জাকির সেখ, কলকাতা, আপনজন: জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়তে উলামার উদ্যোগে শনিবার কলকাতা নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হল এক বিশাল প্রতিনিধি সম্মেলন। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য জমিয়তে উলামার সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরী বলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ চাই সরকার তার দায়িত্ব পালন করুক। আদালতকে সংবিধান ও আইনের আলোকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হোক। আমরা সংবিধানের মর্যাদাহানি হতে দেব না। সংবিধানকে রক্ষা করতে আমরা সর্বপ্রকার বলিদান দিতে প্রস্তুত। ১৯১৯ সালে মাওলানা আব্দুল বারী ফিরিঙ্গি মহল্লীর সভাপতিত্বে ২৬ জন খ্যাতনামা আলিম ও বুজুর্গের উপস্থিতিতে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাংগঠনিক পথচলা শুরু হয়। ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করতে ও ইসলাম ধর্মের মর্যাদাকে সমুন্নতর জন্য জমিয়ত সংঘবদ্ধভাবে লড়াইয়ের কৌশল গ্ৰহণ করে। হাজার হাজার আলেমকে শহীদ করে ইংরেজরা গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। অসংখ্য জমিয়ত নেতৃত্ব বছরের পর বছর ধরে কারাবরণ করেছেন।
১৮৫৭ সােলর মহািবদ্রোহের পের ৫২ হাজার আলেম তথা জমিয়তের পূবসূরীেদরকে ব্রিটিশরা শহীদ করে ঢাকা থেকে পেশায়ার পর্যন্ত জিটি রোডের দুই পােশর গাছগুলিতে ঝুিলেয় রেখে যে বর্বতার নমুনা পেশ করেছিল তােতও জমিয়ত ভয়ে পিছপা হয় িন। তাই তা শাইখুল িহন্দ মাহমুদুল হাসান (রহ.), শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ), মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (রহ)-র ন্যায় অসংখ্য জমিয়ত নেতৃত্ব বছরের পর বছর কারাবরণ করেছে, সাভারকারদের মতো মুচলেকা দেন নি। লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউস এখনও তার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিগত ১০০ বছর ধরে রাষ্ট্রনির্মাণের কাজে জমিয়ত নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। সারা দেশে জমিয়তের এক কোটি সদস্য। ২৩ টি রাজ্যে আমাদের সংগঠন অত্যন্ত মজবুত। জমিয়তে উলামা ১০৪ বছরে পা দিয়েছে। জমিয়তের সর্বস্তরের নেতৃত্ব ও কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় আজ আমরা জমিয়তের শতবার্ষিকী পালন করছি। এছাড়াও এদিনের সভায় জাতীয় সংহতি, ঐক্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, ওয়কাফ সম্পত্তি সুরক্ষা, ইউনিফর্ম সিভিল কোর্ড, এনআরসি ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়। সর্বভারতীয় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাকিমুদ্দিন কাসেমী বলেন, হতাশা ও ঈমানদারী কখনও এক জায়গায় থাকতে পারে না। অন্ধকার যেমনই হোক না কেন অন্ধকারের পর আলো আসবেই। স্বাধীনতার আগে অনেকেই মনে করত যে ভারত থেকে কখনও ইংরেজদেরকে তাড়ানো যাবে না। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরকে বিতাড়িত করেছে। তিনি জমিয়ত ইয়ুথ ক্লাব ও জমিয়ত ওপেন স্কুলের প্রয়োজনীয়তা সহ জমিয়তের বহুমুখী কাজের কথা তুলে ধরেন। এদিন জমিযতের সভায় উপস্তিত ছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, রাজ্য জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সালাম, মাওলানা মঞ্জুর আলম কাসেমী, পুরোহিত প্রদীপ কুমার, ফুরফুরা শরীফের ত্বহা সিদ্দিকী, জামায়াতে ইসলামী সংগঠনের মাওলানা মসিহুর রহমান, আহলে হাদীস সংগঠনের জাকি মাদানী, আইনজীবী প্রসূন বন্দোপাধ্যায়, মুর্শিদাবাদ জেলা জমিয়তের উলামার সভাপতি মাওলানা বদরুল আলমসহ বিভিন্ন জেলার জমিয়ত নেতৃত্ব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct