নিজস্ব প্রতিবেদক, মুম্বাই, আপনজন: মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ে মুভমেন্ট অফ পিস অ্যান্ড জাস্টিস ফর ওয়েলফেয়ার (এমপিজে) এর জাতীয় কনভেনশন-২০২৪ সফলভাবে সম্পন্ন হল ১১ ফেব্রুয়ারি। এ বছর কনভেনশনের থিম ছিল ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট বা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। এই কনভেনশনের মূল লক্ষ্য ছিল উন্নয়নের কক্ষপথে সমাজের সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। এতে সভাপতিত্ব করেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক সেলিম ইঞ্জিনিয়ার সাহেব।বিভাজনমূলক জাতীয়তাবাদের উত্থান নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ঐক্য, সংহতি ও সমগ্র জাতির উন্নয়নের জন্য সাম্য, ইনসাফ বা সুবিচার, স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্বের মতো সাংবিধানিক নীতিমালা ও মূল্যবোধ বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।ভারতের মতো দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের তাৎপর্য উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠন এপিসিআর-এর সেক্রেটারি ওয়াসিক নাদিম বলেন, দেশে সুযোগ ও সম্পদের বণ্টনে বৈষম্য প্রকট।জামাআতে ইসলামী হিন্দের মহারাষ্ট্রের আমীর মোহাম্মদ ইলিয়াস ফালাহী সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান। জনকল্যাণকর রাষ্ট্র থেকে কর্পোরেট-বান্ধব রাষ্ট্রের রূপান্তর নিয়ে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে নেতা বাছাই করার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অরুণ কুমার ক্রমবর্ধমান কালো অর্থনীতির ব্যাপারে সতর্ক করেন এবং বিশেষ করে কৃষি ও ব্যাঙ্কিং সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাসের জন্য সমাজে কালো অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাবকে দায়ী করেন। চাকরি প্রার্থীদের উদ্বেগজনক তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি আর্থিক ক্ষেত্রে ইনসাফ পেতে সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন। সমাজকর্মী যোগীনি খানোলকর বলেন, সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতি মহিলাদের সমস্যা ও দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং তাদের মর্যাদার সাথে আপস করায়। এ প্রসঙ্গে তিনি নারীদের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ও তাদের অধিকার রক্ষার্থে নীতিগতভাবে হস্তক্ষেপ এবং এই প্রক্রিয়ায় নারীদের অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান। কৃষক নেতা বিজয় জওয়ানধিয়া সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর তীব্র নিন্দা করে বলেন, কৃষকদের উদ্বেগকে অবমাননা ও অমর্যাদা করা হচ্ছে। কৃষির কল্যাণে কর্পোরেটদের স্বার্থকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এও বলেন, সমাজতান্ত্রিক নীতি ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া উচিত। তাঁর মতে, সত্যিকার ইস্যু থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার অতীব নিন্দনীয়। সমাজকর্মী প্রতিভা শিন্ডে বলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করা হয়েছে। তাদের সমস্যা মোকাবিলা করতে এবং তাদেরকে সমাজে কোণঠাসা করে রাখার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান। এমপিজে মহারাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ সিরাজ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির অসম বণ্টন প্রকট। ক্ষুধা, স্বাস্থ্য, অপুষ্টি, বেকারত্বের মতো চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের মুখে শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার্থে এমপিজে-র মিশনকে নিশ্চিত করার উপযোগী রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি। এমপিজে-র ভাই প্রেসিডেন্ট মাহমুদ খান বৈষম্যের উদাহরণ দিয়ে বলেন, মানুষকে তাদের নিজের জুতো থেকে জল পান করতে বাধ্য করা হত। তাই তিনি সাম্য তালাশের ওপর জোর দেন এবং চরম আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সামাজিক অসাম্য-বৈষম্যের অবসান এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার উপর জোর দিয়ে, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দিকে সমষ্টিগত পদক্ষেপের জোরালো আহ্বান জানিয়ে এই কনভেনশন শেষ হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct