আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্দরে গুঞ্জনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের কর্মীসভায় শুক্রবার জোর দিয়ে বলেছেন, তার দল রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ও ঐতিহ্যগতভাবে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মুর্শিদাবাদ জেলা ইউনিটের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নিজের অবস্থান জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে তিনি দলের নেতাদের নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জেলার তিনটি লোকসভা আসনেই তৃণমূলের জয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে পাঁচবারের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর দখলে থাকা বহরমপুর আসনটিই দখল করতে পেরেছিল কংগ্রেস। এ ব্যাপারে এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, আমাদের দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন যে তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কিন্তু বাংলায় যদি আমাদের বাদ দিয়ে আরএসপি, সিপিআই, সিপিএমকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে আমরা নিজেদের পথ তৈরি করব এবং ৪২টি আসনেই লড়াই ও জেতার প্রস্তুতি নিতে হবে।সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস ২৮ দলের শক্তিশালী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অংশ। তবে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম ও কংগ্রেস জোট বেঁধেছে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের আর এক নেতা পিটিআইকে বলেন, দলের প্রধান বলেছেন, তিনটি লোকসভা আসনেই জেতার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের এক বিধায়ক হুমায়ুন কবীর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জেলায় অধীর চৌধুরীর ফ্যাক্টর বলে উল্লেখ করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে অস্বীকার করে বলেন, ঐক্যবদ্ধ লড়াই করলে তৃণমূল সাফল্যের স্বাদ পাবে।আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে ফাটল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে প্রধান শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে।২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে তৃণমূলের দুটি আসনের প্রস্তাবকে কংগ্রেস অপর্যাপ্ত বলে মনে করেছিল, যা দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছিল।
তৃণমূলের কট্টর সমালোচক অধীর চৌধুরী বলেন, কংগ্রেস তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে আসন চাইবে না।২০১৯ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ২২টি আসন, কংগ্রেস ২টি এবং বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বহরমপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী মালদা দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে টানা তৃতীয়বার জয়ী হন।গত নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামেদের জোটের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে তৃণমূল নেত্রী তাঁর প্রস্তাব চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম দ্রুত খারিজ করে দেন এবং কিছু কংগ্রেস নেতার সমালোচনা করেন। এর কয়েকদিন পরেই মমতা দুই দলের বিরুদ্ধে বিজেপির জোট বেঁধে পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের মোকাবিলা করার আশ্বাস দেন।তৃণমূল কংগ্রেস গত সপ্তাহে ইন্ডিয়া জোটের ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয় এবং পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সীমাবদ্ধতাগুলি স্বীকার করার ও ক্ষমতাসীন দলকে রাজ্যের রাজনৈতিক লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এর আগে ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচন, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সাথে জোট করেছিল, যার ফলে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct