গত ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিলে গ্রামবাসীদের আক্রমণের মুখে পড়ে। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিক জয়দীপ সরকার সরজমিন তদন্ত রিপোর্ট তুলে ধরেন ইংরেজি নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যার’-এ। ‘দ্য ওয়্যার’-এর সৌজন্যে তা দৈনিক ‘আপনজন’ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল।
(গতকালের পর)
তৃণমূলের মধ্যে শাহজাহানের উত্থান অসাধারণ। ২০-এর দশকের গোড়ার দিকে মৎস্য ও ইটভাটায় অল্প সময়ের কর্মী হিসাবে শুরু করে তিনি প্রথমে সিপিআই (এম)কে সমর্থন করেছিলেন তবে পরে ২০১১ সালে দল ক্ষমতায় আসার পরে জেলা নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পৃষ্ঠপোষকতায় তৃণমূলে যোগ দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে তিন বিজেপি কর্মীকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিট থেকে শাহজাহানের নাম বাদ দেওয়ার পিছনে মল্লিকের জড়িত থাকার ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ। মজার বিষয় হল, যে কেলেঙ্কারির জন্য শাহজাহানকে শুক্রবার তল্লাশি করা হয়েছিল, সেই একই কেলেঙ্কারিতে মল্লিক বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন। শনিবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দাবি করেছে, বেঙ্গল রেশন ডিস্ট্রিবিউশন কেলেঙ্কারিতে বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে, তা আশ্চর্যজনকভাবে ১০,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। শনিবার স্থানীয় নাজাত থানায় ইডি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তিনটি এফআইআর দায়ের করেছে, একটি তল্লাশি পরোয়ানা ছাড়াই শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করার জন্য ইডি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে, অন্যটি কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মকর্তাদের উপর হামলাকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে এবং তৃতীয়টি ইডির পক্ষ থেকে ইমেলের মাধ্যমে পুলিশ সুপার (এসপি) এবং মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে জমা দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে।আমার পরিদর্শনের সময় আমার সাথে থাকা স্থানীয়রা বলেছিলেন, ‘দাদা আমাদের ভগবানের মতো। আমরা তার কোনও ক্ষতি সহ্য করব না।’ তারা এক মিনিটের জন্যও আমাকে একা ছেড়ে যেতে রাজি ছিল না। ইডি শাহজাহান ভাইয়ের বাড়িতে তল্লাশি ও লুটপাটের পরিকল্পনা করেছিল। তারা তাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। তারা তাদের গাড়িতে করে টাকার ব্যাগ নিয়ে আসে। আমরা তাদের কৌশল বুঝতে পেরে এলাকা থেকে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছি,” বলেন শাহজাহানের এক অনুগত। তবে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযানের সময় শাহজাহান তাঁর বাড়ির ভিতরেই ছিলেন। তিনি আসন্ন অভিযান সম্পর্কে কলকাতা থেকে আগাম তথ্য পেয়েছিলেন এবং সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইডির অভিযানের অল্প সময়ের মধ্যেই একটি বিশাল সশস্ত্র জনতার দ্রুত আগমন শাহজাহানকে পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সতর্কতার সাথে পরিকল্পিত পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। ইডি কর্মকর্তাদের সুরক্ষার জন্য নিযুক্ত প্রায় ৫০ জন সিআরপিএফ কর্মকর্তা মহিলাদের নেতৃত্বে শক্তিশালী এবং ক্রুদ্ধ জনতার দ্বারা ঘেরাও হয়ে পড়েছিলেন। গতকাল গণপিটুনির ঘটনার পরপরই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এটিকে ‘উসকানিমূলক প্রভাবের’ প্রতিক্রিয়া বলে অভিহিত করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করা যায়নি। ওই এলাকার স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করেছে, সে সীমান্ত অতিক্রম করে নিকটবর্তী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দিকে, ১৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার গভীর রাতে একই রেশন বিতরণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে শঙ্কর আঢ্য নামে আরও এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে ইডি। কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে (ইডি সদর দফতর) নিয়ে যাওয়ার সময় ইডি কর্মকর্তারা তাঁর সমর্থকদের কাছ থেকে সহিংসতার মুখোমুখি হন। বনগাঁ পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যয়নকে শনিবার ভোরে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তার সমর্থকরা তদন্তকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তাদের গাড়িতে পাথর নিক্ষেপ করে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইডি দলের সঙ্গে থাকা সিআরপিএফ জওয়ানদের লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল। শনিবার আধ্যাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করা হলে আদালত ইডিকে ১৪ দিনের হেফাজত বা রিমান্ড মঞ্জুর করে।
(সমাপ্ত)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct