নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মৃত্যু হল এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মৃতের নাম তুফানু মহলদার (৪৫)। বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভালুভরট গ্রামে। গ্রামের বাড়িতে মৃতের দেহ ফেরাতে চাঁদা তুলে পাঠালেন হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,অভাবের তাড়নায় প্রায় নয় মাস আগে পঞ্চায়েত ভোটের পরে দিল্লিতে রাজ মিস্ত্রীর জোগানদার এর কাজ করতে যায় তুফানু। সঙ্গে নিয়ে যায় অসুস্থ স্ত্রী পুষিয়া মহলদার ও একমাত্র সন্তান নিখিল মহলদার ( ২২)কেও। শনিবার সকালে কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে সে।সেদিন সন্ধ্যার সময় মৃত্যু হয় ওই পরিযায়ী শ্রমিকের। শ্রমিকের হঠাৎ মৃত্যু ঘিরে পরিবার-পরিজনদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। কিভাবে দেহটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসবেন এই নিয়ে চরম সংকটে পড়েছিলেন মৃতের পরিবার।দিল্লি থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসতে খরচ লাগবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।এত টাকা কোথায় পাবে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার। এই খবর জানতে পেরে এলাকার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা চাঁদা তুলে দেহটি নিয়ে আসার উদ্যোগী হয়। সোমবার সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে শ্রমিকের কফিন বন্দী দেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাবে বলে জানান এলাকার মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণ চন্দ্র চৌধুরী জানান,পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিল তুফানু। বাস্তুভিটা ছাড়া তার কোনো জমি নেই।বছর দুয়েক আগে সরকার থেকে একটি পাকা বাড়ি পেলেও এখনও পর্যন্ত মাথার উপরে ছাঁদ হয়নি।টিনের চালা দেওয়া বারান্দায় কোনোরকমে দিন গুজরান করত। বছরের বেশিরভাগ সময় স্বপরিবারে ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করে। স্ত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থ। ছেলেও তেমন কাজ করতে পারে না। একজনের রোজগারে স্ত্রীর চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবারের খরচ জোগাড় করতে হতো। তাই পরিবারটিকে সাহায্যের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন সে। মৃতের কাকি বিশখা মহালদার জানান, একটা ভাঙাচোরা ঘর ছাড়া তার কিছুই নেই। বাড়িতে থাকা কালীন ভিক্ষা চেয়ে কোনোরকমে দিন গুজরান করত। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মারা যাওয়ায় বিপদের মধ্যে পড়েছে পরিবারটি। এখন কিভাবে চলবে পরিবার। এই চিন্তায় ঘুম উড়েছে তাদের। যদি সরকার পরিবারটিকে কিছু আর্থিক সাহায্য করে তাহলে কিছুটা হলেও কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে তারা।স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মঞ্জুর আলম জানান, এলাকা থেকে চাঁদা তুলে দেহটি নিয়ে আসার উদ্যোগী হয়। পরিবারটি যাতে সরকারি সুযোগ সুবিধা পায় তা তিনি ব্লক প্রশাসনকে বিষয়টি জানাবেন।বিডিও সৌমেন মন্ডল জানান, ওই পরিযায়ী শ্রমিকের নাম যদি পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক’পোর্টালে অন্তর্ভূক্ত থেকে থাকে তাহলে সরকারিভাবে সবরকমের সহযোগিতা পাবে পরিবারের লোকেরা। মৃত ওই পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রীর বিধবা ভাতা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct