বাংলা মিডিয়াম
শংকর সাহা
ওপাড়ার মুখুজ্জ্যে বাড়ি। জমিদারিটি হয়তো নেই আজ তবে হাবভাবে যেন ষোলো আনা জমিদারিটি আজও বজায় আছে। হরোনাথ মুখুজ্জ্যের একমাত্র ছেলে অগ্নি পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী। বিদিতা অগ্নির স্ত্রী। পুত্র ,নাতি পুত্রবধূকে নিয়ে হরনাথ মুখুজ্জ্যের সোনার সংসার। বিদিতা যেন সবসময় নিজেকে পাশ্চাত্যের ধাঁচেই গড়ে তুলতে চায়। অগ্নি ও বিদিতার একমাত্র ছেলে শন। শুধুই নামেই না সবকিছুতেই ছোটো থেকে ছেলেকে সবার থকে আলাদা করে মানুষ করতে চেয়েছেন। বড় হয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর স্বপ্ন যেন বিদিতার মাথায় চেপে আছে।সেবার শন যখন প্রথম স্কুলে ভর্তি হয় তখন স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে শ্বশুর মশাইয়ের সাথে প্রায় খণ্ডযুদ্ধ হয়ে যায় বিদিতার কারণ সে মনে করে মাসে দশ হাজার টাকা টিউশন ফি দিয়ে ইংরেজী স্কুলে না পড়ালে সমাজে স্ট্যাটাস থাকবে না । ছেলেকে কথায় কথায় ইংরেজী বলাও শিখে দিয়েছে বিদিতা। তার হাবভাব দেখে মাঝেমধ্যে অগ্নি নিজেও রেগে যায়।সেদিন ছিল শনের জন্মদিন। বেছে বেছে শনের স্কুলের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করেছে বিদিতা। সন্ধ্যায় রাতে মুখুজ্জ্যে বাড়িতে পার্টি। পাঁচ বছরের শনের কাছে তার জন্মদিনের চাকচিক্যতা হয়তো নিজেও বুঝে উঠতে পারছেনা। বাহারী সব আয়োজন। সন্ধ্যের পরে একে কে সব গেস্টরা আসতে শুরু করেছেন। এদিকে শনকে শিখিয়ে রেখেছে গেস্টদের সামনে মাকে মম বলে ডাকতে। আসলে সব যে বড়লোক পরিবারের লোকেরা এসেছেন আজ। তখন প্রস্তুতি চলছে কেক কাটার। এদিকে বিদিতা গেস্টদের নিয়েই ব্যস্ত। জন্মদিনের কেকটি কাঁটার পরেই শন মা মা বলে ছুটে যায় বিদিতার দিকে । ছেলের মুখে মম না শুনে মা ডাক শুনেই রেগে যায় সে । শনকে বারে বারে বোঝাতে যায় মম বলে সকলের কাছে ডাকতে। এমন সময় শাশুড়ী হিমলতাদেবী শনকে কোলে তুলে নিয়ে বলেন,‘বউমা, সন্তানের মুখে মা ডাকটাই যে আসে মা। তোমরা আজকালকার মানুষগুলো যতই আধুনিক হওনা কেন মা এই মা ডাক যে সবার নাড়ির টান। ওকে মা বলেই ডাকতে দাও? ‘ঠাম্মার কোলে বসে শন কেঁদে ফলে। এদিকে সবাই অবাক হয়ে বিদিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। লজ্জা ও সঙ্কোচে সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে শাশুড়ীমায়ের কথাগুলো।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct