আসিফ রেজা আনসারী, কলকাতা, আপনজন: এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়ে বিব্রত প্রশাসন। এরই মধ্যে ভুল প্রশ্ন ও নিয়ম নানা মানার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার মুখে রাজ্যের মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত টেট পরীক্ষায় প্রশ্ন বিভ্রাট নিয়ে বিতর্কে জড়াল কমিশন। এই নিয়ে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন রাজ্যের মাদ্রাসা-টেট পরীক্ষার্থীদের একটা অংশ। প্রসঙ্গত, সপ্তম স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট বা এসএলএসটির মাধ্যমে রাজ্যের সরকার পোষিত মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করতে গত বছর মে মাসে অনলাইনে আবেদনপত্র জমা নেয় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে পরীক্ষা হয়। অভিযোগ, এনসিটিই-র গাইডলাইনকে উপেক্ষা করে প্রথমবারের জন্য দেশের কোনও টেট পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং রাখা হয়েছে। এ নিয়ে বহু পরীক্ষার্থী ডেপুটেশন দেয় কমিশনে। শুধু তাই নয়, জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখেই ছিল পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বিভাগের বিশেষ পরীক্ষা। একইদিনে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের দুটি পরীক্ষা। প্রথম পর্বে ছিল প্রাথমিক স্তরের (প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি) এবং দ্বিতীয়পর্বে নেওয়া হয় আপার প্রাইমারি বা উচ্চপ্রাথমিক স্তরের (৫ম থেকে ৮ম) পরীক্ষা। একইদিনে পুলিশ ও শিক্ষক নিয়োগের মতো দুটি সরকারি বিভাগের চাকরির পরীক্ষা ঘোষণার সিদ্ধান্তে সরব হন বিদ্বজন মহল থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠন। পরীক্ষার্থীদের একাংশ পরীক্ষা বয়কট করে। এরই মধ্যে নতুন করে বিতর্কে জড়াল মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্ন রাখার অভিযোগ, একইসঙ্গে নিয়ম না মানার কথা তুলে হাইকোর্টে মামলা হয়।
মামলাকারীদের দাবি, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের উভয় পরীক্ষাতেই প্রায় একগাদা প্রশ্ন ছিল সিলেবাস বহির্ভূত। আপার প্রাইমারির ক্ষেত্রে মোট ভুল প্রশ্নের সংখ্যা ২৭ থেকে ২৮টি এবং প্রাইমারির ক্ষেত্রেও সংখ্যাটা কমবেশি একই বলে দাবি পরীক্ষার্থীদের। মাদ্রাসা টেটের দুই বিভাগের প্রশ্নপত্রেই প্রথম ভাষা ও দ্বিতীয় ভাষা বিভাগের প্রশ্নের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি কমিশনের দেওয়া সিলেবাস। অভিযোগ, সিলেবাস তৈরির ক্ষেত্রে এনসিটিই-র গাইডলাইন মানা হলেও টেটের প্রশ্নপত্রে তা কোনোভাবেই অনুসরণ করা হয়নি। সিলেবাসে উল্লেখ থাকলেও শিশু মনস্তত্ত্ব থেকে একটিও প্রশ্ন করা হয়নি। এমন কি গল্প এবং কবিতা থেকে পৃথক পৃথক অংশ তুলে বোধপরীক্ষণমূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রেও সিলেবাস মানা হয়নি। পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, টেটে প্রায় ২৭টি প্রশ্ন নেওয়া হয়েছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের সিলেবাস থেকে। এতে রীতিমতো ধন্দে পড়ে যান পরীক্ষার্থীরা। এইসব বিষয়কে সামনে রেখে শুক্রবার মাদ্রাসায় চাকরিপ্রার্থীদের একটা অংশ আইনজীবী সামিম আহমেদ ও সব্যসাচী চ্যাটার্জির মাধ্যমে কলকাতা উচ্চআদালতের দ্বারস্থ হন। ওই দিনেই মহামান্য হাইকোর্ট তাদের মামলা দাখিলের আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলাকারী জাভেদ আখতার, মাসুদ করিম বা সেখ আরিফরা বলেন, “আমরা পরীক্ষার একদিন গড়াতে না গড়াতেই একাধিক গণ ই-মেল ও ডেপুটেশনের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে আসছি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে। দ্রুত তদন্ত ও সমাধানের কথা বলা হলেও অফিসিয়ালি কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করছে না কমিশন। তাই আমরা মামলার পথে হেঁটেছি।” জানা গিয়েছে, পৃথকভাবে দুই আইনজীবীর অধীনে কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ জন পরীক্ষার্থী। আরও ২০০ থেকে ৩০০ জন কেসে যুক্ত হতে চাইছেন বলে জানাচ্ছেন মামলাকারী জসিমদ্দিন খলিফা। উল্লেখ্য, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে বেকার যুবকদের চাকরির আশা নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কামাল হোসেন। তিনি রাজ্যের সংখ্যালঘু এবং মাদ্রাসার বিষয়ক নানা বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সম্প্রতি একটি তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিতে শূন্যপদ রয়েছে ৫১৭০। ফলে রাজ্যের ৬১৪টি মাদ্রাসা হিসেবে করলে গড়ে ৮টি করে শূন্যপদ রয়েছে প্রত্যেক মাদ্রাসায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct