ড. আবু তাহের কামরুদ্দীন, আপনজন: একথা অনস্বীকার্য যে, হাই মাদ্রাসা বা মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মজবুত স্তম্ভ। কারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা এরপর থেকেই বাঁক নিয়ে নতুন এক দিশার দিকে ধাবিত হয়। লোকসভার নির্বাচনকে মাথায় রেখেই এ বছর পরীক্ষার দিনক্ষণ কিছুটা এগিয়ে এসেছে। এমনকি এগিয়ে এসেছে পরীক্ষা শুরুর সময়ও। এবছর অর্থাৎ ২০২৪-এ রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে আর শেষ হবে ২৯ ফেব্রুয়ারি আর পরীক্ষা শুরু হবে ৯:৪৫ মিনিট থেকে এবং চলবে বেলা ১ টা পর্যন্ত। রাজ্যে মোট ৬১৪ টি মাদ্রাসা রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৪০০টি মাদ্রাসা উচ্চ মাধ্যমিক। রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক সকল পরীক্ষার্থী এবং সেই সাথে মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা যাতে আরও স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয় এবং যেকোনও ধরনের বিভ্রান্তি রোধ করতে পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এবারে এনেছে একগুচ্ছ নিয়ম বিধি যা সকল পরীক্ষার্থী অভিভাবক অভিভাবিকা এবং পরীক্ষা পরিচালনার সাথে যারা যারা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত সকলেরই সেই নিয়ম নির্দেশগুলো সম্বন্ধে একটা স্বচ্ছ ধ্যান-ধারণা থাকা আবশ্যক।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার নিরাপত্তাকে আর ও বেশি করে সুনিশ্চিত করতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এবারে প্রশ্নপত্রে নতুন সুরক্ষার সংযোজন করেছে। নতুন এই ব্যবস্থায় প্রতিটি প্রশ্নপত্রের মধ্যে থাকছে আলাদা আলাদা ইউনিট কোড অর্থাৎ ক্রমিক নম্বর। শুধু তাই নয়, সেই ক্রমিক নম্বর থাকবে সিরিয়ালি। ২০২৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তরপত্রে আলাদা করে সিরিয়াল নম্বর লেখার জায়গা থাকবে। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর অবশ্যই প্রশ্ন দেখে সঠিকভাবে উত্তরপত্রের নির্দিষ্ট স্থানে ছয় বা সাত সংখ্যার ওই ইউনিক কোডটি প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে লিখতে হবে। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দুষ্টু চক্রান্তকে নিষ্ক্রিয় ও ব্যর্থ করতে এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রশ্নের গোপনীয়তা রক্ষার্থে সংসদের এই নয়া ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আগের বারের মতো এবারেও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার পুরো সময় ধরে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি। মোবাইল,স্মার্টওয়াচ এবং যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস পরীক্ষা কেন্দ্রে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মোবাইল,স্মার্ট ওয়াচ থেকে শুরু করে কোন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে কোন ছাত্র-ছাত্রী যাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ না করে তার জন্য থাকছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেকশন সিস্টেম। তাছাড়া কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই জন্য প্রতিটি পরীক্ষার ভেনুতে থাকবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুলিশি ব্যবস্থা এবং কঠোর নিরাপত্তা প্রটোকল। বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে কোন সমস্যা ও অসুবিধার সম্মুখীন না হতে হয় সেই জন্য রেল, মেট্রোরেল এবং শহর ও শহরতলির ছোট বড় যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কোন অবস্থাতেই অসৎ পথ অবলম্বন করে পরীক্ষার বিতরণী পার হওয়ার কু মতলব যেন কারও মাথায় না আসে। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের চিন্তার কোন কারণ নেই। তবে নতুন করে আর প্রস্তুতি নিতে না যাওয়াই ভালো। কারণ এতে মানসিক টেনশনই শুধু বাড়বে। পরীক্ষার দিনগুলোতে যাতে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে সেই জন্য সহজ পাচক খাদ্য খাবার গ্রহণ খুবই ফলপ্রদ হবে। সকলে যেভাবে দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছ এবং সেই প্রস্তুতির নিরিখে যেভাবে ভাবছ যে তোমাদের পরীক্ষা ভালো হবে সেই ভাবেই একেবারে চাপমুক্ত ও সৎ ভাবে এবং সমস্ত নিয়মাবলি মেনে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দেবে। তোমাদের সকলের পরীক্ষা ভালো হোক। সকলের জন্য আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল।
লেখক সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ
অনুলিখন: মতিয়ার রহমান, শিক্ষক আকড়া হাই মাদ্রাসা
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct