আপনজন ডেস্ক: টানা দ্বিতীয় টেস্টে যশস্বী জয়সওয়ালের ডাবল সেঞ্চুরি দেখতে দেখতে রিফাত বেগ নামের এক তরুণের কথা কারো মনে পড়ে যাওয়াটা বিচিত্রই শোনাতে পারে। কিন্তু রাজকোটে যশস্বীর ব্যাটিং যশে মুগ্ধ নাজমুল আবেদীন ফাহিম প্রাসঙ্গিকভাবেই টানলেন শেখ কামাল অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় ক্রিকেটে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে সদ্য ট্রিপল সেঞ্চুরি করা বিকেএসপির ব্যাটারকে, ‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। এতটা ধৈর্য কী করে দেখাল সে?’চেনা-পরিচিত কোচদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিম্নমানের উইকেটে খেলা হওয়ার নমুনা জানাই এই ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষকের বিস্মিত হওয়ার কারণ, ‘এই বয়সটিই ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে ওঠার। একে ভালো উইকেট নেই, তার ওপর ওরা খেলবেও অল্প কিছু ম্যাচ।খোঁজ নিয়ে দেখুন, একই বয়সে জয়সওয়াল এক মৌসুমে ৪০ থেকে ৫০টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের এখানে ওই পরিবেশটি আমরা খুদে ক্রিকেটারদের দিতে পারি না। আমাদের এখানে জয়সওয়ালের মতো কাউকে না পাওয়ার এটি একটি কারণ, তবে একমাত্র অবশ্যই নয়।’সামনে এসে দেয়াল তুলে দাঁড়ানো আরো অনেক বাধাও আছে। তাই ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করা জয়সওয়াল এবং বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান জয়ের মধ্যে পরের পর্যায়ে পার্থক্যটি স্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে। জয়সওয়ালদের হতাশায় ডুবিয়ে মাহমুদুলরা যুব বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ঠিকই, তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ঝলমলে মঞ্চে ভারত আর বাংলাদেশের এই দুই ক্রিকেটারের দূরত্ব এখন অনেক। ক্যারিয়ারের প্রথম ৭ টেস্টেই জয়সওয়ালের তিন সেঞ্চুরির দুটিই ডাবল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ২২ ম্যাচেই তাঁর ১২ সেঞ্চুরি।
অথচ ৩১ ম্যাচ খেলে ফেলা মাহমুদুলের সেখানে ৪টি। ফাহিম অবশ্য খেলোয়াড়দের দোষ দেখেন সামান্যই, ‘খেলোয়াড়দের মানসিকতা কিন্তু নির্ভর করবে আমরা কিভাবে পরীক্ষাটি নিই, আমরা কিভাবে প্রশ্নপত্র সাজাই, কিভাবে মূল্যায়ন করি—তার ওপর। পরীক্ষার পরিবেশ তৈরি করলে ছেলেরা কিন্তু সেভাবেই প্রস্তুত হয়ে আসবে।’ভালো উইকেট দেওয়া হয় না, প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সুযোগ-সুবিধাও নেই। ফাহিম বরং এ ক্ষেত্রে পুরো দেশকে ঢাকার একটি এলাকার মধ্যেই সীমিত হয়ে যেতে দেখেন, ‘খেয়াল করলে দেখবেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটারদের বেশির ভাগেরই বাসা মিরপুরে। রাজশাহীর ক্রিকেটারও এখানে, জামালপুরের ক্রিকেটারও এখানে, ঢাকার ক্রিকেটারও এখানে।’ ক্রিকেটীয় সুযোগ-সুবিধার বেশির ভাগই যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকেন্দ্রিক, ‘খেলোয়াড়দের উন্নতি করার মানসিকতায় ঘাটতি নেই বলব না। কিন্তু আমাদের দেশে নিজের থেকে উন্নতি করার সুযোগ কতটুকু, জটিলতাটা এখানেই। যে সুযোগ-সুবিধাগুলো দরকার, সেগুলো নিজে থেকে ব্যবস্থা করা সম্ভব না।’ ফাহিম তাই আশাও দেখাতে পারেন না খুব, ‘আমি চাইলেই আমার একটি বোলিং মেশিন হবে, আমি চাইলেই আমার জন্য পাঁচজন নেট বোলার চলে আসবে, এটি সম্ভব না। ভালো উইকেটও লাগবে। এখানে যে সহায়তা দরকার, ওটা কিন্তু একেবারেই নেই। হাতে গোনা কিছু খেলোয়াড়ের বাইরে সেই সুবিধাটাই নেই। যে ছেলেটা জাতীয় দলের বাইরে চলে যায় অনেক দিনের জন্য, সে আর ইনডোরে ঢুকতেই পারে না। আমাদের ওই পরিবেশটাই নেই যেটি দিয়ে বলা হবে, ‘সব ঠিক আছে, তোমার মতো করে চেষ্টা করে যাও। আমরা আছি তোমার পাশে।’ আমাদের এখানে সেটি নেই তো। জয়সওয়ালদের রাজ্য পর্যায়ে এই সুবিধাগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণেই আছে। আমাদের ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি বলে দূর-দূরান্তের ক্রিকেটাররা মিরপুরেই এসে বাসা নেয়। গড়ে ওঠার পরিবেশ না দিলে আপনি জয়সওয়ালদের পাবেন কী করে?’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct