জয়দেব বেরা : বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল সমাজেই শিশু ও কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দেখা দিয়েছে।ভারতবর্ষের মত উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও এই সমস্যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।সম্প্রতি সময়ে কিশোর অপরাধ (Juvenile Delinquency)একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।শিল্পায়ন ও নগরায়নের অন্যতম কুফল হিসাবে এই কিশোর অপরাধের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।কিশোর অপরাধ বা কিশোর দুষ্ক্রিয়তা হল কিশোর -কিশোরীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধ বা আইন বিরোধী ও সমাজ বিরোধী কাজকর্ম।বর্তমান সময়ে নানান কারণে সমাজে কিশোর অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।পরিবেশ-পরিবারগত এবং অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি মূলত সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ এই অপরাধের সঙ্গে অনেক বেশি সংযুক্ত।এখন গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই প্রায়ই দেখা যায় কিশোর অপরাধের খবর।
এমনই একটি ভয়াবহ খবর চোখে পড়ল কিছু দিন আগে।খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায়(বুধবার,৭- ই ফেব্রুয়ারি,২০২৪ সাল)।যেখানে দেখা গেছে পুরুলিয়ার এক আবাসিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র/কিশোর স্কুলে ছুটি পাওয়ার আশায় ওই স্কুলের প্রথম শ্রেণির এক খুদে ছাত্রকে থেঁতলে খুন করেছে।এই ঘটনাটি সত্যিই খুব ভয়াবহ ও মর্মান্তিক একটি ঘটনা।তাই মনে প্রশ্ন জাগে, কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের আজকের এই যুব সমাজ তথা কিশোর সমাজ?কিশোর-কিশোরীরা বাড়িতে /বিদ্যালয়ে ছোটো ছোটো(চুরি,মারামারি, নেশাকরা প্রভৃতি) অপরাধ থেকে শুরু করে খুন ও ধর্ষণের মত নানান ধরনের বৃহৎ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।কিশোর-কিশোরীদের চিন্তা-ভাবনাগুলো দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।তারা নিজেদের অজান্তেই নানান ধরনের অপরাধ মূলক কাজে ধীরে ধীরে যুক্ত হয়ে পড়ছে।তাদের মধ্যে সঠিক সমাজিকীকরণ এর অভাব হয়ে যাচ্ছে।তাই কিশোর অপরাধকে প্রতিরোধ করতে হলে সমাজিকীকরণের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে,বিদ্যালয়ে সামাজিক মূল্যবোধ যুক্ত শিক্ষা প্রদান করতে হবে,বিশেষ করে শিশু কাউন্সেলিং এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।কারণ সঠিক সমাজিকীকরণ,কাউন্সেলিং ও সচেতনতাই এই কিশোর অপরাধকে হ্রাস করতে পারে।দেখা গেছে,অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি, বিভিন্ন নেশা গ্রহণ,গেম খেলা,শাসনের অভাব এবং হিংসাত্মক সিনেমা বা টিভি সিরিয়াল দেখা প্রভৃতির ফলে কিশোর -কিশোরীদের মনের মধ্যে এক “Self Conflict” বা ‘Personal Disorganization’ এর মত মনোভাব এর সৃষ্টি হচ্ছে।এর ফলে সামাজিক এবং মানসিক বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে। তাই কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রোপার গাইডেন্স প্রদান করতে হবে,নানান বিষয়ে বিভিন্ন সমাজ সচেতন মূলক ক্যাম্প ও সেমিনারের আয়োজন করতে হবে,প্রত্যেক স্কুলে-ব্লকে এবং জেলায়-জেলায় ‘শিশু কাউন্সেলিং’ এর সেন্টার বৃদ্ধি করতে হবে।মূলত শিশুদেরকে কাউন্সেলিং করতে হবে প্রত্যেক সপ্তাহে-সপ্তাহে।এর ফলে তাদের তথা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে।তারা সমাজিক ও মানসিকভাবে সুস্থও থাকবে।এক কথায়,”সোশ্যাল ক্লিনিক” চাই প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।এর পাশাপাশি প্রত্যেক বাবা-মা কেও সর্বদা নিজের সন্তানদেরকে পর্যবেক্ষণ করে রাখতে হবে,সবসময় তাদের শারীরিক-সামাজিক ও মানসিক যত্ন নিতে হবে, শাসনের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের এই সমস্ত বিষয়ে ভালো করে বুঝিয়ে বলতে হবে ,ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান আর খারাপ কাজে শাসনও করতে হবে।অর্থাৎ একজন বাবা-মা’কেও শিশুর প্রাথমিক কাউন্সেলর হতে হবে।সচেতনতা,সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা এবং শিশু কাউন্সেলিং এর উপর যদি সরকারি-বেসরকারিভাবে গুরুত্ব দেওয়া যায় তাহলে এই কিশোর অপরাধকে কিছুটা হলেও হ্রাস করা যেতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct