শিক্ষার্থীদের পরিবেশ শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা এবং প্রয়োজনীয়তা
সজল মজুমদার
শিক্ষা হলো ব্যক্তির জীবনব্যাপী ক্রমবিকাশের এক ছেদহীন প্রক্রিয়া যা নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা অবচেতনভাবে অর্জনের মাধ্যমে তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সুষ্ঠ ও সার্থক সংগতিবিধানে এবং সমাজের বহুমুখী দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলে। অন্যদিকে “পরিবেশ” হলো একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। মূলত জীবজ ও অজীবজ উপাদানের সমন্বয়ে বৃহত্তর পরিবেশ গঠিত। সেই ক্ষেত্রে শিক্ষা ও পরিবেশের একত্রিত, সম্মিলিত রূপ হলো পরিবেশ শিক্ষা। বর্তমান সময়ে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতি, পরিবেশ ,জীবজগত নিয়েই মানুষ বেঁচে রয়েছে। কিন্তু এই মানুষই আবার নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রকৃতি ধ্বংসের খেলায় মেতে থাকে। পরিবেশ প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতনতা জাগ্রত করার জন্য শিশু শিক্ষার্থী স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষার স্তর পর্যন্ত পরিবেশ শিক্ষা বিষয়টি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিবেশ শিক্ষার শিক্ষাগত কতগুলি দিক তথা মূল্য রয়েছে। যে গুলোর পরিবেশগত মূল্য, প্রকৃতি কেন্দ্রিক মূল্য, সংস্কৃতিক মূল্য, ঐতিহ্য গত মূল্য, সম্পদ মূল্য ও সামাজিক মূল্য গুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রসঙ্গত National Curriculum Framework 2005 অনুসারে পরিবেশ শিক্ষার পাঠক্রম পরিকল্পনাকে কয়টি স্তরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। সেগুলি হল, নিম্ন প্রাথমিক স্তর, উচ্চ প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর ইত্যাদি। বিদ্যালয় স্তরে পরিবেশ বিদ্যা শিখনের বিভিন্ন উপাদান রয়েছে, যেমন - পাঠ্যপুস্তক, পরিবেশ সম্পর্কিত নানা ধরনের তালিকা, ছবি,মডেল, অডিও ভিসুয়াল ক্লিপ ইত্যাদি। অন্যদিকে বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করবার জন্য টেলিভিশনের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এখানে নানা ধরনের শিক্ষনীয় চ্যানেল যেমন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারি, অ্যানিমেল প্লানেট এ নিয়মিতভাবে নানা অজানা তথ্য, চিত্র, অ্যাডভেঞ্চার, ভ্রমণ কাহিনী, পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কিত তথ্যচিত্র উপস্থাপিত হয়ে থাকে। যা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক কাজে লাগতে পারে। আবার বর্তমান দিনের শিক্ষণ ব্যবস্থায় কম্পিউটারের ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকরী। পরিবেশ কেন্দ্রিক তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ, প্রক্রিয়াকরণ, মডেল নির্মাণ, ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। শুধু তাই নয়, নবম দশম দশম শ্রেণীর গঠনগত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রকল্প নির্মাণের একটি ক্ষেত্র হিসেবে “ প্রকৃতি পাঠ”, এবং “ ক্ষেত্র সমীক্ষা” ইত্যাদি পরিবেশ সম্পর্কীয় প্রাসঙ্গিক টপিক গুলো রয়েছে। তথাপি পরিবেশ কেন্দ্রিক শিক্ষামূলক ভ্রমণ শিক্ষার্থীদের পরিবেশ পরিচিতি করাতে হাতে কলমে সাহায্য করে। ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষে আলোচিত তাত্ত্বিক বিষয়ের মুর্ত উদাহরণ দেখতে পায় শিক্ষামূলক ভ্রমণের দ্বারা। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ‘ পরিবেশ বিদ্যা’ নামক একটি আলাদা পাঠক্রম ভিত্তিক বিষয়ই রয়েছে। কিন্তু মোদ্দা কথা হলো, পরিবেশ সচেতন হয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের বাস্তবিক জীবনে সেগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ কতটা করছে!!!? নাকি পরিবেশ শিক্ষা বই এর পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। কারণ ছাত্ররাই তো দেশের ভবিষ্যৎ। পাশাপাশি পরিবেশ শিক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক,শিক্ষিকার মধ্যেও কিছু গুণাবলী যেমন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও অনুসন্ধিৎসা, দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষার্থী মনস্তাত্ত্বিক স্বচ্ছ ও নিবিড় জ্ঞান, নেতৃত্ব ও পরামর্শদানে সক্ষমতা ইত্যাদি আবশ্যিক থাকা প্রয়োজন। পরিশেষে, পরিবেশ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামীর পরিবেশ সচেতন দায়িত্ববান একজন নাগরিক গড়বার প্রাথমিক পাঠশালা হলো এই স্কুল এবং কলেজ। তাই,বর্তমান সময়ে অনেক কিছু নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক দিকগুলো শিক্ষার্থীদের নিজে থেকেই বেছে নিতে হবে।সেই ক্ষেত্রে পরিবেশের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct