আপনজন নিউজ ব্যুরো, বহড়ু, আপনজন: আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিদের উদ্বোধনকে ‘আদালতের নির্দেশে’ ‘নির্বাচন-পূর্ব কৌশল’ আখ্যায়িত করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে বিভক্ত করার’ অজুহাত ব্যবহারের জন্য বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেছেন। মমতা ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি নির্ধারিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে পারেন এবং তার পরিবর্তে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন। মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগরের বহড়ুতে এক সরকারি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস এবং সরকারি পরিসেবা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে তার ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি বলি ধর্ম একটি ব্যক্তিগত বিষয় এবং একটি উৎসব সবার। আমি এমন উৎসবগুলিতে বিশ্বাস করি যা প্রকৃতিতে অন্তর্ভুক্ত এবং মানুষের ঐক্যের কথা বলে। এত ধুমধামের মধ্যে রাম মন্দিরের উদ্বোধন করতে আপনাকে কে বাধা দিচ্ছে? আপনি আদালতের নির্দেশে নির্বাচন-পূর্ব কৌশল হিসেবে এটা করছেন। এর বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে উপেক্ষা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে শান্তির জায়গা, সেই সঙ্গে মুসলিমদের নিরাপদ স্থান বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাকে হিন্দুদের দক্ষিণেশ্বর বেলুড় মঠ, তফশিলিদের মতুয়া ঠাকুর, পঞ্চানন বর্মা, আম্বেদকরসহ সবকিছু বলে মন্তব্য করেন ৷ মমতা বলেন, বাংলা কোনও ভেদাভেদ করে না। রাজ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে বিজেপিকে টার্গেট করে মমতা বলেন, ‘ওরা তৃণমূলের নামে ভয় পায়! তৃণমূলকে দেখলে কাঁপে! সেজন্য তৃণমূলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাজিয়ে নাটক করে তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ভাবছে ভোটের আগে সবাইকে গ্রেফতার করলে এলাকা খালি হয়ে যাবে। আর পুরো বিজেপি সেখানে ডুগডুগি বাজাবে! কিন্তু অতো সোজা নয়। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি আমরা ছাড়ব না’ বলে হুঁশিয়ারি দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বহুলালোচিত ‘রাম মন্দির’ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা কোর্টের রায়ে করছেন। নির্বাচনের আগে একটা গিমিক শো করবেন বলে। আপনারা করছেন করুন না, কে আপত্তি করেছে? আমার কোনো আপত্তি নেই তো। কিন্তু তাই বলে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে অবহেলা করা এটা কারও কাজ নয়। এরপরেই তিনি অভয়বার্তা দিয়ে বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা করে যাচ্ছি, আমি আপনাদের কাছে শপথ করে যাচ্ছি, আমি আপনাদের ঈশ্বরের শপথ করে বলছি, আল্লাহ্র কসম খেয়ে বলছি, আমি আপনাদের কোনো দিনও হিন্দু-মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, তপসিলি, আদিবাসীদের ভাগাভাগি করতে দেব না।’
সিএএ বাস্তবায়ন নিয়ে তাঁর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমরা এনআরসি ও সিএএ প্রতিরোধের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছি। আমরা সুপ্রিম কোর্টে বিলকিস বানোর জয়কে তৃণমূলের জয় বলে মনে করি, কারণ আমাদের প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্র, যাকে জোর করে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী ছিলেন। এই দলটি কীভাবে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করে তারই প্রতীক এটি। আমরা ধর্ষকদের সঙ্গে জড়িত নই’। মঞ্চ থেকে মমতা যে নতুন প্রকল্পগুলির কথা ঘোষণা করেছিলেন তার মধ্যে রয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৪০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২,০০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ। তিনি এই কর্মসূচি থেকে জেলার প্রায় ২০,০০০ উপকারভোগীর কাছে সরকারি ছাড় দেওয়ার ও দাবি করেন। এমএনআরইজিএস, গ্রামীণ আবাসন এবং গ্রামীণ সড়কের মতো কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রকল্পগুলির জন্য তহবিল আটকে রাখার জন্য কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী ‘প্রকল্প সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে গেরুয়া রঙে রং করার কেন্দ্রীয় নির্দেশ’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন আমরা আমাদের ভবনগুলিকে বিজেপির রঙে রং করব? তিনি বলেন, যদি তারা কোনও প্রকল্পের জন্য এক টাকাও দান করে, তবে তারা চায় যে আমরা প্রকল্পের নথিতে বিজেপির লোগো লাগাই। এগুলিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের লোগো লাগানো আমার দায়িত্ব। কিন্তু সরকারি প্রকল্পগুলিতে কোনও দলের লোগো বহন করতে আমি বাধ্য নই। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রকে দোষারোপ করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন এখানে যা কিছু ঘটছে, এমনকি প্রাকৃতিক ঘটনার জন্যও তারা তৃণমূলকে দোষারোপ করে। বাস্তবে তারা তৃণমূলের নামে ভয়ে কাঁপছে। এ জন্য তারা তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে গল্প তৈরি করে, নাটক তৈরি করে। তারা মনে করে যে তারা নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেতাদের দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেবে এবং বিজেপিকে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম করবে। এটা এত সহজ নয়। আমরা লড়াই ছাড়া হাল ছেড়ে দেব না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
প্রতিবেদক: এম মেহেদী সানি, বাবলু প্রামানিক, জাহেদ মিস্ত্রি, চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ওয়াসিফা লস্কর
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct