আপনজন ডেস্ক: দিনের শেষ বলে স্লিপে ক্যাচ তুললেন ‘নাইটওয়াচম্যান’ নাথান লায়ন। ম্যাট হেনরির বলে সহজ ক্যাচটি ফেলে দিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদি। ওয়েলিংটনে সিরিজের প্রথম টেস্টে ঘটনাবহুল ও নাটকীয় দ্বিতীয় দিনে নিউজিল্যান্ডের অবস্থা ফুটে ওঠে তাতেই। তারা পিছিয়ে পড়েছে, তবে অস্ট্রেলিয়াকে নাগালে পাওয়ার সুযোগ পেয়েও হারিয়েছে। গতকাল এগিয়ে ছিল নিউজিল্যান্ড, আজ সে ম্যাচটিই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।ক্যামেরন গ্রিনের ১৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংস, জশ হ্যাজলউডের সঙ্গে তাঁর রেকর্ডগড়া দশম উইকেট জুটিতে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে তোলে ৩৮৩ রান। জবাবে স্বাগতিকেরা গুটিয়ে যায় ১৭৯ রানেই। ফলো-অন করানোর সুযোগ থাকলেও অস্ট্রেলিয়া আবার ব্যাটিংয়ে নেমে হারায় স্টিভেন স্মিথ ও মারনাস লাবুশেনের উইকেট, দুজনকেই ফেরান সাউদি। তবে তিনিই ক্যাচ ফেলায় তৃতীয় উইকেটটি নিতে ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া, এখন তারা এগিয়ে ২১৭ রানে।বেসিন রিজার্ভে কঠিন কন্ডিশনে গ্রিনের সেঞ্চুরির পর গতকাল ৯ উইকেটে ২৭৯ রান নিয়ে দিন শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। আজ সকালে সেই গ্রিন নিউজিল্যান্ডকে হতাশ করে গেছেন বেশ কিছুক্ষণ। শেষ ব্যাটসম্যান হ্যাজলউডকে নিয়ে গ্রিন যোগ করেন ১১৬ রান। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে শেষ উইকেটে ষষ্ঠবার ১০০ রানের জুটি দেখা গেল, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেটি তাদের সর্বোচ্চ।মাত্র একজন সঙ্গী থাকলেও গ্রিন তাড়াহুড়া করেননি মোটেও। শট খেলার জন্য অপেক্ষা করেছেন নিউজিল্যান্ড ফিল্ডাররা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। দারুণ ডিফেন্সে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ৬২ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলা হ্যাজলউড। তাঁকে ফিরিয়ে ইনিংসে নিজের পঞ্চম উইকেটটি পান হেনরি, তবে যেটি হয়তো তিনি আশা করেছিলেন আরও আগেই। গ্রিন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ১৭৪ রান করে, যে ইনিংসে ২৩টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ৫টি ছক্কা।
অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট জুটিতে তৈরি হওয়া হতাশার ছাপই হয়তো থাকল নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়েও। ওয়েলিংটনে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পিচ একটু ফ্ল্যাট হয়ে আসছিল, কিন্তু তাদের ইনিংসে নামে ধস। ১২ রানে ০ উইকেট থেকে ৬টি বলের মধ্যে তারা পরিণত হয় ১২ রানে ৩ উইকেটে। সে ডামাডোলে একের পর এক ফেরেন টম ল্যাথাম, কেইন উইলিয়ামসন ও রাচিন রবীন্দ্র। নিউজিল্যান্ডে প্রথম টেস্ট খেলতে নামা মিচেল স্টার্কের বল স্টাম্পে ডেকে আনেন ল্যাথাম। আগের ৪ ইনিংসে ৩টি সেঞ্চুরি করা উইলিয়ামসন রানআউট হন ক্রিজের মাঝপথে উইল ইয়াংয়ের সঙ্গে সংঘর্ষে পথ হারিয়ে। আর হ্যাজলউডের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন রবীন্দ্র। দ্রুত ৩ উইকেটের চাপ সামাল দিতে ড্যারিল মিচেলকেও করতে হয় স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিং, প্রথম ৩৫ বলে তিনি করেন ৭ রান। ৩৬তম বলে প্রথম চারটি মেরেছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে, কিন্তু ঠিক পরের বলেই কট-বিহাইন্ড মিচেল। মধ্যাহ্নবিরতির আগে উইল ইয়াংকেও হারায় নিউজিল্যান্ড, যে উইকেট নেন মিচেল মার্শ।২৯ রানে ৫ উইকেটের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে এরপর পাল্টা-আক্রমণ করেন গ্লেন ফিলিপস ও টম ব্লান্ডেল। দুজনের জুটিতে ৮৬ বলেই ওঠে ৮৪ রান। অস্ট্রেলিয়াকে এরপর ব্রেকথ্রু এনে দেন নাথান লায়ন, তাঁর বলে ব্যাট-প্যাডে ক্যাচ তোলেন ৪৩ বলে ৩৩ রান করা ব্লান্ডেল। ১ বল পর লায়নের দ্বিতীয় শিকার স্কট কুগেলেইনও। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে শেষ আশা দেয় লায়ন ও ম্যাট হেনরির ৫২ বলে ৪৮ রানের জুটি। যেটি ভাঙে ৭০ বলে ৭১ রান করা ফিলিপসের উইকেটে। হ্যাজলউডের শর্ট বলের ফাঁদে পা দিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তোলেন ফিলিপস, যিনি ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন মাত্র ৪৩ বলে। পরের ওভারে সাউদি ফিরলেও হেনরি অবশ্য ছিলেন আরও কিছুক্ষণ। ৩৪ বলে ৪২ রান করে লায়নের চতুর্থ শিকার তিনি।অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে পায় ২০৪ রানের লিড। এ শতাব্দীতে নিউজিল্যান্ডে সফরকারী দলগুলোর প্রথম ইনিংসে পাওয়া লিডের মধ্যে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ, আগের চারটিও এসেছে এ মাঠেই। বেসিন রিজার্ভে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং গোলমেলে হয়ে যায়, তা বলাই যায়!শেষ বেলায় অবশ্য গোলমাল বাঁধে স্মিথ-লাবুশেনের ব্যাটিংয়েও। সাউদির বাড়তি বাউন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাটের বদলে পাঞ্চের মতো উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজে বোল্ড হন স্মিথ। আর ফর্ম খুঁজে ফেরা লাবুশেন কট-বিহাইন্ড ডাউন দ্য লেগে। এ নিয়ে লাবুশেনের সর্বশেষ ৫ ইনিংসের চিত্রটা দাঁড়াল এমন—১, ২, ৩, ৫ ও ১০!নাইটওয়াচম্যান লায়নকে নিয়ে দিনের বাকিটা সময় পার করেন খাজা। লায়নকে আউট করতে পারলে দিনের শেষটুকু অন্তত আরেকটু ভালো হতে পারত নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু ওয়েলিংটনের দিনটা যে মোটেও তাদের নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct