আপনজন ডেস্ক: গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশর-কাতারে আলোচনায় জোর দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। মঙ্গলবার তিনি মিশর ও কাতার সফর করেন। সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা বাড়ানোর চাপের সাথে গাজায় নতুন করে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ব্যাপারটিতেও চাপ অব্যাহত রেখেছেন ব্লিঙ্কেন। এ নিয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, আমরা কোনো সাফল্য পাব কিনা, পেলেও সেটা কখন পাব সে বিষয়ে আগে থেকে কিছু বলা অসম্ভব। কারণ, বল এই মুহূর্তে হামাসের কোর্টে। ব্লিনকেন-মোহাম্মদ বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ব্লিনকেন এবং যুবরাজ সংকটের ‘একটি স্থায়ী সমাধান’ অর্জনের জন্য আঞ্চলিক সমন্বয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় মানবিক চাহিদা পূরণ এবং সংঘাতের আরো বিস্তার রোধ করার গুরুত্বের ওপরও জোর দিয়েছেন। এদিকে, ব্লিনকেনের এবারের সফরে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায় রয়েছেন বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনিরা। তাদের আশা, রাফাহ তে ইসরায়েলের অভিযান শুরুর আগেই যুদ্ধবিরতি হবে।
গাজার প্রায় অর্ধেক ফিলিস্তিনি বর্তমানে মিশর সীমান্তবর্তী অঞ্চল রাফাহ তে আশ্রয় নিয়েছে। রাফাহ গাজার দক্ষিণাংশে অবস্থিত। দক্ষিণের সবচেয়ে বড় নগরী খান ইউনিস ঘিরে ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল রাফাহ তেও যেকোনো সময় হামলার হুমকি দিয়ে রেখেছে। গতবছর ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে প্রায় ১২শ মানুষকে হত্যা করে। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরো প্রায় ২৪২ জনকে। ওই দিন থেকে গাজায় তীব্র আকাশ হামলা শুরু করে ইসরায়েল। কয়েক সপ্তাহ পর শুরু হয় তাদের স্থল অভিযান। ইসরায়েলের স্থল বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে অভিযানের পর মধ্যাঞ্চল হয়ে এখন মূলত দক্ষিণের খান ইউনিসে আক্রমণ করছে। প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি এখন তাদের সর্বশেষ আশ্রয় রাফাহ তে অবস্থান করছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিশর ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং সেখান থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে ওই প্রস্তাব হামাস নেতাদের কাছেও পাঠানো হয়েছে এবং হামাস নেতারা প্রস্তাবটি মূল্যায়ন করে দেখার কথা জানিয়েছেন। এখনো তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে বলেছে, কোনো ধরণের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে তারা গাজায় চারমাস ধরে চলা ইসরায়েলি অভিযানের সম্পূর্ণ অবসানের বিষয়ে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি চান। গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ছাড়াও ব্লিনকেনের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের আরেক পরিকল্পনায় সমর্থন পাওয়া। সেটি হচ্ছে: গাজা পুনর্গঠন, পরিচালনা এবং সর্বোপরি একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। যে রাষ্ট্রের ধারণা গাজা যুদ্ধে শুরুর পর প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।ঊর্ধ্বতন মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা একটি মানবিক বিরতিতে উপনীত হতে পারলে, এমন একটি অবস্থানে যেতে চাই, যাতে তাড়াতাড়িই অন্য দিকগুলোতে আলোকপাত করতে পারি। মধ্যপ্রাচ্যে আর কোথাও যাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে না পড়ে সে চেষ্টাও করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ইরানি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর কয়েকদিনের মার্কিন হামলার পর। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্তত ৪০ দিনের জন্য লড়াইয়ে বিরতির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে হামাস যোদ্ধারা তাদের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিবে। তারপর ইসরায়েলি সেনা এবং তাদের মৃতদেহ হস্তান্তর করবে।গাজায় চলমান যুদ্ধে এর আগে মাত্র একবার যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। সেটি ছিল মাত্র ১ সপ্তাহের জন্য। এবার ফিলিস্তিনিরা চাইছে যুদ্ধ বন্ধ হোক।গাজার দেইল আল বালার জাতিসংঘ স্কুল থেকে ম্যাসেজিং অ্যাপে ৪ সন্তানের জনক ইয়েমেন হামাদ বলেন, আমরা এই যুদ্ধের অবসান চাই। আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই। এই এলাকাটি ওইসব এলাকারই একটি যেখানে ইসরায়েলের ট্যাংক এখনো অগ্রসর হয়নি। এলাকাটি এ মুহূর্তে হাজার হাজার উদ্বাস্তু মানুষে পূর্ণ হয়ে আছে।তিনি বলেন, আমরা যা করি তা হচ্ছে, ছোট রেডিওতে খবর শুনি এবং ইন্টারনেটে চোখ রাখি। আশা নিয়ে থাকি। আমরা আশা করি ব্লিনকেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলবেন, যথেষ্ট হয়েছে। আর আমাদের হামাস গোষ্ঠীও জনগণের স্বার্থে সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আশা করি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct