জিয়াউল হক, চুঁচুড়া, আপনজন: নিখাদ পাতিহাঁস। ন্যায় পাওয়ার জেদে হতে পারে হাঁসের ময়নাতদন্ত। গপ্প নয়!এক্কেবারে সত্যি। চুঁচুড়ার সিংহীবাগানের বাসিন্দা ইতি বিশ্বাস। স্বামী হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। একমাত্র ছেলের ব্লাড ক্যান্সার। তাকে নিয়ে তাঁর অমানুষিক লড়াই নিত্যদিনের। অনটনের সংসার চলে ঝালমুড়ি বিক্রির টাকায়। ১০টি হাঁস তাঁর পোষ্য। সেগুলিই তাঁর সংসারের সুস্থ সদস্য। সরল চোখ আর ভরাট গড়নের সেই হাঁসগুলি যেমন প্রিয় তেমনই আয়ের উৎসও বটে। হঠাৎই শনিবার গৃহবধূ দেখেন, তিনটি হাঁসগুলি কাতরাচ্ছে। দেখেন একটি মুড়ির ঠোঙা পড়ে আছে হাঁসের ঘরের সামনে। সন্দেহ হওয়ায় শুঁকে দেখেন ইতিদেবী। বিষজাতীয় কিছু মেশানো হয়েছে বলেই ধরে নেন তিনি। রবিবার সকালে দেখতে পান তিনটি হাঁস মরে গিয়েছে। ‘হাঁসের হোমিসাইড’এর দাবি নিয়ে সটান পৌঁছে যান থানায়। কিন্তু ‘ফালতু’ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করার সময় কোথায় পুলিশের কাছে, পুলিশের তরফ থেকে ফরমাইস আস্তে, আগে ময়নাতদন্ত করিয়ে আনুন তারপর তদন্ত হবে। কোনও কালে এমন কথা শোনেননি ইতিদেবী। সোমবার চুঁচুড়ার পশু হাসপাতালে চলে যান তিনি। সেখানেও সহজ হয়নি লড়াই। কিন্তু ছাড়বেন কেন সিংহীবাগানের সিংহী। বহুবার আর্জির পর ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশের আবেদন সহ বুধবার ফের হাঁসগুলি নিয়ে আসার কথা জানানো হয়। তারপরেই ইতি ছোটেন বরফ কিনতে। ইতি দেবী নিজের ঘরে বরফের মধ্যে ‘নিষ্পাপ তিনটি মরদেহ’কে রেখে দেন। মঙ্গলবার সরকারি ছুটি। পরে পুলিশ অবশ্য তদন্ত করতে গেলেও হাল কিছু বের হয়নি, নাছোড়বান্দী ইতি দেবী বুধবার সকাল হতেই সোজা চলে আসেন পশু হাসপাতালে, সেখান থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় পুলিশে অভিযোগ না হলে ময়নাতদন্ত করা সম্ভব নয়, সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসেন থানায়, অবশেষে অভিযোগ হলেও স্বাস্থ্য ও পুলিশি দপ্তরের নিয়মের মাঝে পিশতে থাকেন ইতি দেবী ও তার শখের তিনটি হাঁস। অবশেষে এই খবর পৌঁছায় জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন বিভাগে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct