আপনজন ডেস্ক: হলদওয়ানির বানভুলপুরায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করার ফলে সৃষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশের প্রেক্ষাপটে রবিবার প্রায় ৩১৫টি মুসলিম পরিবার শহর ছেড়ে পালিয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ‘জবরদখল বিরোধী অভিযানের’ অংশ হিসেবে হালদওয়ানি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা ধ্বংস করার পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যাতে পাঁচ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, যাদের মধ্যে চারজন মুসলমান ছিলেন, পুলিশ প্রায় ১৪০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।সরকারি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যথেষ্ট প্রয়োগকারী পদক্ষেপের অংশ হিসাবে, জেলা প্রশাসন প্রভাবিত অঞ্চলে ১২০টি অনুমোদিত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে।সাম্প্রতিক অস্থিরতায় এসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসন ভাঙচুর করা যানবাহন এবং সম্পত্তিগুলির একটি রোস্টার সংকলনের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে, যাতে বিশৃঙ্খলার চিহ্নিত দাঙ্গাকারীদের কাছ থেকে ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া যায়।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বনভুলপুরা এলাকার বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।অভিযোগ উঠেছে, ভবন ভাঙার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের দমন করতে পুলিশও হিংসার আশ্রয় নিয়েছে। বর্ধিত কারফিউ ও পুলিশের ভয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো দ্রুত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।রবিবার সকালে বরেলি রোডে জিনিসপত্র নিয়ে হাঁটতে দেখা যায় পরিবারগুলিকে। পরিবহন সুবিধার অভাবে, লোকেরা লাল কুয়ানে পৌঁছানোর জন্য ১৫ কিলোমিটার হেঁটে যেতে বাধ্য হয়েছিল, সেখান থেকে তারা উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন শহরে যাওয়ার ট্রেন ধরেছিল।
সোমবার সকালে কারফিউ কবলিত বনভুলপুরা এলাকায় ফলমূল, শাকসবজি, দুধ, গ্যাস-সহ প্রচুর পরিমাণে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করে জেলা প্রশাসন।মহম্মদ ফুরকান বলেন, ‘আমি হলদওয়ানিতে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করি। বনভুলপুরায় অশান্তির পর পুলিশের কড়াকড়ি আরও বেড়েছে। তারা নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে এবং ভয়ে তারা আত্মীয়দের কাছে থাকার জন্য বরেলিতে পালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, পরিবহন সুবিধা না থাকায় পায়ে হেঁটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বনভুলপুরা এলাকার আরেক বাসিন্দা সালমান খান জানান, তিন সন্তান নিয়ে বাহেরী যাচ্ছেন। সেখানে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে থাকবেন বলে জানান তিনি।বনভুলপুরা এলাকায় মুসলিমদের প্রায় ৩১৫টি বাড়ি বন্ধ অবস্থায় হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সমস্ত বাসিন্দা তাদের বাড়ি খালি করে দিয়েছেন।সাম্প্রতিক হিংসার জেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আসা রামপুরের বাসিন্দা সেলিম জানিয়েছেন, তিনি পরিবারের সঙ্গে কাজের সন্ধানে হলদওয়ানিতে এসেছিলেন এবং বনভুলপুরায় একটি ভাড়া ঘরে থাকতেন।তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। সেলিম আক্ষেপ করে বলেন, তিনি আর হালদওয়ানিতে ফিরবেন না।তিনি বলেন, আমি অন্য কোথাও কম উপার্জন করব, তবে আমি শান্তিতে থাকব। এসএসপি প্রহ্লাদ নারায়ণ মীনা বলেন, পুলিশ ধৃত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, লুঠ, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, খুনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct