এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও আগামী লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জনমোহিনী রাজ্য বাজেটে একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করল বৃহস্পতিবার। এদিন বিধানসভায় বাজেট বক্তৃতা পেশ করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৩,৬৬,১১৬ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বাজার থেকে ঋণের পরিমাণ ৭৩,০০০ কোটি টাকা (আনুমানিক ৭৮,৯৪৬.৪৯ কোটি টাকা থেকে সংশোধিত)। আগামী অর্থবর্ষে এই বাজার থেকে ৭৯,৭২৭ কোটি টাকা তোলার আশা করছে সরকার।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বাংলার ঋণের বোঝা বেড়ে দাঁড়াবে ৬,৯৩,২৩১.৬৬ কোটি টাকা।
রাজ্যের অর্থ দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, মোট মূলধনী ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হয়েছিল। ৬,২,১৭০.৮৯ কোটি (২০২৩-২৪ সালের সংশোধিত অনুমান) এর মধ্যে ৩০,৬৩১.৪২ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে বাংলার মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬,৩০,৭৮৩.৫০ কোটি টাকা। ২০১১ সালে যখন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়, তখন রাজ্যের ঋণের পরিমাণ ছিল এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। তার পর থেকে ১৩ বছরে রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য আরও দুর্বল হয়েছে।
এদিন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্যের যে বাজেট পেশ করেন তাকে জনমোহিনী বলা যায়। রাজ্যের কর্মচারীদের জন্য অতিরিক্ত চার শতাংশ মহার্ঘ ভাতা, মৎস্যজীবীদের জন্য পৃথক তহবিল, লক্ষ্মী ভান্ডারের অধীনে মহিলাদের আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি, শিক্ষানবিশ শিক্ষানবিশ, কারিগর এবং তাঁতিদের জন্য ন্যূনতম ৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি ঘোষণা ছাড়াও কর্মশ্রী নতুন প্রকল্প চালু হচ্ছে বেকারদের জন্য। ১০০ দিনের কাজ করে যারা টাকা পায়নি তাদের জন্য কর্মশ্রী প্রকল্প। ৫০ দিনের কাজের দিবস তৈরি রাজ্যের। ১০০ দিনের শ্রমিকের বকেয়া মেটাতে রাজ্য বাজেটের ৩৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অবসরকালীন সময়ে যে পুলিশরা ২ বা ৩ লক্ষ টাকা অবসরকালীন সুবিধা পেতেন তারা সেটা ৫ লক্ষ টাকা করে পাবেন।
বাজেটে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ বিভাগে ব্যয় বরাদ্দ ২.২৭০.৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ। সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য ৫.৫৩৯.৬৫ কোটি টাকা। এবার মাধ্যমিক পাশের পরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেই মিলবে স্মার্টফোন বা ট্যাব। রাজ্যের মহিলাদের কাছে জনপ্রিয় প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ভাতা বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। সাধারণ মহিলাদের জন্য ৫০০ থেকে বেড়ে হল ১০০০ টাকা। এসসি এসটি ক্ষেত্রে তা বেড়ে হল ১২০০। সেই সঙ্গে ভিলেজ, গ্রিন, সিভিক পুলিশদের ভাতাও ১ হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আগামী মে মাস থেকে বর্ধিত এই ভাতার অঙ্ক কার্যকর করা হবে। সেই সঙ্গে বছরে ২ মাসের জন্য মৎস্যজীবীদেরও ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য বাজেটে।আগামী অর্থবর্ষে, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে সর্বাধিক বরাদ্দ রয়েছে ১৪,৪০০.০৫ কোটি টাকা। কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে, যা মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক বৃত্তি প্রদান করে তার জন্য ১৩৭৪.৫০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে।টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজ্য বাজেটে ‘পথশ্রী-৩’ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই প্রকল্পে আরও ১২ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তার সংস্কার ও নির্মাণ করা হবে। বরাদ্দ করা হয়েছে ৩,৮৬৮ কোটি টাকা।
৬টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক করিডোর গড়ে তোলা হচ্ছে। ডানকুনি থেকে খড়গপুর রঘুনাথপুর, কল্যাণী ডানকুনি, ডানকুনি তাজপুর, পানাগড় কোচবিহার, খড়গপুর মুর্শিদাবাদ।
আরও একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে যার নাম হল সমুদ্রসাথী প্রকল্প। মৎস্যজীবীরা নানা প্রতিকূলতারে মধ্যে সমুদ্রে যান মাছ ধরতে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই দুই মাস প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে পাবেন। এর ফলে প্রায় ২ লক্ষ মৎস্যজীবী উপকৃত হবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct