নকীব উদ্দিন গাজী, কাকদ্বীপ, আপনজন: শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়েই জীবনের বড় পরীক্ষায় বসল কাকদ্বীপের সঞ্চিতা গিরি, সুজয় দাস ও মুক্তা দাসেরা। তিনজনই কাকদ্বীপের অক্ষয় নগর জ্ঞানদাময়ী বিদ্যাপীঠের পড়ুয়া। এবছর তাদের মাধ্যমিকের সিট পড়েছে অক্ষয় নগর কুমোরনারায়ণ হাই স্কুলে। অক্ষয় নগর গ্রামের বাসিন্দা সঞ্চয়িতার উচ্চতা মেরে কেটে এক থেকে দেড় ফুট। ওজন ১৫ কিলোগ্রামের মতন। জন্ম থেকেই অসুখ-বিসুখে জর্জরিত। অভাবের সংসারে যথাযথ চিকিৎসাও মেলেনি। তবু অদম্য জেদে সে এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে অন্যান্য স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীদের মতনই। সঞ্চয়িতার বাবা পেশায় দিনমজুর দিন আনে দিন খায় তারমধ্যেই মেয়ের এই অদম্য ইচ্ছা জন্য বাবা যতটুকু সামর্থ্য সবটাই দিয়েই মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সঞ্চয়িতা দাদা কোলে বা মার কোলে করেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাচ্ছে সঞ্চয়িতা কারণ সে চলাফেরা করতেই পারেনা সঞ্চয়িতার ইচ্ছা আর পাঁচটা স্বাভাবিক ছাত্র-ছাত্রীদের মতনই তিনি পরীক্ষা দেবেন সেই মতন কোন সাহায্য কারোর থেকে নিতে চান না। সঞ্চয়িতা পড়াশোনার পাশাপাশি খুব সুন্দর ড্রইংও করে এবারে জেলায় প্রতিবন্ধীদের অংকন প্রতিযোগিতায় সে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সঞ্চিতা চায় পড়াশোনার পাশাপাশি বড় হয়ে সে চিত্রশিল্পী হবে।অন্যদিকে কাকদ্বীপের বাসিন্দা ছাত্রী মুক্তা দাস, মুখ ও বধির। ছোটবেলাতেই এই প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়ে তার। অনেক চিকিৎসা করেও মেলেনি কোন সুরাহা। মেয়ের লেখাপড়া নিয়ে সংশয় ছিল পরিবারের লোকজনের। তবে হাল ছাড়েনি মুক্তা। পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে নিজের উদ্যোগেই। সেও এবার স্বাভাবিকের মতোই পরীক্ষা দিচ্ছে জীবনের বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। অন্যদিকে মুক্তার কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হলেও হাতের লেখা নাকি অত্যন্ত সুন্দর। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা বলেন মুক্তা খুব সুন্দর লেখে যথেষ্ট হাতের লেখা মান আছে এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষার মুক্ত অনেক ভালো ফল করবে এমনটাই আশাবাদী স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাসুজয় দাস জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ হাঁটাচলা করতে পারেনা। লাঠি ধরে চলাফেরা করতে হয়। ছোট থেকেই স্নায়ুর সমস্যা। তিনবার অস্ত্র প্রচার হয়েছে। সুজয়ের বাবা পেশায় একজন মৎস্যজীবী। অনেক কষ্ট করে অভাবের মধ্যেই পড়াশোনা করতে হয়েছে সুজয় কে। কিন্তু তার মধ্যেও জীবনের অদম্য জেদের কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা।তবে এই বিষয়ে অক্ষয় নগর জ্ঞানদাময়ী বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক জানায় আমরা গর্বিত তাদের এই অদম্য ইচ্ছার কাছে। আর পাঁচজনের মতোই তারা স্বাভাবিকের মতো পরীক্ষা দিচ্ছে এবং আশানুরূপ ফলও করবে । স্কুলের মান উজ্জ্বল করবে এই তিন ছাত্র ছাত্রী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct