গত ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিলে গ্রামবাসীদের আক্রমণের মুখে পড়ে। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিক জয়দীপ সরকার সরজমিন তদন্ত রিপোর্ট তুলে ধরেন ইংরেজি নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যার’-এ। ‘দ্য ওয়্যার’-এর সৌজন্যে তা দৈনিক ‘আপনজন’ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল।“তুমি কে? তুমি এখানে কেন? চলে যাও!’ শনিবার সকালে সন্দেশখালিতে পা রাখার সময় এই কঠোর শব্দগুলি আমাকে স্বাগত জানিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালিতে কথিত রেশন বিতরণ কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্তে থাকা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তাদের উপর হামলার ঘটনার রিপোর্ট করতে আসা একদল লোক কেবল আমার উপস্থিতিই নয়, সহকর্মী সাংবাদিকদের উপস্থিতিও খতিয়ে দেখেছিল।
নিয়মটি শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। স্থানীয় যুবকদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে, যারা বাইকে করে এলাকায় টহল দেয়, সমস্ত ছবি তোলার জন্য। বিশেষ করে প্রভাবশালী তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহজাহান পরিচালিত বিস্তৃত বাজারের ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সন্দেশখালি হামলার বিষয়ে জাতীয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও, ঘটনার প্রকৃত অবস্থান গণমাধ্যমের উন্মাদনা দ্বারা প্রভাবিত হয়নি বলে মনে হচ্ছে। ২০-এর দশকের মাঝামাঝি এক স্থানীয় ব্যক্তি ঘোষণা করলেন, ‘দাদা (শাহজাহান) এখানেই শেষ কথা বলবেন।’ উত্তর চব্বিশ পরগনার সীমান্তবর্তী সন্দেশখালির এই গ্রামটিতে তার কথাসত্য বলে মনে হচ্ছে। বর্তমানে সন্দেশখালি তৃণমূল কংগ্রেসেরে সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত শাহজাহান জেলা পরিষদের মৎস্য চাষের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এই অঞ্চলে সংঘাত নিষ্পত্তির জন্য মনোনীত ব্যক্তি, পারিবারিক বিরোধের মধ্যস্থতা এবং জমির মতবিরোধ নিষ্পত্তিতে দক্ষ। বিদ্যাধারী নদীর তীরে ২৫ একর জুড়ে বিস্তৃত শাহজাহানের বিস্তৃত বাসভবনটি জেলার অন্যতম দরিদ্র তম অঞ্চলে তার উল্লেখযোগ্য আর্থিক প্রভাবের প্রমাণ। তিনি ভূমির অবিসংবাদিত প্রভু, এবং স্থানীয় পুলিশ তার নির্দেশে কাজ করে বলে অভিযোগ। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্দেশখালি ১ ও সন্দেশখালি ২ ব্লকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বসিরহাট লোকসভা আসন তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য সুরক্ষিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি অডিও বার্তায় শাহজাহানের কণ্ঠস্বরে শোনা গিয়েছিল। অডিও ক্লিপটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তবে ‘দ্য ওয়্যার’ স্বাধীনভাবে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। ওই অডিওতে শাহজাহান বলেন, ‘ওরা মনে করে আমাকে ফাঁসিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারবে। এটা হওয়ার নয়। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। ইডি ও সিবিআইকে ভয় পাবেন না। তৃণমূল কংগ্রেসের সকল কর্মকর্তাকে অবশ্যই দলের জন্য তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের এবং আমাদের পরিবারের কী যত্ন নিয়েছিলেন।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct