আপনজন ডেস্ক: জীবন আর মৃত্যু এই উপত্যকায় মিলেমিশে একাকার। ওদের যেনো কোথাও কেউ নেই। ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কথিত মানবিক বিশ্ব। মানবতার ত্রাতারা অন্ধ। দুয়ার বন্ধ করে আছেন জাতিসংঘে সভ্যতার বাণী আওড়ানো ‘দেবদূতরা’ও। বোমার পর বোমা পড়ছে। পুড়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, ঝলসে যাচ্ছে দেহ। ঘরে খাবার নেই, তৃষ্ণায় ঠোঁট ফেটে একাকার, সুপেয় পানিও বিরল হয়ে উঠেছে। রোগের আক্রমণ আর বোমাক্রান্ত শরীরে সুস্থতা আনার মাধ্যম হাসপাতালগুলোও বন্ধ। দিনে বোমার ধোঁয়ার ঝাপসা দৃষ্টির সামনে রাত হাজির হয় নিকষ আঁধার নিয়ে। তবুও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দারা বাঁচার লড়াই করছে। আর সেই লড়াই এতোটাই কঠিন যে তাকে কেবল মানবেতর বললেও ঠিকঠাক পরিস্থিতি বোঝা যাচ্ছে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া গাজার বাসিন্দারা ভুগছেন তীব্র সংকটে। অনেকের দিনের দিন কাটছে কোনো রকম খাবার ছাড়াই। ইসরায়েলি সেনাদের আগ্রাসনের কারণে জাতিসংঘসহ অন্য সংস্থাগুলোও সহায়তা সামগ্রী পৌঁছে দিতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে গাজার বাসিন্দাদের অনেকেই পশু খাদ্য খেয়ে জীবনযাপন করছে। তবে সেই খাদ্যও খুব একটা তাদের হাতে নেই।গাজার বাসিন্দারা একটু সুপেয় পানির আশায় মাটিও খুড়ছে। গোসল করার পানিটুকুও নেই তাদের কাছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার তরুণ ও শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। ১৫ শতাংশ কমবয়সী মানুষই ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। জাতিসংঘের ত্রাণের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা সংস্থা জানিয়েছে, গাজার অর্ধেকেরই বেশি সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না। পথে এসব সহায়তা বহর আটকে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সংস্থাটির মতে উত্তর গাজার তিন লাখের বেশি মানুষ সহায়তার অভাবে দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। যদিও ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী দাবি করছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে বিবিসি গাজার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে, মানুষ বাধ্য হয়ে বাঁচার জন্য পশু খাদ্য খাচ্ছে। এমনকি সেই খাবারও ফুরিয়ে গেছে। বাজারেও কোনো ধরনের খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। মজুদ করা সব ধরনের শুকনো খাবারও প্রায় শেষ। আবার অনেকে শুধু চাল খেয়েও দিন পার করছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপি বিবিসিকে জানিয়েছে, গাজায় খাদ্য সহায়তা বহনকারী পাঁচটি বহরের চারটিই আটকে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct