আপনজন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে ১ জুন শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ক্রিস গেইল মনে করেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে খেলাধুলার বাজার ধরতে পারবে ক্রিকেট। তাতে ক্রিকেট খেলাটা নতুন এক উচ্চতায় উঠবে বলেও মনে করেন গেইল। যুক্তরাষ্ট্রে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই হবে প্রথম বড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এরই মধ্যে আশা করা হচ্ছে, সেখানে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে গ্যালারিতে তিলঠাঁই থাকবে না। ৯ জুন নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে হাইভোল্টেজ এই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ভেন্যুর দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার হলেও টিকিটের জন্য ২০০ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে এর আগে জানিয়েছিল আইসিসি।‘ইউনিভার্স বস’–খ্যাত গেইল মনে করেন, গত বছর মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি) সাফল্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট কিছুটা হলেও ভিত তৈরি করে নিতে পেরেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। গত বছরই প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় এই প্রতিযোগিতা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে ১০০ দিন গণনায় বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গেইল বলেছেন, ‘আইসিসি যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ক্রিকেটকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নিউইয়র্কে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আছে। আমি নিশ্চিত, এটা দুর্দান্ত হবে।’ গেইল আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয়েছে, যেটা সফল ছিল। এখানকার বাজার বিশাল। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে যেন এটা (ক্রিকেট) সাফল্য পায়, সেই আশা করতে হবে আমাদের।’
ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাফল্য তুলে নিয়ে ক্যারিবিয়ানরা সেই খেদ মেটানোর চেষ্টা করবে বলেও মনে করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১০৩ টেস্ট, ৩০১ ওয়ানডে ও ৭৯টি টি-টোয়েন্টি খেলা গেইল। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে নিতে পারিনি। তাই এবার খেলোয়াড়েরা একটা কিছুর (শিরোপা) জন্য লড়াইয়ের সুযোগ পাচ্ছে—সেটা দারুণ ব্যাপারই হবে। আমরা শুধু বার্বাডোজের ফাইনালে (২৯ জুন) থাকতে চাই। ফাইনালে কিন্তু যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।’২০১২ ও ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই দুটি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন গেইল। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরিও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই। গেইল মনে করেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান দলটির ‘সুযোগ ও সম্ভাবনা’ দুটোই আছে। ব্রিসবেনে গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ১৯৯৭ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটাই প্রথম টেস্ট জয় ক্যারিবিয়ানদের। সেই জয়ের মুহূর্ত নিয়েও কথা বলেছেন ৪৪ বছর বয়সী গেইল, ‘অস্ট্রেলিয়াকে অনেক বছর পর টেস্টে হারানোর উত্তেজনাই আলাদা। আর অধিনায়ক হিসেবে আমিও অস্ট্রেলিয়ায় হতাশায় ভুগেছি। কিন্তু জয় তুলে নেওয়াটা ছিল দুর্দান্ত ব্যাপার। ব্রায়ান লারাকে দেখেছি, টিভিতে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় তিনি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। কার্ল হুপার কেঁদেছেন।’ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি এখন একটি চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন। ক্রিকেট খেলে জীবিকা চালাতে খেলোয়াড়েরা এখন আর শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ওপর নির্ভর করেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকেই প্রচুর টাকা পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। গেইল মনে করেন, এটার সমাধান আইসিসিকেই করতে হবে, ‘আমি সব সময়ই ক্রিকেটারদের আয়ের পক্ষে। কারণ, তাদের জীবন চালাতে হয়। এটাই তাদের কাজ। ক্রিকেট আসলে অনেক বড় ব্যবসা। তাই আমরা দেশ বাদ দিয়ে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি বেছে নিতে জোর করতে পারি না কোনো ক্রিকেটারের ওপর। কারণ, দুই পক্ষের মধ্যেই আনুগত্যের ব্যাপারটি নেই।’ গেইল এরপর বলেন, ‘এখন অনেক বেশি ক্রিকেট হচ্ছে। তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে মনোযোগ কিছুটা সরেছে, যদি না বড় দুই দল মুখোমুখি হয়। আসলে (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে) অবকাঠামোটা একটু পাল্টাতে হবে তাদের (আইসিসি)। নিশ্চিত করতে হবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুখোমুখি হওয়া দুই দলই যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct