আপনজন ডেস্ক: সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে হুগলির আরামবাগের জনসভায় শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বীকার করে নিলেন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এক বড় ভোট ব্যাঙ্ক হল মুসলিমরা। আর তাই মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক দুর্নীতি এবং জনগণের অর্থ লুটপাট রোধে একটি সংকল্প গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়ে দেন। দুর্নীতি ও গুন্ডারাজ কায়েমে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুপুরে সরব হলেও সন্ধ্যায় রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। যদিও তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক নিছক সৌজন্যমূলক।এদিন আরাবমাগে প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রসঙ্গে সরব হলেও তার লক্ষ্য হয়ে ওঠে তৃণমূলের মুসলিম ভোটে ভাঙন ধরানো। তাই, দেশজুড়ে সংখ্যালঘু নিপীড়নের মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের প্রতি তিনি তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যানের ডাক দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, তৃণমূলের ঔদ্ধত্যের ভিত্তি হল তাদের উপর মুসলিমদের অগাধ আস্থা। এই আস্থার উপর ভিত্তি করে যে তাদের একটি সুরক্ষিত ভোট ব্যাংক রয়েছে। যদিও মোদির আশা, মুসলিম মহিলারা তৃণমূলের গুন্ডারাজকে প্রত্যাখ্যান করবেন। উল্লেখ্য, রাজ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট আছে। আর তার সিংহভাগ গত কয়েকটি নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে প্রতিফলিত হয়েছে। তার ফলে, মুর্শিদাবাদের মতো মুসলিম প্রধান জেলায় বিরোধীরা একেবারে দুয়ে মুছে সাফ। সেই ভোট ব্যােঙ্ক ধস নামাতে পারলেই যে বিজেপির বড় লাভ, সেটা বুঝেই তিনি মুসলিমদের প্রতি তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যানের ডাক দেন। মোদি বিলক্ষণ বুঝে গেছেন বাংলায় তৃণমূলের মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে ধস না নামালে তদের পশ্চিমবঙ্গ জয় অধরা হয়ে যাবে। যদিও মোদি তার বক্তৃতার সিংহভাগই তৃণমূলের দুর্নীতি প্রসঙ্গ নিয়ে বলেন। মোদি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতির একটি নতুন মডেল চালু করেছে, যা দল রাজ্য প্রশাসনের সক্রিয় সুরক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তার অভিযোগ, স্কুলের চাকরি থেকে শুরু করে পুরসভা, রেশন বণ্টন থেকে সীমান্তে গরু পাচার সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি রয়েছে। এমনকি অপরাধীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তৃণমূল টাকাও পায়। পরোক্ষভাবে বাংলার কারাবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শাসক দলের কোনও নেতার জায়গা থেকে এত টাকার বান্ডিল উদ্ধার এর আগে কেউ দেখেনি। মোদী বলেন, সম্ভবত আপনি সিনেমা হলেও এত বিপুল পরিমাণ টাকা বাজেয়াপ্ত দেখেননি। তিনি বলেন, যেহেতু ক্ষমতাসীন সরকার দুর্নীতিতে ডুবে আছে, তাই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির দুর্নীতির তদন্তের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে ধর্না চলছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে তৃণমূলের ধর্নায় তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন। মোদি বলেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও এই ধরনের ধর্নায় সামিল হয়েছেন। তৃণমূলের একটাই চাওয়া, জনগণের টাকা লুঠ করা। কিন্তু আমি একটি সংকল্পও নিয়েছি, তা হল জনগণের অর্থের এই ব্যাপক লুটপাট রোধ করা এবং পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে দুর্নীতি ও নিপীড়নের থাবা থেকে মুক্ত করা। প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেছিলেন যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর পদক্ষেপ তাকে তৃণমূল কংগ্রেসের এক নম্বর শত্রুতে পরিণত করেছে। তবে, এদিন তৃণমূল নিয়ে সরব হলেও এ রাজ্যে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। মোদির নিশানায় শুধু ছিল তৃণমূল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct