গৌরাঙ্গ সরখেল : 'ননসেন্স রাইম'-এর প্রবর্তক ছড়াকার সুকুমার রায়-এর শততম প্রয়াণবর্ষ ও আবোল তাবোল এর শতবর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে ভোজেরহাট সারদা দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যালয়ের ৫৮ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল নানা রঙের বুননে। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ছাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল দেখার মতো, অভিভাবকরাও ছিলেন তাদের সঙ্গে। আর বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী সহ সকল শিক্ষিকারা একযোগে যেভাবে একটি সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দিলেন, তা বহুদিন সমাজ মনে রাখবে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙ্গড়ের অন্যতম বালিকা বিদ্যালয় ভোজেরহাট সারদা দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যালয়। তাদের ৫৮তম বার্ষিক সমাবর্তন উৎসব এর নাম দেওয়া হয়েছিল 'উদ্ভাস' একই সঙ্গে আয়োজন করা হয়েছিল ছাত্র-ছাত্রীদের তৈরি করা বিজ্ঞান প্রদর্শনী।সোমবার ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বর্তমান উপসচিব ডঃ পার্থ কর্মকার এবং বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করেন ভাঙ্গড়-২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলাম ও জেলা পরিষদের সদস্য হাকিমুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। 'জগৎজুড়ে উদার সুরে আনন্দ গান বাজে 'এই রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করে ছাত্রীরা। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় এদিনের অনুষ্ঠান । পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজগুলি ছাত্রীদের অনেকটাই এগিয়ে রাখছে তার আরেকটি নমুনা সৃষ্টি করল ভোজেরহাট সারদা দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। যেখানে বিজ্ঞান প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে হাতে-কলমে বিজ্ঞান শিক্ষার ছোট ছোট নিদর্শনগুলি ফুটে উঠেছিল। ডঃ পার্থ কর্মকার সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে দেখার পর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান শিক্ষা সহজ ও আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে চলতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ প্রত্যন্ত এলাকার এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছে। এর ফলে পড়াশোনা ভারমুক্ত হয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তা আনন্দদায়কও হয়। বিভেদের মাঝে ঐক্য, নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানের দেশ আমাদের এই ভারতবর্ষ। বিভিন্ন রাজ্যের উৎসবের নাচ দিয়ে সাজানো হয়েছিল একটি নৃত্যানুষ্ঠান 'অঙ্গে বিভঙ্গে প্রাদেশিক ছন্দে '। পশ্চিমবঙ্গের একটি লুপ্তপ্রায় শিল্পকলা, পুতুল নাচ, সেটিকে পুনর্জীবন করার লক্ষ্যেই এদিন অভিনীত হয় 'বাঁচার ঠিকানা' নামক একটি পুতুল নাচ। যা পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ও আর্সেনিক দূষণকে সকল স্তরের মানুষের কাছে বোধগম্য করতে এটা ছিল এক অভিনব প্রয়াস। অনুষ্ঠানের শেষে ছিল মনোজ মিত্রের বিখ্যাত নাটক 'চমচম কুমার'। সকল ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষিকাদেরও অনাবিল আনন্দ উপহার দেয় এই নাটক। সমাজকর্মী ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আরাবুল ইসলাম বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উৎসাহ উদ্দীপনায় এবং বিজ্ঞান প্রদর্শনী দেখে যার পর নাই খুশি হন। তিনি বলেন এরকম সুন্দর অনুষ্ঠান বারবার হওয়া দরকার, এগুলোই আমাদের সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বহুদিন। এ ধরনের কাজে তাঁর সহযোগিতা যখন প্রয়োজন হবে, তিনি পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত বলে জানান। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিশেষ অতিথিদের পেয়ে কৃতজ্ঞতার কথা জানান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct