আপনজন ডেস্ক: বিলকিস বানুর ধর্ষণকারীদের আত্মসমর্পণের জন্য সময় দেওয়ার আর্জি নামঞ্জুর করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তাই মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ অপরাধীকে আগামী রবিবারের মধ্যে কারাগারে যেতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ শুক্রবার এই নির্দেশ দেয়। ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুকে ধর্ষণ ও তার পরিবারের ৭ সদস্যকে হত্যাকারী ওই ১১ অপরাধীর মধ্যে ১০ জন আত্মসমর্পণ করার মেয়াদ এক থেকে দেড় মাস বাড়িয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।আবেদন খারিজ করে আদালত বলেছে, আত্মসমর্পণ করার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য তেমন কোনো জোরালো ও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ দেখানো হয়নি। সবাইকে রবিবারের মধ্যেই কারাগারে ফিরে যেতে হবে।
ওই ১১ জন অপরাধীকে গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই রাজ্যের কারাগার থেকে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়। গুজরাট সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা হয়। বিলকিস বানুও মামলা করে জানিয়েছিলেন, মুক্তির খবর তাঁকে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার রায় দেন ৮ জানুয়ারি। তাতে বলা হয়েছিল, মুক্তিদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতাই গুজরাত সরকারের নেই। কারণ, মামলার বিচার হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। মহারাষ্ট্র সরকারই সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযুক্ত। রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট এই কথাও বলেছিলেন, মুক্তির আবেদনে তথ্য গোপন করা হয়েছিল। অপরাধীদের আত্মসমর্পণের জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। ২১ জানুয়ারি, রোববার সেই সময়সীমা শেষ হবে। সেই দিনের মধ্যেই অপরাধীদের জেলে যেতে হবে।গত বৃহস্পতিবার ওই ১১ অপরাধীর মধ্যে ১০ জন সুপ্রিম কোর্টে আত্মসমর্পণের সময় এক থেকে দেড় মাস বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন। বিচারপতি নাগরত্না ও বিচারপতি ভুঁইয়ার এজলাসে তারা দ্রুত আবেদনটি শোনার আর্জি জানায়। আর্জিটি গ্রহণ করে বিচারপতিরা বলেন, প্রধান বিচারপতির সায় পেলেই তা শোনা হবে। শুক্রবার শুনানি শেষে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদালত বলেছে, যে ধরনের কারণ দেখিয়ে সময় বাড়ানোর আরজি জানানো হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আবেদনে কেউ বলেছিলেন, এটা ফসল কাটার সময়। সে জন্য পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। কারও দাবি, বৃদ্ধ মা–বাবাকে দেখাশোনা করতে হচ্ছে; কেউ পারিবারিক সমস্যা, কেউ আবার চিকিৎসার কারণ উল্লেখ করেছিল। কেউ বলেছিল, পরিবারে বিয়ে আছে। কারও আর্জি ছিল এক মাস সময় বাড়ানোর, কারও দেড় মাস। কিন্তু সেসব আর্জি খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।
অন্রদিকে, শুক্রবার গুজরাতের দাহোদ জেলার এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ২০০২ সালের বিলকিস বানু গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত সকলেই পুলিশের নজরদারিতে ছিল।লিমখেদা ডিভিশনের সহকারী পুলিশ সুপার বিশাখা জৈন বলেছেন, ৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট গুজরাত সরকারের দেওয়া মকুব খারিজ দেওয়ার পর থেকেই ওরা পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে। ২০০২ সালে গোধরা দাঙ্গার সময় ২১ বছর বয়সি বিসকিস বানু ওই ১১ জনের ধর্ষণের শিকার হন। তখন তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ওই অপরাধীরা বিলকিসের শিশুকন্যাসহ তাঁর পরিবারের সাতজনকে হত্যাও করেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কিন্তু ১৪ বছর কারাবাসের পর গুজরাট সরকার পুরোনো এক নীতি অনুযায়ী ওই অপরাধীদের মুক্তি দেয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct