নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: প্রায় চার দশক আগে শুরু হওয়া লেখাপড়ায় বিজ্ঞানভিত্তিক আবাসিক পদ্ধতি প্রচলনের অগ্রদূত আল-আমীন মিশনের প্রতি অভিভাবকদের আস্থা ক্রমবর্ধমান। সেকারণে মিশনের প্রত্যেকটি প্রবেশিকা পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ গত বছরের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ৪৩৫৯ জন ছাত্র ও ৩৪১৫ ছাত্রী অর্থাৎ মোট ৭৭৭৪ জন পরীক্ষার্থী আজ রাজ্যের ৪১ টি কেন্দ্রে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছে। গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় ৫০০ জন পরীক্ষার্থী বেশি। ১৫-টি জেলায় ৩০-টি উচ্চ মাধ্যমিক ক্যাম্পাসে আড়াই হাজারের বেশি সফল পরীক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া হবে বলে জানায় মিশন কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেকবারের মত মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে নজরকাড়া ভিড় ছিল, বললেন মিশনের প্রবেশিকা পরীক্ষা বিভাগের প্রমুখ সেখ মোমিনুর রহমান। সংখ্যালঘু সমাজের মেধাবী ছেলেমেয়েদের মেধার অকাল পতন রোধে আল-আমীন অনেকটা সফল হলেও এখনও অনেক পথ অতিক্রমই বাকি বলে মনে করে মিশন। কেবলই ক্লাসরুম ও হস্টেলের অপ্রতুলতার কারণে বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর মিশনে পড়াশোনা হয়ে ওঠে না। ১৯৮৭ সালের মাত্র ৭ জন আবাসিক পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজারে পৌঁছেছে। এতো বড়ো পরীক্ষার সুচারু আয়োজন ও নির্বিঘ্ন সম্পন্ন করার জন্যে আল-আমীন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম অ্যাডমিশন টেস্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট পুরো টিমকে মুবারকবাদ জানিয়েছেন। অভিভাবক অভিভাবিকাদের সহযোগিতার প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা এবং পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মিশন শুরু থেকেই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার বিকাশকেই পাখির চোখ করে এগিয়ে চলেছে। আর্থিক প্রশ্নে দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের মিশনে ভর্তিকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হয়; কিন্তু তাদের মেরিট নিয়ে মিশনের নীতি বরাবরই অত্যন্ত দৃঢ়। আজকের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পেশাদরি শিক্ষায় মেরিটের সঠিক অনুশীলন বিনা উচ্চ শিক্ষায় অগ্রগ্রতি ও বড়ো সাফল্য অর্জন অসম্ভব। সেকারণে মিশনের সমস্ত শাখায় বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণি থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক সিলেবাসের সঙ্গে সঙ্গে সর্বভারতীয় নিট (NEET) ও অন্যান্য পেশাদারি পরীক্ষার অনুশীলন করানো হয়। প্রসঙ্গক্রমে তিনি উল্লেখ করেন যে, কেবলই এতিম ও ঈমাম সাহেবদের সন্তানদের জন্যে আমরা কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী হয়ে থাকি। ইতিমধ্যেই পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং নিটের কোচিং মিলিয়ে ৭০০ জনের বেশি এতিম ছাত্র-ছাত্রী এবং বেশ কিছু ঈমাম সাহেবের সন্তান মিশনের হস্টেলে পাঠরত। এর সঙ্গে যোগ করে তিনি জানান, গত ২০২২ সাল থেকে এতিম ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে মিশন। দেখা গেছে, পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে যে-সব এতিম পড়ুয়া আল-আমীনে পড়তে আসে, মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নানা সামাজিক আর পারিবারিক কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তারা অন্যদের থেকে পিছিয়ে থাকে। এই ভাবনা থেকে এতিমদের বিশেষ পর্যবেক্ষণসহ পাঠদানের উদ্দেশ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেই ভর্তির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে—যাতে করে পঞ্চম শ্রেণি থেকে মিশনের বিভিন্ন শাখায় গিয়ে তারা বাকি সকলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমানভাবে দক্ষ হয়ে ওঠে। এই উদ্দেশ্যে মিশনের খলতপুর ক্যাম্পাস সংলগ্ন আরও এক নতুন ক্যাম্পাসে একটি ছয় তলা ভবন নির্মিত হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ‘শান্তিনীড়’। দু-শোর বেশি ছাত্র-ছাত্রী এই ভবনে থেকে পড়াশোনার পর অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে আল-আমীন মডেল স্কুল খলতপুর-এ ভর্তি হবে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে আনন্দের সঙ্গে এরা লেখাপড়া করছে স্নেহ আন্তরিকতা আর মূল্যবোধের স্পর্শ নিয়ে। এতিম অর্থে পিতৃহীন কিন্তু মাতৃহীন শিশুদের অসহায়তা ও আমাদের অনেককে ভাবায়। এছাড়া রয়েছে আরও বঞ্চিতরা, যারা পিতামাতাহীন—সামাজিক কারণে এরা সকলেই এতিমেরই গোত্রভুক্ত। তিনি আরও বলেন, নিউটাউনে নির্মাণাধীন আল-আমীন মিশন ইন্সটিটিউট ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এ শীঘ্রই নিট (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট)-এর প্রবেশিকা পরীক্ষার আবাসিক কোচিং শুরু হচ্ছে ইনশা আল্লাহ্। সঙ্গে থাকছে নবপর্যায়ের ডব্লিউ.বি.সি.এস. কোচিংয়ের ব্যবস্থাও। উল্লেখ্য, প্রবেশিকা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে ১০ মার্চ ২০২৪। মিশনের ওয়েবসাইট www.alameenmission.org থেকে ফলাফল জানা যাবে। এছাড়া কেবলই সফল পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরে এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপ মারফতও ফলাফল জানানো হবে। ফলাফলেই উল্লিখিত হবে কাউন্সেলিঙের তারিখ এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়াদি প্রভৃতি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct