আপনজন ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় রক্তাক্ত সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার পর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে কথা শোনা যাচ্ছে, তার বিরোধিতা করেছেন দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে ইহুদী রাষ্ট্রটির সরকারপ্রধান বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।এছাড়া গাজা অভিযান ‘আরো কয়েকমাস’ চলতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।নেতানিয়াহু বলেন,পূর্ণাঙ্গ বিজয়- হামাসের ধ্বংস এবং অবশিষ্ট জিম্মিরা ফেরত না আসা পর্যন্ত তা (অভিযান) চলবে।হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ইসরায়েলের অভিযানে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং সেখানকার ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।বহু বছর ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলে আসা গণহত্যা, নিপীড়ণ ও ভূমি দখলের প্রতিবাদে গতবছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে আকস্মিক অভিযান চালায় ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামাসের অভিযানে ১২শ’র বেশি লোক নিহত হয়। এছাড়া জিম্মি করা হয় ২৪০ জনকে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ওইদিন থেকেই গাজায় তীব্র হামলা শুরু করে ইরায়েল, যা এখনো চলছে। গাজা অভিযানে লাগাম টানতে এবং যুদ্ধের টেকসই সমাপ্তির জন্য একটি কার্যকর আলোচনায় বসতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে অনেকদিন ধরেই। সংঘাত শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের মিত্র এবং বিরোধিরাও দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে ফের আলোচনা শুরুর কথা বলে আসছে। এই ধারণায় ইসরায়েলের পাশে ফিলিস্তিনিদের জন্যও একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক সঙ্কট যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে কূটনৈতিক তৎপরতায় ফেরাবে, এমনটাও আশা করছিল অনেকে।তবে নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্যে মনে হচ্ছে, তার মনোভাব সম্পূর্ণ উল্টো। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জর্ডান নদীর পশ্চিমে পুরো এলাকার নিরাপত্তায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকতেই হবে। ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় ওই এলাকাও রয়েছে।
“এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত এবং এটি (ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের) সার্বভৌমত্বের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমি বিষয়টি আমার মার্কিন বন্ধুদের জানিয়েছি এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন বাস্তবতা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা থামিয়ে দিয়েছি।”নেতিানিয়াহু তার রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেই কাটিয়েছেন। গত মাসে তা গর্ব করেও বলেছিলেন তিনি। ফলে তার নতুন মন্তব্য খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না।কিন্তু একদিকে ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতা এবং অন্যদিকে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখতে তেল আবিবের দৃঢ়সংকল্প পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ককে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে মিত্র ইসরায়েলের পাশেই দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু গাজায় মৃত্যুর মিছিল এবং ভয়বহতা বাড়তে থাকলে পশ্চিমা সরকারগুলো ইসরায়েলকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছিল।হোয়াইট হাউজ বার বার ইসরায়েলের সামরিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে আসছে। বিশেষ করে নির্বিচারে বিমান হামলার পরিবর্তে আরও নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার, স্থল আক্রমণ নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি গাজা সংঘাত শেষ হওয়ার পর ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা থাকবে এমন ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ সমাধানের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।কিন্তু ওয়াশিংটনের পরামর্শ হয় সঠিক জায়গায় পৌঁছায়নি কিংবা সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময়ও একই চিত্র দেখা গেছে। ফলে ইরায়েলকে সমর্থন দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থক অন্য বলয়গুলোর মধ্যে হতাশা আরও বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশটিকে (ইসরায়েল) সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত আরোপের কথাও বলা হচ্ছে।নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেইক সালিভান জানিয়েছেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ নিয়ে তার সরকার তৎপরতা থামবে না।গাজা পুনর্দখল হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি। অবশ্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য তার ক্ষয়িষ্ণু সমর্থনের ভিত্তিতে কিছুটা হলেও শক্তি যোগানোর পাশাপাশি তার সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসা কট্টর ডানপন্থিদের খুশি করবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct