এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: বহুলালোচিত জ্ঞানবাপী মসজিদের মর্যাদা রক্ষার দাবিতে শুক্রবার কলকাতার রাজাবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মহামিছিল ও রাণী রাসমণি এভিনিউতে প্রতিবাদ সভা করলো রাজ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ । সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ও রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী’র ডাকে ওই কর্মসূচিতে কয়েক হাজার মানুষ শামিল হন। এ দিন কলকাতার মিছিল ও সমাবেশ থেকে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার ও উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন । তিনি বলেন, ভারতের সংবিধান আমাদের কাছে পবিত্র । সংবিধানের বিরোধিতা করা, সংবিধানের সাথে গাদ্দারি করা চলতে পারে না । আমি মনে করি ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর থেকেও সংবিধানের উচ্চতা বেশি। জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে উত্তর প্রদেশ সরকারের উচিত ছিল সর্বদলীয়ভাবে বৈঠক করা। অন্যান্য দলের সাথে কথা বলা। রাতের অন্ধকারে কাগজপত্র ভুলভাল তৈরি করে তারা বিচারকের সামনে পেশ করেছেন। বিচারকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ নয় । আমাদের অভিযোগ উত্তর প্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে।’ সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, আজ ক্ষমতায় আছেন বলে মসজিদ ভেঙে পুজোপাঠ করবেন? এটা ভারতের সংবিধান বিরোধী। জ্ঞানবাপী মসজিদে পুজোপাঠ বন্ধ করে মুসলিমদের ফেরত দিন’ বলেও মন্তব্য করেন। ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতিরোধে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে সভার বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা, বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তারা সংবিধান রক্ষারও আহবান জানান। ২০২১ সালের আগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপী মসজিদের দেওয়ালে দেব-দেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। ৩১ জানুয়ারি জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে একটি বেসমেন্টে পুজো-অর্চনার রায় দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের বারাণসীর জেলা আদালত। এরপর মুসলিমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন । কিন্তু ইলাহাবাদ হাইকোর্ট জ্ঞানবাপী মসজিদের দক্ষিণের ‘ব্যাস কা তহখানা’ নামে পরিচিত বেসমেন্টে উপাসনার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে। ওই ইস্যুতে মুসলিমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তার জেরেই জ্ঞানবাপী মসজিদের মর্যাদা রক্ষার দাবিতে কলকাতার রাজপথ থেকে মাওলানা ও মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে সোচ্চার হন বাংলার মুসলিমরা। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে ‘কেন্দ্রীয় সরকার অত্যাচার বন্ধ করো’, ‘কেন্দ্রীয় সরকার অত্যাচার-অবিচার বন্ধ করো’, ‘জ্ঞানবাপী মসজিদে পুজোপাঠের গাদ্দারি চলছে না, চলবে না’, ‘জ্ঞানবাপী মসজিদ থেকে পুজোপাঠ হঠাও’ ‘স্বাধীন ভারতের জাতীয় ঐক্য ধ্বংস হতে দিচ্ছি না দেবো না’, ‘হিন্দু-মুসলিম-শিখ-ঈসায়ী আমরা সবাই ভাই ভাই’ ‘হিন্দুত্ববাদী দেশদ্রোহী শক্তি নিপাত যাক’ ইত্যাদি। মিছিলে অংশ নেওয়া উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সম্পাদক আরিফ রেজা বলেন, দেশের শান্তি রক্ষার্থে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আয়োজিত ওই আন্দোলন কর্মসূচিতে রাজ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সম্পাদক মুক্তি আব্দুস সালাম, মাওলানা ইমতিয়াজ, মুফতি এমদাদুল্লাহ সহ রাজ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ দিন উপস্থিত ছিলেন। রামের জন্মস্থান নিয়ে আদালতের রায়ের পরে এটি দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল, যেখানে মহাভারতের ‘লক্ষাগৃহ’ থাকার অনুমানে সুফির কবরস্থানকে বেহাত করা হল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct