নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: এমজিএনআরইজিএস সহ মূল কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল প্রত্যাখ্যানের প্রতিবাদে শুক্রবার কলকাতায় দু’দিনের ধর্না শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ২০২৪-২৫ সালের অন্তর্বর্তী বাজেটকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের “অন্তিম” (শেষ) বাজেট বলে অভিহিত করেছেন, যা ইঙ্গিত দেয় এই বছর লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া দল পরাজয়ের দিকে এগোবে। কেন্দ্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ‘বকেয়া’র দাবিতে শুরু হ্রওয়া ধর্নায় মমতা বলেন, এটা অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট নয়, ‘অন্তিম’ বাজেট।উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ২০১১ সালে প্রথমবার তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর সরকার কেন্দ্রীয় তহবিল ব্যবহারের বিষয়ে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে। মমতা বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে, বাম আমলে যা ঘটেছে, তার দায় আমরা কেন নেব?মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সহকর্মী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলা কী পাপ করেছে? প্রতিবাদস্থলের সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন।তৃণমূল কংগ্রেস চেয়ারপার্সন বলেন, এমজিএনআরইজিএস-এর অধীনে কাজ করা ২১ লক্ষ শ্রমিককে গত দু’বছর ধরে কেন বেতন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন দেওয়া একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং যারা তহবিল অস্বীকার করেছে তাদের কারাগারে থাকা উচিত।মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে তিনি দু’দিন ধর্নায় থাকবেন এবং তারপরে যুবক, শ্রম এবং এসসি / এসটি শাখা দায়িত্ব নেবে এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে রাজ্যে এমজিএনআরইজিএস-এর অধীনে তহবিল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে রাজ্যে বড় আকারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, মনরেগার ২৭ নম্বর ধারায় এই প্রকল্প রূপায়ণে অনিয়মের কারণে রাজ্যের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এই প্রথম নয়, এর আগেও এই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর মার্চেও একই জায়গায় একই ধরনের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।গত ডিসেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের কয়েকজন সাংসদ দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে বকেয়া টাকা ছাড়ার দাবি জানান।
অক্টোবরে তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দিল্লিতে এবং কলকাতায় রাজভবনের বাইরে ধর্নায় অংশ নিয়েছিলেন।এদিন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে সমর্থন করে তার গ্রেফতারির বিরুদ্ধেও কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, সোরেন একমাত্র আদিবাসী মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি সমর্থিত কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির প্রতিহিংসাপরায়ণ কাজটি একটি জনপ্রিয় নির্বাচিত সরকারকে দুর্বল করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করছে। মমতা তাই বলেন, আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আমি এই কঠিন সময়ে গণতন্ত্র রক্ষায় নিবেদিত অবিচলভাবে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর শপথ নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ঝাড়খণ্ডের দৃঢ়চেতা মানুষ বিপুল জবাব দেবেন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে বিজয়ী হবেন।মুখ্যমন্ত্রী ইন্ডিয়া জোটের দলগুলির মধ্যে সদ্য সমাপ্ত আসন ভাগাভাগি আলোচনায় কংগ্রেস এবং তাদের ব্যর্থতারও সমালোচনা করেছিলেন।তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, তিনি কংগ্রেসকে ৩০০ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলেছিলেন এবং আঞ্চলিক দলগুলিকে ২৪৩ টি আসন নিতে দিয়েছিলেন।সিপিএমের সঙ্গে জোট করার জন্য কংগ্রেসের সমালোচনা করে মমতা বলেন, বামেরা বরাবরই বিজেপিকে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, কংগ্রেস ও সিপিএম মুসলিম ভোটারদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে বিজেপি হিন্দুদের কাছে পৌঁছচ্ছে।এ দিন মমতা বলেন, “বিজেপির সঙ্গে কেউ যদি লড়তে পারে সেটা পারে বাংলা, সেটা পারে তৃণমূল । কংগ্রেস তুমি তো একা পারবে না । সবচেয়ে বড় কথা সারা ভারতে ৩০০টি আসনে লড়েও তুমি ৪০টি আসন পাবে কি না আমি জানি না। আজকে তোমাদের এত অহংকার । আমি তো বলেছিলাম দুটি আসন আমি তোমাদের দেব। ওই আসনে তোমাদের জিতিয়েও আনব । তোমরাই বললে হবে না। তবে কটা চাই ? ৪২টা? তাহলে ৪২টাই নিয়ে নাও। আমরা কংগ্রেসের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছি । তারপরে আমার সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও কথা হয়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct