সবাই নিশ্চিত হয়ে যায় আসলেই তার পেটে বাচ্চা আছে। আবারও অনেক প্রশ্ন জাগে সকলের মনের ভেতর। মহিলাটির পেটের ভেতর যে বাচ্চা আছে তার বাবা কে ?কোন অমানুষ মানুষের রূপ ধারন করে এমন কাজ করেছে ? সে কি পশুর চেয়েও অধম ? তার কি পাপবোধ নেই ? তবে একটি প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যায় না আসতে আসতে মহিলাটির বাচ্চা প্রসবের সময় চলে আসে। তখন কিছু সমাজ সচেতন লোক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আর তার সকল ঘটনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়। হাসপাতালে অনেক লোকজন আসা যাওয়া করে। একজন লোক জানতে পারে এই ঘটনাটি। আবার সেই লোকটির কোন ছেলে মেয়ে হয়নি। সে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায় মহিলার পেটে যে বাচ্চা আছে তাকে সে দত্তক নিতে চায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মহিলাটিকে যারা রেখে গেছিল তাদের সাথে কথা বলেন। বাচ্চাটির ভবিষৎ-এর কথা ভেবে তারা সবাই লোকটির প্রস্তাব মেনে নেয়। তারা সবাই আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয় যে মহিলাটি বাচ্চা প্রসব করলে তখন তাকে ফুলের প্যাকেট দেখিয়ে বলতে হবে এটা তোর পেটের ভেতর ছিল। লোকটি মহিলাটির জন্য রোজ কিছু না কিছু ফল নিয়ে যায়। মহিলাটি ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকায়, নিশ্চয় মহিলাটির মনে প্রশ্ন হয়। এই লোকটিই কেন রোজ তার কাছে ফল নিয়ে আসে ? অবশই এই প্রশ্নের উত্তর সে পাইনি। সে তো জানতো না লোকটি তার পেটের বাচ্চার জন্য এমন করছে। ঠিক এক দিন সেই সময় চলে আসে। মহিলাটি একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। মহিলাটির জ্ঞান ফিরে আসে তখন সে আসে পাশে খুঁজতে থাকে তার বাচ্চাকে। সে বাচ্চাকে দেখতে না পেয়ে তার অশ্রুভেজা চোখ ফ্যাল ফ্যাল কর চারি দিকে তাকায়। তখন একটি কর্তব্যরত নার্স পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ফুলের প্যাকেট দেখিয়ে বলে এটা তোর পেটের ভেতর ছিল। তবুও মহিলাটি বার বার নিশ্চয় সে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে তার বাচ্চা কোথায় ? যদিও সে জানে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। তবে সে তো মা। সন্তান হারানোর ব্যথা তাকে জাপটে ধরেছে। তার চোখ দিয়ে অনবরত নৈঃশব্দে অশ্রু ঝরে পড়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct