আপনজন ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় ২৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে সাড়ে ৬৪ হাজারেরও বেশি। এই হতাহতদের অধিকাংশই নারী-শিশুসহ বেসামরিক লোকজন। এদিকে যারা এখনও বেঁচে রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই বাস্তচ্যুত ও ভয়াবহ অনাহারের শিকার। বর্তমান এই পরিস্থিতীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার জনগণের জন্য খাবারের কেটা ফেলছে, যাতে বোমা ভরা রয়েছে।সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স ২৪-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের বোমাগুলো এমন সময় ফেলা হচ্ছে, যখন গাজাবাসী তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে এবং জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধা’ বলে অভিহিত করেছে।তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে, খাবারের ক্যানগুলো কি আসলেই বিস্ফোরক? ফ্রান্স ২৪ ঘটনাটি বোঝার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে থাকা বেশ কিছু ভিডিও বিশ্লেষণ করেছে।ফিলিস্তিনের কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক একটি ভিডিও পোস্টে দাবি করেছে, ইসরায়েল গাজায় খাবারের ক্যানে বোমা ভরে বিমান থেকে নিচে ফেলছে। ভিডিওটি দুই মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়েছে।আরেকটি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব গাজা’-এর একটি ভিডিওতে স্থানীয়দের বরাতে বলা হয়েছে, গাজায় বোমাভর্তি খাবারের ক্যানগুলো বিস্ফোরিত হয়ে এরইমধ্যে দুই শিশু, একজন নারী এবং একজন পুরুষ নিহত হয়েছেন। ভিডিওতে আরো দেখানো হয়, খাবারের ক্যানের মধ্যে ছোট ধাতব বস্তু রাখা হয়েছে।টিনের ক্যানগুলো দেখতে সিলিন্ডার আকৃতির এবং কালো রঙের। ভিডিওতে বলা হয়েছে, গাজার ক্ষুধার্ত জনগণ সহজেই একে খাবারের ক্যান ভেবে ভুল করতে পারেন। কিন্তু দখলদার সৈন্যরা আসলে ক্যানের মধ্যে মাইন রেখে গেছে, কেউ ক্যানের ওপরে রাখা ধাতব চাবি দিয়ে তা খোলার চেষ্টা করলেই বিস্ফোরিত হবে।
সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিস্ফোরক খাবারের ক্যান ফেলে গেছে বলে জানা গেছে। যা এলাকার বেসামরিক মানুষদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এই বিপজ্জনক অবশিষ্টাংশগুলো অবরুদ্ধ গাজায় এরইমধ্যে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলছে। শেয়ার করা ভিডিও অনুসারে, খান ইউনিসের একটি বিস্ফোরক প্রকৌশল দল এ ধরনের প্রচুর মাইন খুঁজে পেয়েছে। এর আঘাতে ব্যক্তির মৃত্যু বা গুরুতর অঙ্গচ্ছেদ হতে পারে এবং তাই তারা গাজার বাসিন্দাদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। ফ্রান্স ২৪-এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যখন ক্যানগুলোর ছবিগুলোকে জুম করলে দেখা যাবে, তাতে ‘ল্যান্ড ফিউজ মাইন’ লেখা রয়েছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ল্যান্ড ফিউজ মাইনের ক্যানটি খুব বড় ধরণের বিস্ফোরণ ঘটায় না। যে অংশটি বিস্ফোরণ ঘটায় তা, ক্যানের ভেতর খুব সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। তবে এটা নিয়ে কেউ নাড়াচরা করলে বিপদ ঘটতে পারে, কারণ অতিরিক্ত চাপে ক্যানটি বিস্ফোরিত হতে পারে।এদিকে রায়ান ম্যাকবেথ নামের একজন গোয়েন্দা বিশ্লেষক বলেছেন, ভিডিওতে কিছু সমস্যা আছে। যদিও আমি আরবি খুব ভালো বুঝি না, তবুও ভিডিও দেখে আমি যা বুঝতে পেরেছি, ‘এগুলো মাংসের ক্যান, খুবই বিপজ্জনক এবং বিস্ফোরিত হয়।’ রায়ান ম্যাকবেথ সফ্টওয়্যার আর্কিটেক্ট, সাইবার সিকিউরিটি মিলিটারি এবং ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ভিডিও নির্মাণ করে থাকেন।তিনি বলেন, আমার মতে এগুলো মাংসের ক্যান নয়। এগুলো ‘এম৬০৩’ ল্যান্ড মাইন ফিউজের পাত্র। ক্যানটি একটি চাবির সাহায্যে নিচ থেকে চাবি দিয়ে খোলা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct