আপনজন ডেস্ক: ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রকে হারিয়ে আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের ফাইনালে উঠেছিল আইভরিকোস্ট, সেবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল তারা। এবারও কি সেটাই হতে চলেছে? গত রাতে সেই গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রকে হারিয়েই যে ৯ বছর পর আবারও নেশনস কাপের নাম লেখাল আইভরিকোস্ট। আবিদজানে অলিম্পিক স্টেডিয়াম অব এবিম্পেতে আইভরিকোস্টকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার নায়ক ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ সেবাস্তিয়ান হলার। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই স্ট্রাইকার মরণব্যাধি ক্যানসার জয় করে গত বছর মাঠে ফিরেছেন। ৬৫ মিনিটে তাঁর মিস-হিট শট স্বাগতিকদের আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে।রোববার আবিদজানেই ফাইনালে আইভরিকোস্টের প্রতিপক্ষ নাইজেরিয়া। বুয়াকেতে গতকাল রাতে আগের সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে আফ্রিকার ‘সুপার ইগল’রা। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ ১-১ গোলে সমতায় ছিল।আইভরিকোস্ট এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো নেশনস কাপের ফাইনালে উঠল। নাইজেরিয়ার জন্য এটা হতে চলেছে অষ্টম ফাইনাল। তবে দুই দল এবারই প্রথম শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে চলেছে। দল দুটি এবারের আসরে একই গ্রুপে পড়েছিল। গ্রুপ পর্বের সে ম্যাচে আইভরিকোস্টকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল নাইজেরিয়া। স্বাগতিক আইভরিকোস্ট এরপর ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের চেয়ে ৩৯ ধাপ পিছিয়ে থাকা ইকুয়াটোরিয়াল গিনির কাছে ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়।টানা দুই হারে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ার শঙ্কায় পড়েছিল আইভরিকোস্ট। দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের (এফআইএফ) কর্মকর্তারা ধরেই নিয়েছিলেন, তাদের দল নকআউট পর্বে উঠতে পারবে না। তাই ইকুয়াটোরিয়াল গিনির কাছে বাজেভাবে হারের পরদিনই দলটির ফরাসি কোচ জঁ লুই গ্যাসেকে বরখাস্ত করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইভরিয়ান কিংবদন্তি দিদিয়ের দ্রগবার একসময়ের সতীর্থ এমার্স ফায়েকে। সেই ফায়ের হাত ধরেই শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালের বাধা টপকে ফাইনালে পৌঁছে গেল দলটি।
২০২৩ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে দেশটিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাজনৈতিক কলহও বেড়েছে। দেশটির সরকার ‘এম২৩’ নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সশস্ত্র বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সংহতি জানাতে কাল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ফুটবলাররা জাতীয় সংগীত গাননি। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব ফুটবলাররা অবশ্য মাঠে পড়তে দেননি। প্রতিপক্ষের মাঠে প্রথম ১০ মিনিট তাঁরাই বরং আধিপত্য বিস্তার করে খেলছেন।তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের গুছিয়ে নেয় আইভরিকোস্ট। বিরতির আগে দারুণ দুটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন হলার ও ফ্রাঙ্ক কেসি। তবে হলার তাঁর হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। আর এ মৌসুমেই বার্সেলোনা ছেড়ে সৌদি ক্লাব আল আহলিতে যোগ দেওয়া কেসির শট পোস্টে লেগে ফেরে।৬৫ মিনিটে ঠিকই এগিয়ে যায় আইভরিকোস্ট। ম্যাক্স-আলাইন গ্রাদেলের ক্রস থেকে হলারের ভলি বাড়তি বাউন্স করে প্রতিপক্ষ গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে জড়ায় জালে। হলার যে শটটি নিতে চেয়েছিলেন, সেটা ঠিকঠাক নিতে পারেননি। কিন্তু সেটা আইভরিকোস্টের জন্য ‘শাপেবর’ হয়ে ওঠে। দলকে ফাইনালে তোলা গোলটা এই আসরে ডর্টমুন্ড স্ট্রাইকারেরও প্রথম গোল। বুয়াকেতে আগের সেমিফাইনালে নির্ধারিত সময়ে দুটি গোলই হয়েছে পেনাল্টি থেকে। ৬৭ মিনিটে সফল স্পট কিকে নাইজেরিয়াকে এগিয়ে দেন উইলিয়াম ত্রুস্ত-ইকোং। ৯০ মিনিটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচে ফেরায় টেবোহো মোকেনার পেনাল্টি গোল। এরপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে ২৫ মিনিটে নিজেদের ডি বক্সের ঠিক বাইরে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন দক্ষিণ আফ্রিকার মিডফিল্ডার গ্র্যান্ট কেকানা। তবে প্রতিপক্ষের চেয়ে একজন বেশি নিয়ে খেলার সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি নাইজেরিয়া।শেষ পর্যন্ত খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি শট ঠেকিয়ে নায়ক বনে যান নাইজেরিয়ার গোলকিপার স্ট্যানলি এনওয়াবালি। দলের শেষ শটে লেস্টার সিটি স্ট্রাইকার কেলেচি আইহিয়ানাচো বল জালে পাঠাতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে নাইজেরিয়া।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct