আপনজন ডেস্ক: স্টাম্প মাইক্রোফোনে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে বলতে শোনা গেল, আরেকটি উইকেট পেলেই দিনের খেলায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিট পাওয়া যাবে। রাজকোটে ইংল্যান্ডকে শেষ করতে পঞ্চম দিনে ফেরার কোনো ইচ্ছা ছিল না ভারত অধিনায়কের। তা ফিরতেও হবে না তাদের। যশস্বী জয়সোয়ালের ছক্কা-বৃষ্টির দ্বিশতকের পর ইংল্যান্ডের সামনে ছিল এমন লক্ষ্য, যা বাজবলের জন্যও মনে হচ্ছিল অসম্ভব। সেই ৫৫৭ রান তাড়া করতে নেমে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ইংল্যান্ড, গুটিয়ে গেছে ১২২ রানেই। প্রথম ইনিংসে শতকের পর এবার ৫ উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। এ সিরিজে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের ক্যারিয়ারের মোট রান ইংল্যান্ডের এক জো রুটের রানের চেয়েও কম, এমন পরিসংখ্যানও দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু ২২ বছর বয়সী ও ৬ টেস্টের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যশস্বী জয়সোয়ালের ‘জয়স’বলের চাপ সামলাতে পারেনি ইংল্যান্ড। বিশাল লক্ষ্যে ১০ নম্বরে নামা উড খেলেছেন ১৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস, ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোর সেটিই। ভারত জিতেছে ৪৩৪ রানে, রানের হিসেবে যেটি তাদের সবচেয়ে বড় জয়। অন্যদিকে রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছে মাত্র একবার। লক্ষ্য যতই হোক, ইংল্যান্ড রান তাড়ার দিকে যাবে, সেটি ধরে নেওয়ারই কথা অনেকের। তবে ইংল্যান্ড আদতে কী করতে চেয়েছে, সেটি বোঝার জন্য যথেষ্ট দীর্ঘ ছিল না তাদের দ্বিতীয় ইনিংস। যশপ্রীত বুমরা ও মোহাম্মদ সিরাজের করা প্রথম ২ ওভার মেডেনের পর বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন—তাঁরা সময় নিয়েই এগোতে চান। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডাকেটের রানআউটে পথটা হারাতে শুরু করে ইংল্যান্ড। মিড অন থেকে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়েছিলেন, তবে উইকেটের পেছন থেকে তৎপর ধ্রুব জুরেলের সঙ্গে পেরে ওঠেননি ক্রলি ডাকে সাড়া না পেয়ে ক্রিজে ফিরতে চাওয়া ডাকেট। বুমরার বলে জ্যাক ক্রলির পর রবীন্দ্র জাদেজার বলে জো রুট হন এলবিডব্লু, দুবারই আম্পায়ার্স কল বিপক্ষে গেছে ইংলিশদের। এ দুজনের মধ্যে ফেরেন ওলি পোপ ও জনি বেয়ারস্টো। পোপ স্লিপে ক্যাচ দেন জাদেজার বলে, বেয়ারস্টো এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত রিভিউ করারও প্রয়োজন বোধ করেননি। রুট ফেরেন পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে, দলীয় ৫০ রানে। ওই ৫০ রানে বেন স্টোকস ও রেহান আহমেদকেও হারায় ইংল্যান্ড। বেন ফোকস ও টম হার্টলি একটু প্রতিরোধ গড়েছিলেন টেস্টকে পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়ার। জাদেজার চতুর্থ শিকার হয়ে থামতে হয় ফোকসকে, দিনে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত খেলার সুযোগও তাতে তৈরি করে ভারত। টম হার্টলি এরপর বোল্ড হন আজই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে, মায়ের অসুস্থতায় যিনি টেস্ট ছেড়ে গিয়েছিলেন। মাঝে একবার জাদেজার বলে এলবিডব্লু হয়েছিলেন উড, তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। শেষ পর্যন্ত তিনি থামেন জাদেজারই পঞ্চম শিকার হয়ে, ধরা পড়েন জয়সোয়ালের হাতে। শেষ পর্যন্ত দিনটি তো জয়সোয়ালেরই!
সকালের সেশনে অবশ্য ইংল্যান্ডকে হতাশ করেন এমনকি ‘ব্যাটসম্যান’ কুলদীপ যাদবও। শুবমান গিলের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ৫০ রান উঠে যায়। প্রথম ঘণ্টার শেষদিকে গিয়ে প্রথম উইকেট হারায় ভারত, কুলদীপের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে শতক থেকে ৯ রান দূরেই থামতে হয় গিলকে। গতকাল রিটায়ার্ড হয়ে উঠে যাওয়া জয়সোয়াল নামেন এরপর। ৯১ বলে ২৭ রান করে থামেন কুলদীপ, এরপর রাজকোটে চলে জয়সোয়াল ও সরফরাজের শো। ১৪৯ রানে অপরাজিত থেকে, সরফরাজের সঙ্গে জুটিতে দ্রুতই ৫৬ রান তুলে ও ভারতের লিডকে ৪৪০ রানে নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে যান জয়সোয়াল। পরের সেশনে তাঁর সামনে আরও অসহায় হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড, কম যাননি সরফরাজও। সেশনের তৃতীয় ওভারে জেমস অ্যান্ডারসনকে টানা তিনটি ছক্কা মারেন জয়সোয়াল, ইতিহাসের সফলতম পেসারকেও তখন মনে হচ্ছিল দিশেহারা। ইতিহাসের মাত্র সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের প্রথম তিনটি শতককেই ১৫০-তে রূপ দিয়েছেন জয়সোয়াল। মাঝে ৫ ওভারে কোনো বাউন্ডারি আসেনি, রুটকে পরপর দুটি চার মেরে সে খরা কাটান সরফরাজ। রুটকে টানা দুটি ছক্কা মেরে ওয়াসিম আকরামের এক ইনিংসে ১২ ছক্কার ২৮ বছরের পুরোনো রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন জয়সোয়াল, ওই ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ার ও সিরিজের দ্বিতীয় দ্বিশতকও পেয়ে যান। তার আগেই অভিষেক টেস্টে দ্বিতীয় অর্ধশতক পূর্ণ করেন সরফরাজ, এবার লাগে ৬৪ বল। জয়সোয়ালের দ্বিশতক পূর্ণ করার ওই ওভারশেষে অধিনায়ক ইনিংস ঘোষণা করেছেন ভেবে উঠে যাচ্ছিলেন দুই ব্যাটসম্যান, যদিও ‘বিস্মিত’ রোহিত ফিরিয়ে দেন তাঁদের। সেটি অবশ্য ১ ওভারের জন্যই, রেহানের করা ওই ওভারে ১টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা আসে—সবকটিই মারেন সরফরাজ। ওয়াসিমকে তাই ছাড়িয়ে যাওয়া হয়নি জয়সোয়ালের, তবে রাজকোটের দর্শকদের দাঁড়ানো অভিবাদনের মধ্যে মাঠ ছেড়েছেন ঠিকই। বিনোদ কাম্বলি (২১ বছর ৫৪ দিন) ও ডন ব্র্যাডম্যানের (২১ বছর ৩১৮ দিন) পর তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুটি দ্বিশতক পেলেন জয়সোয়াল (২২ বছর ৪৯ দিন)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৪৪৫ ও ৯৮ ওভারে ৪৩০/৪ ডি. (জয়সোয়াল ২১৪*, গিল ৯১, সরফরাজ ৬৮*; হার্টলি ১/৭৮, রেহান ১/১০৮, রুট ১/১১১)।
ইংল্যান্ড: ৩১৯ ও ৩৯.৪ ওভারে ১২২ (উড ৩৩, হার্টলি ১৬, ফোকস ১৬; জাদেজা ৫/৪১, কুলদীপ ২/১৯, বুমরা ১/১৮)
ফল: ভারত ৪৩৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রবীন্দ্র জাদেজা
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct