প্রজাতান্ত্রিক-গণতন্ত্রের পথেই উদযাপিত ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবস
এম ওয়াহেদুর রহমান
মধ্য-দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত ভারত হলো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ। যুগ যুগ ধরে এই দেশে শক,হুন’পাঠান, মোগল প্রভৃতি বহুজাতিক মানুষ বসবাস করেছে। বহু ও বিভিন্ন সভ্যতা -সংস্কৃতি ভারত তথা ভারতীয়দের কে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করেছে। তবু ও ভারতের স্বাতন্ত্র ও মৌলিকতা অব্যাহত রয়েছে। ইংরেজরা ও বাণিজ্যিক স্বার্থেই এ দেশে এসেছে। অতঃপর কালক্রমে তারা ভারতের রাজনৈতিক জীবনের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করেছে। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নেতৃত্বে হাজার হাজার ভারতের আপামর জনগণের ত্যাগ,বহু রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অর্জন করেছে স্বাধীনতা। ঐ দিন ভারতের দিকে দিকে পত্ পত্ উড়েছে তেরঙ্গা পতাকা, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, যৌন প্রভৃতি ধর্মের মানুষ আপ্লুত হয়ে কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে শ্লোগান দিয়েছে বন্দে মাতরম, ভারত মাতা কি জয় ধ্বনি। প্রজাতন্ত্র ও গণতন্ত্র শব্দ দুটোর অর্থ প্রায় একই। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার শুরু হয়েছে’ আমরা ভারতের জনগণ......’ অর্থাৎ এই দেশে ভারতীয় জনগণই চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। জনগণই ঠিক করে দেয় কিংবা তারাই শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে শাসকদের। সমগ্ৰ ভারতজুড়ে ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি মহাসমারোহে উদযাপিত হবে ৭৫ তম প্রজাতন্ত্র দিবস। সারা দেশ মেতে উঠবে আনন্দ উল্লাসে। এই দিনে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ হয়’ ভারতের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়’ দেশ ব্যাপী ফুটে ওঠে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’সমৃদ্ধ হয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
বহু কারণে প্রজাতন্ত্র দিবস ভারতের ইতিহাসে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগাস্ট স্বাধীনতা লাভ করলে ও ভারতের ছিল না কোনো নিজস্ব সংবিধান কিংবা কোনো বিধি- বিধান। ভারতের সংবিধান গৃহীত বা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ভারতের নিজস্ব কোনো ও স্থায়ী সংবিধান না থাকায় ব্রিটিশ সরকারের ১৯৩৫ সালের’ গর্ভনমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’ দ্বারা ভারত পরিচালিত হতো। এই আইন টি গভর্নিং ডকুমেন্ট হিসেবে গৃহীত হতো। তাই ভারতের নিজস্ব সংবিধান প্রনয়নের জন্য ড. বি আম্বেদকর, জওহরলাল নেহরু’সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল’ মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের নিয়ে সংবিধান সভা তৈরি করা হয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ আগাস্ট আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতের স্থায়ি সংবিধান প্রনয়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বর খসড়া কমিটি সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দেয়। দীর্ঘ দুই বছর বিভিন্ন আলাপ আলোচনার পর প্রস্তাবিত সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়। ৩০৪ জন সদস্য ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের দুটি ( একটি ছিল ইংরেজি ভাষায় লিখিত অপর টি ছিল হিন্দি ভাষায় লিখিত ) হস্তলিখিত কপিতে সই করেন। এর দু’দিন পর ২৬ জানুয়ারি সংবিধান আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয় এবং ভারত সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক - প্রজাতন্ত্র দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে ভারতে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সংবিধান কার্যকর হলেও ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রথম ভারতের আনাচে কানাচে উপচে পড়ছিল উৎসব মুখর জনতা’ ভারতের জনগণ খাদির পোশাক পরে হাতে ভারতের তেরাঙ্গা পতাকা নিয়ে সামিল হয়েছিল স্বাধীনতা উৎসবে। এটি ছিল সম্পূর্ণ স্বরাজ তথা ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন। ঐ দিন প্রথম ভারতের মাটিতে জনগণ উদ্ধাক্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছিল বন্দে মাতরম। ১৯২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে দেশে প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ সরকার কে বরখাস্ত করে ভারত কে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করার লক্ষ্যে পূর্ণ স্বরাজের দাবি গৃহীত হয়। ১৯৩০ সালের ৬ জানুয়ারি এলাহাবাদ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সভায় ২৬ জানুয়ারি সমগ্ৰ দেশ ব্যাপী স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু এই প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের মহুর্তে কিছু কিছু জনগণের মনের মধ্যে কখনো কখনো হয়তো প্রশ্ন উঁকি মারে প্রস্তাবনার গৃহীত’ আমরা ভারতের জনগণ’ ভারত কে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ....’ সম্পর্কে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct