এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: বিজেপির বিরুদ্ধে ফের একবার সোচ্চার হলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে চোর-চোর-চোর। কিন্তু ওরা সবচেয়ে বড় চোর। লোকে বলছে, অলি-গলিমে শোর হ্যায়, বিজেপিকা সব চোর হ্যায়। বড় বড় ডাকাত! বড় বড় গুণ্ডা! বড় বড় অপরাধী, এজেন্সিদের সুরক্ষায় আছে। এজেন্সিরা ওদের বাঁচাচ্ছে।’তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মমতা সাফাই দিয়ে বলেন, আমার পাঁচটা আঙুলের মধ্যে একটা আঙুল কেটে যেতে পারে। একটা ছোট্ট ঘটনার জন্য নিশ্চয়ই সবাই খারাপ নয়। আজ পর্যন্ত আমায় যদি কেউ বলে, আমি চায়ের দোকানে চা খেয়ে এক পয়সা দিইনি, তাহলে আমি ছেড়ে দেবো।
বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবিকে খারিজ করে দিয়ে মমতা বলেন, ওরা বিবৃতি দিচ্ছে, বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি জল কে পৌঁছে দিচ্ছে? ওদের জজ্ঞেস করুন টাকা দিয়ে জমি কে কিনে দিচ্ছে? রাজ্য সরকার। রক্ষণাবেক্ষণ করছে কে? রাজ্য সরকার। আমাদের অংশ হল সব মিলিয়ে ৭৫ শতাংশ। কিন্তু আমাদের জিএসটির টাকা থেকে ওরা দিচ্ছে মাত্র ২৫ শতাংশ। তাতে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে গেল! তিনি বলেন, সব বাড়ির লোকেরা জল পাবে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা জল প্রকল্প শেষ করতে চাই। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যেই কয়েক লাখ বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এদিন ২২ জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধন সেই কর্মসূচির প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বারবার জিজ্ঞেস করছেন মন্দির নিয়ে। আমি ২২ জানুয়ারি একটি পদযাত্রা করব। আমি প্রথমে একা গিয়ে মা কালীকে পুজো দেব। হাজরা থেকে সর্বধর্মের মানুষকে নিয়ে পার্ক সার্কাস ময়দানে গিয়ে আমরা একটি পদযাত্রা করব। ২২ জানুয়ারি প্রত্যেক ব্লকে ব্লকে পদযাত্রা হবে।’দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙার জন্য রাজ্যের কাছে জানিয়েছে রেল। সেই নিয়ে এবার কড়া প্রতিক্রিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে বসে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘আমার রক্ত থাকতে, আমি দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙতে দেব না।’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ৮-১০টি বৈঠক করে অনেক কষ্ট করে তাঁর সরকার এই স্কাই ওয়াক বানিয়েছে। ওই এলাকায় অনেক হকার ছিলেন। তাঁদের সকলকে বুঝিয়ে, বিকল্প ব্যবস্থা করে তারপর এই স্কাই ওয়াক তৈরি করা হয়েছে। বললেন, ‘এই স্কাই ওয়াক আমার হৃদয়ের একটা মণি-মুক্তোর মতো।’
কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়ে বললেন, মমতা বলেন, ‘‘এদের ঔদ্ধত্য দেখে আমি অবাক হয়ে যাই! হাত দিচ্ছে কোথায়? হাত দিচ্ছে দক্ষিণেশ্বরে! ক’দিন বাদে বলবে কালীঘাটটা দিয়ে দাও! শুনব না। যদি আমাকে বলে নাখোদা মসজিদ ভেঙে দাও আমি থোড়াই শুনব? এগুলো আমি মানতে বাধ্য নই। মানব না। যদি ওদের কোনও রকম জট হয় সেই জট আমি দূর করব। দরকারে আমার সঙ্গে বসুন। আমি অন্য রুট দেখিয়ে দেব। রুট বদলাতে সাহায্য করব। এমন আগেও অনেক করেছি।’’দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক প্রসঙ্গে মমতা ধর্মের প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে এরা বলে আমি দুর্গাপুজো করতে দিই না। সরস্বতী পুজো করতে দিই না। অথচ আমার বাংলায় দুর্গাপুজো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর তকমা পেয়েছে।’’ মমতা জানিয়েছেন, দক্ষিণেশ্বরের স্কাই ওয়াক ভাঙতে হলে ভারতীয় রেল এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে বাংলার ঐতিহ্যের কথা ভাবতে হবে। মমতার কথায়, ‘‘দক্ষিণেশ্বর আজকের নয়। সেখানে হাত দিতে হলে বিবেকানন্দের কথা মনে করতে হবে রামৃষ্ণের কথা মনে করতে হবে। ভবতারিণী মায়ের কথা মনে করতে হবে। দক্ষিণেশ্বর বেলুড়ের কোটি কোটি ভক্ত আছে। তাঁদের কথা মনে করতে হবে।’’ এর পরেই মমতা দৃঢ় স্বরে আরও এক বার বলেন, ‘‘কিছুতেই করতে দেব না।’’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct