আলম সেখ, কলকাতা, আপনজন: দেশের বর্তমান অবস্থা ও মুসলিম সম্প্রদায়ের করণীয় কি সেই সম্পর্কের বিস্তারিত আলোচনা করতে গতকাল কলকাতার মিল্লি আল আমিন কলেজে অনুষ্ঠিত হয় এক সভা। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার তথা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মুখপাত্র হজরত মাওলানা সাজ্জাদ নোমানি। তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা ও সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার হওয়ার রাস্তা সর্ম্পকে মুসলিম সম্প্রদায়কে অবগত করতে গিয়ে বলেন, আজ বর্তমান ভারতবর্ষে যেই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, একের পর এক মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের ঘোষণা, মুসলমানদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাঁদের হত্যা করার পরিকল্পনা এগুলো কোনো কিছুই আজ হঠাৎ করে সংঘটিত হয়নি, এগুলো আজ থেকে ১০০ বছর পূর্বে পরিকল্পনা করা হয়েছে। দেশের সামান্য কিছু ব্রাহ্মণ নিজেদের সাম্রাজ্যকে তৈরি করার জন্য, রাজত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিচু শ্রেণী গুলোকে হিন্দু নাম দিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা তাঁদের কাছে হিন্দু নয়। তাঁরা সেই শ্রেণীকে হিন্দু পরিচয় দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা করেছে নিজেদের মূল লক্ষে সফল হওয়ার জন্য, আজ তাঁরা সফলতার অন্তিম লগ্নে। তাঁরা ১০০ বছর পূর্বে লিখিত এজেন্ডা বানিয়ে, ব্রিটিশদের পা ধরে, হিটলারকে আইডল বানিয়ে দেশে মুসলিম গণহত্যার ছক একে দেশের ক্ষমতা দখল করেছে। এই রকম পরিস্থিতিতে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় ভয়ে কাতর হয়ে গেছে, ঘরে আবদ্ধ হয়ে গেছে নিজেদের বাক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। এদের এই দুর্বলতা, ভয়ে কাতর হয়ে যাওয়া, বাক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলা তাঁদের লক্ষ উদ্দেশ্য সফল করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ভয় থেকে বের করে এই সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষে সারা দেশ ছুটে বেড়ায় আমি, নানান রাজ্য ও শহর দেখে হতাশ হয়েছি যার মধ্যে রয়েছে এই পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা শহর। এই বাংলার এই শহরের যুবকরা ছন্নছাড়া হয়ে, ভয়ে কাতর হয়ে ঘরে আবদ্ধ হয়ে গেছে, তাঁরা পাইনি কোনো দিশা, তাঁরা পাইনি কোনো নেতৃত্বের ছায়া। আমি এই বাংলার আলেম সমাজ মুসলিম সংগঠন, শিক্ষক, অধ্যাপক সমস্ত সামাজিক মানুষকে বলতে চাই সহায় এগিয়ে আসুন, গ্রামে গঞ্জে, প্রতিটা এলাকায়, প্রতিটা শহরে সামাজিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যাবস্থা গ্রহণ করুন, সকলে ঐক্যবদ্ধ হন। আপোষহীনভাবে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, তাঁদের মতো আপোষহীনভাবে সংগ্রাম যারা নিজেদের জান, মাল, সময়, স্ত্রী, সন্তান সব কিছু দিয়ে, নিজেদের সুখের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে দেশ রক্ষার জন্য, সংবিধান রক্ষার জন্য, এই জাতিকে রক্ষার জন্য আপোষহীন সংগ্রাম করে গেছে।দেশের এমনি এক পরিস্থিতি গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কিছু করতে গেলেও জেলে বন্দি করে দেওয়া হচ্ছে, সম্প্রীতির বার্তা দিতে গেলে দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে প্রতিহত করতে, এই অবস্থার পরিবর্তন করতে আমরা কখনোই কোরান হাদিসের দিকে তাকায়নি। আমরা গান্ধির কথা ভেবেছি, আমরা নেহেরুর কথা ভেবেছি কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা ভাবিনি। মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন মদিনা গেলেন সেখানে ৫ জন ইহুদী নেতার সাথে বৈঠকের ব্যবস্থা করলেন, সেই বৈঠকে ইসলামের বার্তা দিলেন না, অবস্থা সম্পর্কে অবগত করে মদিনায় সবাই মিলে শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকার জন্য দাবি করলেন। বিগত ১৮ বছর সেই মদিনায় শান্তি ছিল, মদিনা অপেক্ষায় ছিল কবে মুহাম্মদ (সাঃ) আসবেন। হঠাৎ একজন ইহুদী নেতা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন আমরা আপনার সর্ম্পকে খারাপ কিছুই শুনিনি, আপনি একজন ন্যায়পরায়নশীল ও সৎ মানুষ আপনি সকলের একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করা এই চুক্তিকে নেতৃত্ব দেন, যে ভুল করবে তাঁকে সাজা দেবেন। সেই সময়ে একজন নিরক্ষর মানুষ হয়েও মুহাম্মদ (সাঃ) ৫৪ টা আর্টিকেলের শান্তির নির্দেশমালা লিপিবদ্ধ করিয়েছেন।হযরত মাওলানা মুফতি আব্দুল ময়িদ যুব সমাজকে আলেমদের অনুগত্যের অধীনস্থ হওয়ার নির্দেশ দেন, যেকোনো ভুল পথ বা উস্কানিতে পা না দিয়ে ইমানকে মজবুত রাখার নির্দেশ দেন এবং আশ্বাস দেন ইসলামের ইতিহাসে এর চাইতেও ভয়ংকর দিন এসেছে, তবুও উদ্ধার হয়েছে আবারো উদ্ধার হবে তবে ভুল পথে পা নয়। হজরত মাওলানা জিয়াউদ্দিন কাশমি বলেন আজকের এই রকম পরিস্থিতিতে আমরা শুধু নিজ আর নিজেদের পরিবার নিয়েই ভাবতে পারিনা, দেশের সমস্যাকে নিজেদের সমস্যা ভেবে এগিয়ে আসতে হবে। মাওলানা কারী ফাজলুল রহমান বলেন বাংলা পিছিয়ে থাকার কারণ এখানে মুসলমানরা ঘুমন্ত এদের জোস নাই। তিনি মুসলিম সংগঠন গুলোর দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন করেন কেনো কোনো সংগঠন এগিয়ে আসছে না। কুরআন তেলোওয়াতের মাধ্যমে সভার সূচনা করেন হাফিজ নোমান, সভার সভাপতিত্ব করেন নাকোদা মসজিদের ইমাম হজরত মাওলানা শফিক কাশমি। সম্মিলিত দোয়ার মাধ্যমে সভার সমাপ্তি করেন মাওলানা সাজ্জাদ নোমানি ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct