টাইগার হিলে ভোর
শিবশঙ্কর দাস
শীতের ভোরে টাইগার হিলে সূর্যোদয় ডেকেছে কতবার
কনকনে ঠান্ডার ভয়ে কখনো যাইনি দার্জিলিং পাহাড়
মেঘহীন দিগন্ত প্রসারিত নীল সবুজের ক্যানভাসে এবারে
সূর্যের ম্যাজিক দেখবো বলে হঠাৎই ছুটলাম ভোরের আঁধারে।
কচ্ছপের খোলার মত টাইগারের পিঠে পিঁপড়ের মত
চারিদিক ছড়িয়ে পিল পিল করছে মানুষ,
হল্লা, চিৎকার, রাগারাগি, খুনসুটি, আকঙ্ক্ষা উৎকন্ঠার,
ঢেউয়ে দোল খাচ্ছি যেন চাইনিজ ফানুস।
আকাশ উল্টোনো কড়াই। ঘোলাটে তরলে ভাসছে চাঁদ।
রঙিন পোশাকের ভিড়ে এককোণে বসে জবুথবু
ক্লান্ত চোখজোড়া এদিক ওদিক দেখে, মাথা আর মাথা
দাঁড়ালেই এর পেছনে ওর পেছনে খোঁচা, নিমেষেই উবু।
হাড়হিম করা ঠান্ডায় উষ্ণ থাকি হৃদয়ের প্রবল রক্তস্রোতে
ভোরের নিশ্চিন্ত অক্সিজেনও পালায় পায়ের চাপে
পুবের ঘরে তখন ঊষা ধীর লয়ে ভৈরবীর সুর ধরে
পশ্চিমে একা ঋষি কাঞ্চনজঙ্ঘা তারই গভীরতা মাপে।
তখনই চিৎকার ওঠে ‘খুলেছে খুলেছে দরজা খুলেছে,
এইবার দেখা যাবে মুখ।’ দিগন্তে হুড়মুড় করে দৃষ্টি ফেরায় চোখ
কোথায় দরজা খুলেছে, কোথায় দেখা যাচ্ছে কার মুখ।
গাছের মাথায় মেঘেরা শুয়ে, ‘চিৎকার করি, জয় হোক।’
ঘুম ভেঙে রবি পিচকিরি হাতে খুনখারাবি রং ছড়ায় দিকে দিকে
শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অমলিন দেহ ভেজে খুশির তরলে
নীরব হাতছানি দেয় অগণিত উচ্ছ্বসিত অপেক্ষমান পিপাসিতকে
পরক্ষণেই সে দেহ হলদে বেগনি সবজে আগুনে জ্বলে।
শুধু কি কাঞ্চনজঙ্ঘা রঙের খেলায় মাতে? দৃষ্টিগোচর দিগন্তে
কত রঙের আলোর ঢেউ ছোটে উথালপাথাল
ক্লান্ত চোখজোড়া অনিমেষ চেয়ে দেখে পুবের দুয়ার খুলে
আবির গুলাবে স্নান করে একটা সূর্য উঠেছে গোলগাল।
এ জীবনে আর কতটুকু বা সুখ সবই তো ব্যথায় ভরা
এই শিশুসূর্য এই নিষ্পাপ কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াবী টানে
তাই আবার আসতে চাই টাইগার হিলের হিমশীতল মাথায়
হয়তো একবারের জন্যও খুঁজে পাওয়া যাবে জীবনের মানে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct