আপনজন ডেস্ক: বুধবার প্রকাশিত অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অফ এডুকেশন রিপোর্ট (এসার) ২০২৩ অনুসারে, ১৪-১৮ বছর বয়সি ভারতের জনসংখ্যার ৮৬.৮ শতাংশেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় এবং তাদের অর্ধেকেরও বেশি মানবিক শাখা বেছে নেয়।রিপোর্টে অবশ্য বলা হয়েছে, দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যক্রমে ২৫ শতাংশ পড়ছেন না, তাঁদের আঞ্চলিক ভাষায় সাবলীলভাবে পড়তে পারেন না।প্রতিবেদনে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ছোট লিঙ্গ ব্যবধানের কথা উল্লেখ করা হলেও, এটি বয়সের গ্রুপগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য চিহ্নিত করেছে। “বয়স্ক তরুণদের তালিকাভুক্ত না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তালিকাভুক্ত না হওয়া যুবকদের হার ১৪ বছর বয়সী যুবকদের ক্ষেত্রে ৩.৯ শতাংশ এবং ১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ৩২.৬ শতাংশ। গত বছরের রিপোর্টে দেখা গেছে, ছয় থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ভর্তির হার ২০১০ সালে ৯৬.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে ৯৬.৭ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৯৭.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৯৮.৪ শতাংশ হয়েছে।রিপোর্টে বলা হয়েছে, একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৫৫ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বেছে নেয়। এটি আরও উল্লেখ করেছে যে মহিলা শিক্ষার্থীরা পুরুষদের তুলনায় এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত) শাখায় ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় জীবিকা হারানোর কারণে বেশ কয়েকজন বয়স্ক শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে দিয়েছে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মাত্র ৫.৬ শতাংশ তরুণ বর্তমানে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নতুবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কোর্সে ভর্তি হয়েছে।এসার সারা দেশের মধ্যে ২৬টি রাজ্যের ২৮টি জেলার ১৬৬৪টি গ্রামে এই সমীক্ষা চালায়। এই সব গ্রামগুলির ৩০,০৭৪টি বাড়িতে সমীক্ষা চালানো হয় ৩৪,৭৪৫জন তরণ-তরুণীর মধ্যে।পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বেছে নেওয়া হয় উত্তরবঙ্গের কোচবিহারকে। কোচবিহারে সমীক্ষার দাযিত্বে ছিল কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিজ্ঞান বিভাগ। এসার প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কোচবিহারের ৬০টি গ্রামকে সমীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়। এই ৬০টি গ্রামের ১২০০ বাড়িতে সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষা নেওয়া হয় দুটি ভাগে। প্রথমে ১৪-১৬ বছর বয়সিদের মধ্যে। তারপর ১৭-১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে। সব মিলিয়ে ১৩৬১জন ১৪-১৮ বছর বয়সিকে সমীক্ষায় শামিল করা হয়। এই সমীক্ষায় শুধু শিক্ষার মূলায়ণ কিংবা পড়ুয়অদের শিক্ষার মান নির্ণয় নয়, আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও তথ্য নেওয়া হয়। তার মধ্যে চাকরির পরিসংখ্যানও রয়েছে। এসার সমীক্ষা রিপোর্ট সূত্র অনুযায়ী, কোচবিহারের যে ৬০টি গ্রামে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ১৬.২ শতাংশ কাজ করেন সেনাবাহিনীতে। এছাড়া চাকরিজীবী পুরুষদের মধ্যে ১০.৭ শতাংশ পুলিশ, ৮.৬ শতাংশ শিক্ষক, ৩.৫ শতাংশ ডাক্তার, ০.২ শতাংশ নার্স, ৭.২ শতাংশ ইঞ্জিনিয়ার, ০.১ শতাংশ আইএএস, ০.৯ শতাংশ আইপিএস, অন্য সরকারি চাকরি ৩.৭ শতাংশ প্রভৃতি। তবে, পুলিশ, শিক্ষক, নার্স, ডাক্তার কিংবা আইএএসের ক্ষেত্রে কোচবিহারে মেয়েরা অনেক এগিয়ে। চাকরিজীবী মেয়েদের মধ্যে ১৫.৮ শতাংশ পুলিশ, ১১.২ শতাংশ শিক্ষক, ১০.৫ শতাংশ ডাক্তার, ১৮.২ শতাংশ নার্স, ০.১ শতাংশ আইএএস, ০.২ শতাংশ আইপিএস প্রভৃতি।কোচবিহারে ১৪-১৬ বছর বয়সিদের স্কুল বা কলেজে নাম নথিভুক্ত না করানোর ক্ষেত্রে মেয়েদের থেকে পুরুষরা বেশি। ১৪-১৬ বছর বয়সি ছেলেরা যেখানে স্কুল বা কলেজে নাম লেখায় না ৭ শতাংশ সেখানে মেয়েদের হার মাত্র ১.৯ শতাংশ। আর সরকারি স্কুলে নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে ছেলেদের থেকে। ১৪-১৬ বছর বয়সি ৯৮.১ শতাংশ মেয়েরা যেখানে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে সেখানে ছেলেরা ৯৩ শতাংশ।এসার রিপোর্ট বলছে, কোচবিহারের ১৪-১৬ বছর বয়সি তরুণ তরুণীদের মধ্যে ৬৩.৩ শতাংশ দ্বিতীয় শ্রেণির মানের পাঠ্যবই রিডিং পড়তে পারে। আর ইংরেজি পড়তে পারে ৩৫ শতাংশ।সেক্ষেত্রেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। ১৪-১৬ বছর বয়সি ছেলেদের যখন ৫৭.৪ শতাংশ দ্বিতীয় শ্রেণির মানের পাঠ্য বই রিডিং পড়তে পারে, সেখানে মেয়েদের হার ৬৮ শতাংশ।
আর ইংরেজি পড়তে পারে মেয়েরা ৩৭.২ শতাংশ। কিন্তু ছেলেরা পারে ৩২.২ শতাংশ।তবে, তরুণ সমাজের মধ্যে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ব্যাপক চল রয়েছে। লকডাউনের সময় অনলাইনে ক্লাস করার ক্ষেত্রে যে স্মার্ট ফোনে শুরু তার এখন রমরমা। কোচবিহারে ১৪-১৬ বছর বয়সি তরুণ তরুণীদের মধ্যে ৭৯.২ শতাংশের হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন। যদিও ৯০.১ শতাংশ তরুণ তরুণী স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে জানে। যদিও তাদের মধ্যে মাত্র ১৩.৭ শতাংশ অনলাইন সার্ভিসের সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ। বিশেষ করে অনলাইনে পেমেন্ট করা, অনলাইনে টিকিট কাটা, অনলাইনে ফর্ম ফিলআপ করা ইত্যাদি। আর ১৭-১৮ বছর বয়সি ছেলেরাও মেয়েদের তুলনায় কম স্কুল কলেজে যায়। ১৭-১৮ বছর বয়সি ২৮.৯ শতাংশ ছেলেরা যেখানে স্কুল কলেজে যায় না, সেখানে মেয়েদের না যাওয়ার হার মাত্র ১৩.৯ শতাংশ।সরকারি স্কুলে ছেলেরা যেখানে যায় ৭১.১ শতাংশ সেখানে মেয়েরা যায় ৮৬.১ শতাংশ। কোচবিহারের ১৭-১৮ বছর বয়সি তরুণ তরুণীদের মধ্যে ৬৭.৯ শতাংশ দ্বিতীয় শ্রেণির মানের পাঠ্যবই রিডিং পড়তে পারে। আর ইংরেজি পড়তে পারে ৪২.৩ শতাংশ।এক্ষেত্রেও মেয়েরা এগিয়ে। মেয়েদের যেখানে ৭৩.৯ শতাংশ রিডিং পড়তে পারে সেখানে ছেলেরা ৬১.৩ শতাংশ।ইংরেজি পড়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের হার ৪১.৮ শতাংশ। আর মেয়েদের হার ৪১.৮ শতাংশ।কোচবিহারে ১৭-১৮ বছর বয়সি তরুণ তরুণীদের মধ্যে ৯২.৯ শতাংশের হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন। যদিও ৯৬.৪ শতাংশ তরুণ তরুণী স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে জানে। যদিও তাদের মধ্যে মাত্র ৩১.১ শতাংশ অনলাইন সার্ভিসের সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ। বিশেষ করে অনলাইনে পেমেন্ট করা, অনলাইনে টিকিট কাটা, অনলাইনে ফর্ম ফিলআপ করা ইত্যাদি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct