আপনজন ডেস্ক: মাধ্যমিকের ইংরেজি প্রশ্নপত্রের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল। শনিবার পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরই রাজ্যের মধ্য শিক্ষ পর্ষদ পরিাচলিত মাধ্যমিক পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নপত্রের কথিত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এবারের মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রে বার কোড দেওয়া হয়েছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ইংরেজি প্রশ্নপত্রে বার কোডে লাল কালি দিয়ে দাগানো হলেও তা খতিয়ে দেখে সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর ১২ জন পরীক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের বাকি পরীক্ষায় বসতে নিষেধ করা হয়েছে এবং আগের দিনের বাংলা প্রশ্নপত্রও বাতিল করা হয়েছে।
শুক্রবার বাংলা প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ায় একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে আরও দুই পরীক্ষার্থীকে।
এনায়েতপুর হাইস্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ৪৫২জন। সেখানে সিট পড়েছে গোপালপুর হাই স্কুলের ছাত্রদের। তার মধ্যে থেকে ৭ জন এবং ভগবানপুর কেবিএস হাইস্কুলের ৪ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও জলপাইগুড়িতে ময়নাগুড়ির আমগুড়ি রামমোহন হাই স্কুলের এক ছাত্রের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, যে ১২ জন পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এদিন মামলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১১ জন মালদা জেলার এনায়েতপুর হাইস্কুল ও গয়েশ্বরী পিয়ারিভূষণ বিদ্যানিকেতনের এবং একজন জলপাইগুড়ি জেলার আমগুড়ি রামমোহন হাইস্কুলের।
এছাড়াও বর্ধমানের কাটোয়া ৩ সেক্টরের শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাপিঠে পরীক্ষা দিচ্ছিল কাশীরাম দাস হাইস্কুলের ছাত্ররা। সেখানে একজন পরীক্ষার্থীর থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তার সঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুরের বললার রাজকিশোরী হাই স্কুলের একজন এবং মালদহের পাঁচ কালিতলা হাইস্কুলের একটি ছাত্রের থেকেও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় বলে জানা গিয়েছে। তাদেরও এদিনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তবে পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, পরীক্ষা শুরুর পর যে ছবি সামনে এসেছে, সেটাকে ফাঁস বলা যায় না। তারা পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে মোবাইল ফোন দিয়ে ইংরেজি প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করতে চাই তবে তাদের ক্যারিয়ারকে ঝুঁকিতে না ফেলে। তাই আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনব না।
রামানুজ আরও বলেন, কিছু মানুষ রাজ্য সরকারকে কালমালিপ্ত করতে এবং পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে বিঘ্ন করতে পরীক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। আমরা এই ধরনের বিনাশমূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি জানান, গয়েশ্বরী ভবন বিদ্যানিকেতন স্কুলের ২৪ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে কিছুদিন আগেই কোর্টের নির্দেশ এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ফাইন দিয়ে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। তার সঙ্গে এই পরীক্ষা শুরুর পর এই প্রশ্ন প্রকাশ্যে চলে আসার ঘটনাকে “উদ্দেশ্য প্রণোদিত” বলেই মনে করছেন পর্ষদ সভাপতি। প্রসঙ্গত, এই বছর মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রশ্ন ফাঁস রুখতে কিউআর কোডের ব্যাবস্থা করা হয়েছে । প্রতিটি প্রশ্নেপত্রে রয়েছে এই কিউআর কোড ৷ সেটি স্ক্যান করলেই বেরিয়ে যাবে কে এই প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু ইংরাজি প্রশ্নের ক্ষেত্রে এই কিউআর কোডকে লাল দাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তাতে অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি।
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রত্য বসু দাবি করেন, চলমান পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে বিঘ্ন ঘটাতে কিছু লোক মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, এই প্রচেষ্টা সফল হবে না এবং রাজ্যকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। তারা পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের ২,৬৭৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর আনুমানিক ৯,২৩,০৪৫ পরীক্ষার্থী তাতে অংশ নিচ্ছে।