নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: গত সোমবার ন্যাশনাল টেস্টেং এজেন্সি বা এনটিএ পরিচালিত জেইই মেন সেশন ১-এর ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরীক্ষায় আল-আমীন মিশনের বহু ছাত্রছাত্রী ৯৯ শতাংশেরও বেশি পার্সেন্টাইল নম্বর পেয়েছে। আর সার্বিক ফলাফলে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। আর এই সাফল্যের ধারকদের অধিকাংশই উঠে এসেছে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে।
উল্লেখ্য, জেইই মেন পেপার ১-এর পরীক্ষা ২৭, ২৯, ৩০, ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি এবং পেপার ২-এর পরীক্ষা ২৪ জানুয়ারি দেশ জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এনআইটি)-তে ভর্তির এই পরীক্ষায় প্রায় ১২ লক্ষ পরীক্ষার্থী বসেছিল।
সর্ব ভারতীয় এই পরীক্ষায় আল-আমীনের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান দখল করেছে হুগলি জেলার আরামবাগ থানার চাঁদুর গ্রামের মহ. সাহিদ। সাহিদ মিশনের নয়াবাজ শাখা থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় বসছে। সাহিদের আব্বা মহ. খাইরুল আনাম প্রাণী চিকিৎসক এবং মা সালেমা খাতুন গৃহবধূ। সাহিদের প্রাপ্ত পারসেন্টাইল নম্বর ৯৯.৮৯০৮৫৩৩। মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানার তৌফিক মামুদ মিশনের উমরপুর শাখায় সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০২২ সালে মধ্যমিকে ৯৬.৪% নম্বর পেয়ে পাস করে বর্তমানে খলতপুর শাখার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মাধ্যমিক পাস আব্বা মহ. আবদুস সাত্তার শ্রমজীবী মানুষ। তবুও তৌফিকের মা সুলতানারা খাতুন দক্ষতার সঙ্গে সংসার পরিচালনা করে চলেছেন। তৌফিকের এক দাদা তারিক মাহমুদ ও এক দিদি এসমিতা খাতুন মিশন থেকেই পড়াশোনা করেছে। দাদা বর্তমানে এমবিবিএস-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। দিদি নাসিং পড়ছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর প্রাক মুহূর্তে এই রেজাল্ট তৌফিককে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করেছে। তৌফিকের পারসেন্টাইল নম্বর ৯৯.৫৬৫১৬৫।
সফলদের তালিকায় একমাত্র ছাত্রী আঞ্জুমা দিলরুবা নদিয়া জেলার তেহট্ট থানার হাঁসপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। দিলরুবা পঞ্চম শ্রেণি থেকে মিশনের বাবনান শাখায় লেখাপড়া করেছে। ওই শাখা থেকেই ২০২১ সালে ৯৮.১৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করে। পরে একাদশ শ্রেণিতে আল-আমীনের মূল ক্যাম্পাস খলতপুরে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। ২০২৩ সালে ৯৭.৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মিশনের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে। উল্লেখ্য, রাজ্যস্তরে উচ্চ মাধ্যমিকে আঞ্জুমা দশম হয়ে নিজ পরিবারের সঙ্গে মিশনের নামও উজ্জ্বল করে। সেসময় এক সাক্ষাৎকারে আঞ্জুমা জানায়, ভবিষ্যতে আইআইটি-তে পড়ে ফিজিক্স নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী সে। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে প্রথম ধাপ ৯৬.৯৫০৩৮১৮ পারসেন্টাইল নম্বর অর্জন করল আঞ্জুমা। ফল প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়ায় সে জানায়, এপ্রিলে আবার জেইই (মেইন) এবং মে মাসে জেইই (অ্যাডভান্স)-এ সে বসবে। সেজন্য জোর কদমে প্রস্তুতিও নিচ্ছে সে।
পুরুলিয়া জেলার ঝালদা কোরাডিহ গ্রামের দর্জি মহ. ওয়াসিম রাজার সন্তান খলতপুর শাখার দানিশ সুগন্ধ ৯৯.২৯৮১৪৪৮ পারসেন্টাইল নম্বর পেয়ে সফল হয়েছে। মহ. মুস্তাফিজুর রহমান ২০২০ সালে খলতপুর ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়। ওই শাখা থেকেই মাধ্যমিকে ৯৫.১ শতাংশ নম্বর পায়। ২০২৪-এর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সে ৯৯.১৫৪৪৩৬ পারসেন্টাইল নম্বর পেয়ে সফল হয়েছে। বড় পরিবারের সন্তান শেখ মহসিন। মহসিন ছাড়াও তার এক দাদা ও বর্তমানে বিবাহিত এক দিদি মিলে মোট ৫ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে কৃষির উপর নির্ভরশীল এই পরিবারকে। কিন্তু তাতেও সন্তানদের লেখাপড়াকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন মহসিনের আব্বা-মা। মহসিন মাধ্যমিকে ৯৩.৭ শতাংশ নম্বর পায়। সে খলতপুর শাখা থেকে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। তার প্রাপ্ত পারসেন্টাইল নম্বর ৯৬.২০১৬৬১০। এছাড়াও এই শাখার মুর্শিদাবাদ জেলার সাহেবনগর গ্রামের মিশকাত আলম (পারসেন্টাইল নম্বর ৯৬.১২২৬৪৩৯), পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার দোকানী আবদুল মুখতার খানের সন্তান ফিরদৌশ আলম খান (পারসেন্টাইল নম্বর ৯৪.৫২১৪৪৯৭), মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লকের কাহার পাড়ার কৃষক পরিবারের মহ. মেহেবুব আলম (পারসেন্টাইল নম্বর ৯৪.৬২২২০৪১) প্রমুখের সাফল্য উল্লেখযোগ্য।
উত্তর দিনাজপুর জেলার করনদিঘি থানার কাদিরগঞ্জ গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান মহ. মাসুদ আলম মাধ্যমিকে ৯১% নম্বর পেয়ে পাস করে। মিশনের খলিশানী ক্যাম্পাস থেকে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। সে ৯০.৬৯৭৮৬৮৫ পারসেন্টাইল নম্বর পেয়ে সফল হয়েছে। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং তার পছন্দের বিষয়। এই শাখারই রামিম হাসান কাজিও সফল হয়েছে। তার প্রাপ্ত পারসেন্টাইল নম্বর ৮৬.৯৯৩২৫৭৬। রামিম কাজির বাড়ি হাওড়া জেলার বাগনান থানায়। ২০২২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মিশনের বাবনান শাখা থেকে ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করে। এবছর খলিশানী শাখা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস আব্বা মনজুর আহমেদ কাজি পেশায় বিএসএফ এবং গৃহবধূ মা রোজিনা খাতুন গ্রাজুয়েট। উলুবেড়িয়া শাখা থেকে ফারহান তানভির আলি দারুণ সাফল্য পেয়েছে। তার পারসেন্টাইল নম্বর ৯৪.৮৭৭২৫৬৬। বীরভূম জেলার সিউড়ির ফারহানের আব্বা-মা দুজনই শিক্ষক। মহ. আশরাফ আলি এবং শুকতারা বেগম উভয়েই স্নাতকোত্তর। ফারহান ২০২০ সালে মাধ্যমিকে ৯৬.৩% ও ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৪% নম্বর পায়। গল্পের বই পড়ার ও ক্রিকেট খেলার ভক্ত মহ. আরমান আনসারি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা। স্নাতকোত্তর মহ. আলাউদ্দিন আনসারি শিক্ষকতা করেন। মা সাইয়েদা ইয়াসমিন সুলতানা গৃহবধূ। মেধাবী আরমানকে তাঁরা আল-আমীনের উলুবেড়িয়া শাখায় ভর্তি করেন। আরমান পারসেন্টাইল নম্বর ৯৭.৫২০৪৫৪৬ পেয়ে তার আব্বা-মার স্বপ্ন সফল করেছে। আরও যারা ভালো ফল করেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সূর্যপুর শাখার সাহিল আহমেদ (৮৯.৮৫৮৭৮২৪ পারসেন্টাইল)।ছাত্র-ছাত্রীদের এই সাফল্যে মুবারকবাদ জানিয়েছেন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মেডিকেলে মিশনের সাফল্যের পরিসংখ্যানের পাশে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাফল্য তুলনায় কম হলেও ছেলেমেয়েদের সর্বভারতীয় এই সাফল্য অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে উৎসাহিত করবে। আল আমীন মিশন স্টাডি সার্কলের ডিরেক্টর দিলদার হোসেনও ছাত্র-ছাত্রীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct