আপনজন ডেস্ক: একজন বোলারের শুরুটা সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে? প্রথম বলেই ছক্কা। অভিষেক টেস্টে নিজের প্রথম বলে এমন অভিজ্ঞতাই হয়েছিল টম হার্টলির। হায়দরাবাদ টেস্টের প্রথম দিনে বাঁহাতি স্পিনার হার্টলির প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছিলেন যশস্বী জয়সোয়াল। টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল মাত্র দুজন বোলারের।একই দিনে আগে ব্যাট করা ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই পেয়েছিলেন ভালো শুরু, একজনই শুধু নেমেছেন আর উঠেছেন। মাত্র ১ রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানটি ছিলেন ওলি পোপ।হায়দরাবাদ টেস্টের শেষের গল্প বলছে, ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ২৮ রানের স্মরণীয় জয়ের নায়ক, সহনায়ক ওই পোপ আর হার্টলিই। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে ১৯৬ রানের ইনিংস খেলেছেন পোপ আর বোলিংয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন হার্টলি।ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস তো বটেই, ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার মুখেও তাই হার্টলি আর পোপের প্রশংসা। স্টোকস অবশ্য তাঁর দলের জয়ের পেছনে অন্য এক কৌশলের কথাও জানিয়েছেন। ভারত কীভাবে খেলছে, কীভাবে স্পিনারদের ব্যবহার করছে আর কীভাবে ফিল্ডিং সাজাচ্ছে, সেসব দেখেই নাকি শিখেছে ইংল্যান্ড। আর সেই শিক্ষাটা যে কেমন কাজে লেগেছে, ম্যাচের ফলই তা বলে দিচ্ছে।দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষে ভারত এগিয়েছিল ১৯০ রানে। ম্যাচটা যে এখান থেকে ইংল্যান্ড ধীরে ধীরে নিজেদের দিকে নিয়ে যায়, তাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পোপের। দলের অন্য কেউ যেখানে পঞ্চাশের ঘরই ছুঁতে পারেননি, পোপ সেখানে ফিরেছেন দ্বিশতক থেকে এক বাউন্ডারি দূরে থাকতে। চতুর্থ দিন সকালে রিভার্স স্কুপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হওয়া পোপ ৩৭৩ মিনিট স্থায়ী ইনিংসে ২৭৮ বলে করেছেন ১৯৬ রান। যে ইনিংস ভারতের সামনে ছুড়ে দেয় ২৩০ রানের চ্যালেঞ্জ।বিরুদ্ধ কন্ডিশনে পোপের এই ইনিংসটিকে নিজের দেখা সেরা বলে অভিহিত করেছেন স্টোকস, ‘সে জো রুটের কিছু ইনিংস দেখেছে। কিন্তু এমন একটা কঠিন উইকেটে পুরো ইনিংসে যা খেলেছে, তা আমার দেখা উপমহাদেশে কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যানের সেরা ইনিংস।’
২৬ বছর বয়সী পোপের ইনিংসটি নিয়ে ভারত অধিনায়ক রোহিতের মূল্যায়নও প্রায় একই, ‘১৯০ রানের লিডে আমরাই ম্যাচে নিয়ন্ত্রক ছিলাম। কিন্তু অসাধারণ ব্যাটিং, সম্ভবত আমার দেখা ভারতীয় কন্ডিশনে অন্যতম সেরা ইনিংস। দারুণ খেলেছে ওলি পোপ।’পোপের ২০০ ছুঁই ছুঁই ইনিংসের মাধ্যমে যে পুঁজি, সেটা বোলিংয়ে কাজে লাগিয়েছেন হার্টলি। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলে ছক্কা হজমই শুধু নয়, প্রথম দুই ওভারেই ২৫ রান দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি। ওই ইনিংসে পরে ২টি উইকেট পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু ২৫ ওভারে ৫.২৪ গড়ে ১৩১ রান খরচ করে নিজের বোলিং সামর্থ্যের ওপরই সংশয় জাগিয়ে তুলেছিলেন অনেকের মনে। কিন্তু স্টোকসের আস্থা ছিল মাত্র ২০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা হার্টলির ওপর। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও টানা বোলিং করিয়েছেন এই বাঁহাতিকে দিয়ে। হার্টলি যার প্রতিদান দিয়েছেন ৬২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা টেস্ট অভিষেকে কোনো ইংলিশ স্পিনারের সেরা বোলিং।টম হার্টলি নিজে হায়দরাবাদের বিকেলটিকে বর্ণনা করছেন ‘অবিশ্বাস্য’ বলে। প্রথম ইনিংসে ভালো করতে না পারার পর কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, সেটি জানাতে গিয়ে তুলে এনেছেন ‘দেখে শেখা’র প্রসঙ্গ, ‘মনে হয়েছিল, প্রথম ইনিংসে যে গতিতে ডেলিভারি দেওয়া দরকার, সেটা আমি করিনি। জাদেজা আর অশ্বিনের বোলিং দেখলাম। মনে হলো একটু সময় নিলে আমিও পারব।’
হার্টলি অবশ্য উইকেট বোঝার পাশাপাশি দলের সমর্থনকেও বড় সহায়ক হিসেবে দেখছেন, ‘প্রথমে বলে স্পিন পাইনি। এরপর ড্রেসিংরুমে কোচ, স্টোকস আমার সঙ্গে কথা বলল। যেটা আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।’ অধিনায়ক স্টোকস অবশ্য হার্টলির মধ্যেই আত্মবিশ্বাসী বোলারের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন বলে জানালেন, ‘টম প্রথমবার দলে এসেছে। এখানকার কন্ডিশন সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছে। আর ও আত্মবিশ্বাসীও ছিল। প্রথম ইনিংসে যেমনই হোক না কেন, আমি তাঁকে লম্বা স্পেলে বোলিং করাতে চেয়েছি। তবে এ কারণেই ও ৭ উইকেট পেয়েছে আর আমরা ম্যাচ জিতেছি কি না, জানি না।’স্টোকস অবশ্য ভারতকে হারানোর পথে আরেকটা টোটকা কাজে লাগানোর কথাও শুনিয়েছেন, ‘আমি খুব ভালো পর্যবেক্ষণ করতে পারি। আমি দেখছিলাম, ভারত কীভাবে বোলারদের কাজে লাগায়। কীভাবে ফিল্ডিং সাজায়।’ তার মানে ভারতের অস্ত্রেই ভারতকে বিপাকে ফেলেছে ইংল্যান্ড!
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct